অ্যাস্ট্রেতে অসম্পূর্ণ সিগারেট পুড়ে গেছে, বাতাসে নিকোটিনের
গন্ধ ভাসছে তখনও, দেয়ালের চোখে স্যাঁত স্যাঁতে জল, অসম্পূর্ণ
মোমবাতি নিভে গেছে কোন হাওয়ায় কে জানে। নিশ্চয়ই কোন
প্রানহাওয়া বেরিয়ে যাওয়ার আগে অলক্ষ্যে থাকে যে ভীষণ তীব্রতা,  
হয়ত তাতেই নিভে গেছে মোমবাতি যেমন করে নিভে গেছে একটা  
অসম্পূর্ণ জীবন কোন অদৃশ্য তীব্র আকর্ষণে।


অথচ ইচ্ছে ছিল বাড়ি তৈরীর কাজটা সম্পূর্ণ হলে ক’টা দিন সে
জিরিয়ে নেবে, যেমন করে সময়ের সাথে জাবর কাটে তৃণভোজী প্রান।
দক্ষিনের জানালা খুলে জ্যোস্না ধরবে বলে অন্ধকার করতে নিভিয়ে
রাখবে শয়ন কক্ষের বৈদ্যুতিক বাতি। পাখিদের কিচিরমিচির শুনবে
বলে মুঠো ফোনের রিং টোন থাকবে সাইলেন্ট মোডে, আর কবিতার
বই হাতে টেলিভিশনটা ইচ্ছে করেই কিছুদিন থকবে কার্টুনের ভেতর।


সেই বাড়িও আজ অসম্পূর্ণ। দোতলায় দক্ষিনের জানালায় কপাটহীন
দুর্ভাবনা ঠেকাতে তা বাঁশের তরজায় বন্ধ হয়ে আছে অনেক দিন।
সোঁদা গন্ধ। শয়ন কক্ষে আসবাব বলতে একটা খাট, এক জোড়া
বেতের চেয়ার, অ্যাস্ট্রে রাখা টেবিল, কিছু কবিতার বই আর একটা
কাঠের চেয়ার। বাকি বাড়ির ঘরগুলিতে বুক উপচে দম বন্ধ প্রায়
পড়ে আছে নির্মাণ সামগ্রী। স্টীলের রড, সিমেন্ট, ইটের খোয়া, বালি,
বাঁশ, কাঠ আর কত ভাবে মিলিয়ে মিলিয়ে দেখা বর্ণিল মার্বেল।


সন্তানদের বিয়ে সাদী হয়ে গেলে টোনাটুনির জীবন নিয়ে ঘুরে বেড়াবে সে  
সমতল থেকে পাহাড়, পাহাড় থেকে সাগর হয়ে অচেনা অনেক জনপদ।
সখ ছিল সেখানে পাহাড়ের গায়ে হেলান দেয়া মেঘেদের বাড়িতে খেলবে  
লুকোচুরি। অথবা সাগরের নোনা বাতাসে উড়িয়ে দেবে চোখের জলের অম্ল  
গন্ধ। খুঁজে নেবে বাতিঘরের নির্দেশিত পথে জীবনের কোন ক্লান্তিহীন দ্বীপ।
তারপর ছুটি নেবে প্রাত্যহিক জীবিনের লেনাদেনা থেকে কিছুটা কাল।  


জীবন বড্ড অসম্পূর্ণ! অনেক পেয়েও তবুও পাওয়া হয় না,
অনেক চেয়েও তবু শেষ হয় না চাওয়া। তাই বুকের ভেতর যেন
উথাল পাতাল করে শরতের শুভ্র কাশবন। সাদা মেঘে ভাসে অসম্পূর্ণ
স্বপ্নের বৈভব, বিড়ম্বনায় থাকে নেংটো কালের পাটালি গ্রাম- মিলন
আর বিচ্ছেদের বিবর্ণ কষ্টে কষ্টরা ফুরোতে চায় না। তাইত মনে হয়  
সুখের চেয়ে কষ্ট আধিক্যতার জন্যই বুঝি জীবন অসম্পূর্ণই থেকে যায়,  
কেউ চলে গেলে তার সাথে সুখের চেয়ে কষ্টের কথাই মনে পড়ে বেশী।