ঝম্‌ ঝম্‌ করে হঠাৎ চৈতি বৃষ্টি। কি জানি একেই হয়ত প্রথম বৃষ্টি ভেবে
এতটা বছর তা গায়ে মেখেছি। নিজেকে  প্রাকৃত থেকে প্রাকৃতিক করে
তুলতে ভুলে গেছি সর্দি-জ্বর। অথচ এবারের প্রথম বৃষ্টিতে ভেজা হল না।
নিজেকে না ভেজালেও সুউচ্চু ইমারতের ঝোলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখেছি
প্রকৃতির সাথে বৃষ্টির মাখামাখি। কান্না তো নয় বরং সে ছোঁয়ায় ধরণী যেন  
হাসছিল খলখলিয়ে।


আমরা প্রায় সকলেই মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি ধারার শব্দে কেবল কান্নারই সুর শুনি।
অথচ সে ধারায় যে ভালোবাসার শব্দ সুর থাকে, নব জাগরনের গানের সুর থাকে,
ফোঁটা ফোঁটা জলে মাতৃ অক্ষর- শব্দের সুর থাকে, তাকে আমরা কেউ বুঝতে চাই না।
আজ প্রথম বৃষ্টি ঝরা সান্ধ্য বারান্দায় দাঁড়িয়ে মাতৃ অক্ষর-শব্দের সুরের দোলায়
ভাসতে ভাসতে আমি শুনতে পাচ্ছিলাম বৃষ্টির পুলকিত কথা বার্তা আর বন্দনার সুর।


বৃষ্টি যেন বলছিলঃ


- দীর্ঘ দিন প্রজ্জ্বলনে অস্বচ্ছ হয়ে যাওয়া জোনাকীর আলোয় আবার তীব্রতা
ফিরিয়ে দিতে পারছে বলে সে আজ বড্ড প্রাকৃতিক।
- পাখির পালকে পুরনো ঘামের গন্ধ ধুয়ে দিতে, জল শুন্য মাঠে তৃষ্ণার্তদের
পিপাসা মেটাতে, সবুজের ছোঁয়া ফিরিয়ে দিতে বীজের ঠোঁট ভেজাতে পেরে
সে আজ ধন্য।
- ব্যাঙ, গোবরা পোকা, ঝিঁঝিঁ পোকার কন্ঠে গান ফিরিয়ে দিতে পেরে, প্রায় নিস্তেজ
হয়ে পড়া ফড়িং, প্রজাপতি, মৌ মাছির মৌতাত নাচনে ছন্দ ফিরিয়ে দিতে পেরে
সে আজ আনন্দে বিভোর।
- ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় ঘোলা হয়ে উঠা আকাশে বিমুর্ষ প্রায় চাঁদকে তীব্র জোছনায়
ভরিয়ে দিতে, খোলা আকাশকে মেঘের কাজল পরিয়ে ভিন্ন সাজে সাজিয়ে দিতে,
ধূলোয় ধূলোয় হারিয়ে যাওয়া প্রকৃতির সজীবতাকে ফিরিয়ে দিতে নির্দ্বিধায়
ঝরে যেতে পারছে বলে সে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।


তাই আজ প্রথম বৃষ্টিতে ভিজতে না পারলেও ঝোলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমি
ভেতরে ভেতরে ভিজে যাচ্ছিলাম বৃষ্টির অব্যক্ত বাহারি ঝাপটায়। সেখানে ছিল না
কান্নার সুর, ছিল না আহাজারি বন্যার হিংস্রতা! বরং ছিল কেবল প্রেম, ভালোবাসা
হাসি, উচ্ছলতা আর নবজাগরণের সুর ধ্বনি।