তখন সবে মাত্র রাত বলেছে যাই,
ভোরের আলোয় মুখাবয়বের সম্পর্ণ
আকারও ধরেনি, রাতের বাস থেকে
নেমে বাড়ি যেতে দু’মিনিটের হাঁটা
পথ। এই সেই নাড়ি পুঁতা গ্রামের বাড়ি।
যেখানে আমার অস্তিত্বের প্রকাশ হয়েছিল
মা’র নাড়ি ছেঁড়া বুকের ধন হোয়ে।


বাড়ির খিড়কী দুয়ারে পা রাখতেই মোরগ
এমন ভাবে ডেকে উঠল স্বাগত স্বরে-  
যেন আমায় মনে করিয়ে দিল ভোরের
মোরগের ডাক শহুরিয়া জীবনে আমি
ভূলে গেলেও সে ভোলেনি আমায়, ভোলেনি
আমার গ্রামীন অস্তিত্ব। ভোলেনি ভোরের
আলোয় প্রার্থনার প্রকৃতি।


এবার পুবে ভোরের সুর্যের আলো প্রায়  
ফুটি ফুটি, উঁচু কদম গাছের ফাঁক গলে
ঘুঘু এমন ভাবে ডেকে উঠল যেন আমায়
আনমনায় মা’র অভাব ভোলাবে বলেই
সে প্রতিক্ষাতে ছিল বাড়ির চৌহদ্দি ধরে
এতটা দিন। এর পর পুকুরের ঘাট, সজনে
গাছের ফুল মাড়িয়ে বাড়ির খিড়কী দুয়ার।


প্রতিবারের মত সেখানে এবার মা আর
দাঁড়িয়ে নেই। আমায় স্নেহের বুকে টেনে
নিয়ে আঁচলের আগায় মুখ বুলিয়ে বলবে-  
এত দিনে মা’কে তোর মনে পড়ল বাবা,
কই- বউমা, আমার নাতনীরা আসেনি?
অন্দর মহলে পা ফেলতে ফেলতে পিছন
ফিরে আবার দেখে নিবে সত্যিই তো আমি
একা।


এবার সকলেই যেন আগ্রহ ভরে স্বাগত
জানাল সেই চেনা সুরে আর নিঃস্বার্থ সনাতন
আদি মায়ায়ঃ
ভোরের মোরগ,
ঊষার ঘুঘু,
ঘাটলা পুকুর,
সজনের ঝরা ফুল,
বাপের ভিটা,
বাড়ির চৌহদ্দি খিড়কী দুয়ার।
মনে হল তারা একটু আগ বাড়িয়েই
উন্মুখা আজ।  


তবুও
চোখের জল যে বাঁধ মানতে চাইল না, পা
ভারি হয়ে এলো অন্দর মহলের উঠোনে।
চোখ মেলে খুঁজি মা’কে আবার মুর্ছা যাই,
আবার খুঁজি মা’কে, আবার মুর্চ্ছা যাই।
মা আর এসে দাঁড়াল না শিয়রে, সে যে
আর  ফিরে আসবেও না কোন দিনখিড়কী
দুয়ারে, আগ বাড়িয়ে বলবে না-  
এত দিনে মা’কে তোর মনে পড়ল বাবা।