স্বপ্ন ছিল, একটা খামার বাড়ির স্বপ্ন। অথচ আমার মনের বাগানে অনেক কলি ফুটি ফু্টি করেও আজও অপরিস্ফুটিত রয়ে গেল। দু‘একবার মৌ-মাছিরা উঁকি দিয়ে গেলেও এখন আর উড়া উড়ির শব্দটুকুও কানে ভাসে না। মনের বাগানই যেখানে ফুলের প্রতিক্ষায় সেখানে তাই খামার বাড়ির চিত্রটাও আজকাল ভুলতে বসেছি। জানি না পায়ের তলায় যে মাটিটুকুর টের এখনও পাচ্ছি, তার সাথে খামার বাড়ির দূরত্বটুকু কতখানি।  


একটা চৌচালা ঘর, সামনে সাঁন বাঁধা ঘাটটা বিশাল দীঘির পেট ছুঁয়ে আছে। চাষ করা নানান জাতের মাছ, হাঁস পানিতে খেলছে। তারপর যে কি এখন আর মনে পড়ছে না। আর ঘরের ঢাউস বারান্দাটার কোল ঘেঁষে যেখানে জামরুলের গাছ, সেখানে ইজি চেয়ারের সাথে কিছু গার্ডেন চেয়ার, সেন্টার টেবিল, আধ শোয়া কুকুর বেড়ালের কথা ছিল কিনা এখন আর মনে করতে পারছি না।


দক্ষিন দুয়ারী ঘর আমার সারা জীবনের পছন্দ। অথচ শহুরিয়া পরিবেশে ফ্ল্যাট কিনতে গিয়ে টাকার অংকটায় কুলিয়ে উঠতে না পেরে বেমালুম উত্তর মূখী ফ্ল্যাট কিনে ফেললাম। এখনও সে ভুলের ঘা-টা দগদগে হয়ে আছে। শীতে  অহেতুক উত্তরা কন্‌কনে ঠান্ডা বাতাস, গ্রীষ্মে দখিনা বাতাস থেকে বঞ্চিত, রাতে পূর্ণিমার চাঁদ থাকে দৃষ্টির বাইরে।  খুব কষ্ট পাই। তাই স্বপ্নের খামার বাড়িটা দক্ষিন দুয়ারীই হবে এটা কোন ভাবেই ভুলতে চাই না।


আবাদি অনাবাদি জমির চারি পাশ ঘিরে ঔষুধি, ফলজ আর বনজ গাছের ছায়া, পাখিদের কলকাকলি, হালের গরু-মহিষ নাকি কলের লাঙ্গল কোনটা ভেবেছিলাম এখন আর মনে পড়ছে না। তবে ঘরের মধ্যে তো নয়ই এমনকি খামার বাড়ির আঁধার কাটাতে নো ইলেক্ট্রি বাল্ব। নিরাপত্তর প্রহরীর হাতে টর্চ আর আমার ঘরে টিম্‌টিম করে জ্বলবে হারিকেন। তারপর রাত কি ভাবে কাটবে, সংযুক্ত গোসলখানা থাকবে কিনা তা এখন আর মনে পড়ছে না।


স্বপ্ন ছিল, একটা খামার বাড়ির স্বপ্ন। অথচ আমার মনের বাগানে অনেক কলি ফুটি ফু্টি করেও আজও অপরিস্ফুটিত রয়ে গেল।