আজ শিশির ভেজানো বালুর চরে একটা নদীর পাড় ধরে
অনেক দূর হেঁটেছি।একটা নদী তার পাড় ধরে হেঁটে যেতে যেতে
তার সাথে কথা বলার জন্য অনেক দিন ধরে কাছে ডাকছিল।
তার শীতল জলে পা ডুবিয়ে নিতে নিতে স্নান সেরে নেয়ার কথা
বলেছিল কি না মনে নেই। তবে পা ডুবিয়ে নিতে নিতে আমি
নিজে থেকেই তার বুকে মাথা রাখতে এবং আরও কিছু না বলা
কথা শুনতে ডুব দিয়েছিলাম অসমাপ্ত প্রতিক্ষার অবসানের জন্য।


জেনেছি- অনেক বছর হল আজকাল তার সাথে আর দেখা হয় না
কোন কবির, গায়কের কিংবা কোন লেখকের। অথচ যারা একসময়
প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা, গ্রীষ্ম-বর্ষা, শীত-বসন্ত সব সময় এসে কত
কথা বলে যেত, কত গান লিখে সুর করে গেয়ে যেত। কেউ কেউ
পুজো আর প্রার্থনার ছলে চোখের জল ফেলত। অথচ আজকাল কেউ
আর আসে না। এ জন্য সে বড্ড কষ্ট পায়।


আমার সাথে কথা বলতে বলতে সে মেঘের মন নিয়ে অনেক কথা
বলছিল। গঙ্গা দেবীর চোখেও যেন জল শুন্যতা! তাই তার কাছে মনে
হয়েছে আজকাল কবি, লেখক আর গায়কেরা ভুলেই গেছে নদীর সাথে
মানুষের মন আর উতল জীবনের কথা, সম্পর্ক, তার চলার সাথে
জীবনের চলা, স্রোত ধারার সাথে যে সুর খেলা করে সে সুরের সাথে
জীবনের উজান-ভাটির গানের সুরে গান গাওয়া।


আমি বলি- তুমি তো মা। সে অবাক হোয়ে আমার দিকে নির্বাক চোখে  
চেয়ে থাকে এমন ভাবে- যেন আমি কোন ভিন জগতের মানুষ, কোন
সনাতন বানী থেকে হয়ত জেনেছি নিজের মা ছাড়াও আর একটা মা
হল নদী। আমি আরও বলি – তুমি কত কি নিঃস্বার্থভাবে দু’হাত দিয়ে
উজাড় করে বিলিয়ে দাও। সে জন্যই তো আমরা যুগ যুগ ধরে বেঁচে  
থাকি। তারপর সে আমাকে ভেতর থেকে আরও ভেতরে টানে। তার পর
বলে- দেখ তো এই বুড়িগঙ্গাকে দেখে একদিন সে কথাই সত্যি হবে কিনা-
“এই খানে এক নদী ছিল জানল নাতো কেউ”। এবার আমার চোখে জল!