মায়ের কোল আলোয় ভরে  এল এমন ছেলে
সবার বুকে খুশির তুফান কোটিতে এক মেলে।
সেই ছেলেটি কে বল তো--রবি ঠাকুর নাম
সরস্বতী হৃদয়ে তার জোড়াসাঁকোয় ধাম।
দইওয়ালা, ও দইওয়ালা-- এসো জানলা ধারে
সুরের ছোঁয়া আকুল করে   আর কেহ না পারে।
আমায় তুমি শিখিয়ে দিলে দইওয়ালা হব
তোমার মতো পাড়ায় ঘুরে খুশি মনেই রব।
রবির চোখে স্বপ্ন কত নিখুঁত ছবি আঁকে
রাঙামাটির পথ পেরিয়ে চিনেছে সেই গাঁ-কে।
অবাক চোখে আকাশ দেখে বাইরে যেতে মানা
হাজার মানা মানতে হতো তা তো সবার জানা।
ছোট্টো রবি লিখল বসে কত মজার ছড়া
সহজ পাঠ-এ খোকাখুকুর হয়েই গেছে পড়া।


"মেঘের কোলে রোদ হেসেছে বাদল গেছে টুটি
আজ আমাদের ছুটি ও ভাই, আজ আমাদের ছুটি।
কী করি আজ ভেবে না পাই, পথ হারিয়ে কোন বনে যাই
কোন্ মাঠে যে ছুটে বেড়াই সকল ছেলে জুটি।
কেয়া পাতার নৌকো গড়ে সাজিয়ে দেব ফুলে
তাল দিঘিতে ভাসিয়ে দেব, চলবে দুলে দুলে।
রাখাল ছেলের সঙ্গে  ধেণু চরাব আজ বাজিয়ে বেণু
মাখব গায়ে ফুলের রেনু চাঁপার বনে লুটি।" :  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


লেখনি তার সচল অতি গল্প কবিতায়
জাগায় আশা জোগায় ভাষা হৃদয় ভরে যায়।
"আকাশভরা সূর্য-তারা বিশ্বভরা প্রাণ"
এমন কত গানের কলি তাঁরই অবদান।
যতই লিখি হয় না শেষ তা যে হবার নয়
গীতাঞ্জলি নোবেল আনে কবির বিশ্ব জয়।
মানবতার মূর্ত প্রতীক হৃদয় যে তাঁর কাঁদে
ফিরিয়ে দিলেন নাইট তিনি দৃপ্ত প্রতিবাদে।


শ্রাবণ কেন আকুল এত ঝরছে ঝরো ঝরো
আকাশ জুড়ে মেঘের মেলা পুকুর ভরো ভরো।
ভিজে ফুলের গন্ধ যে কী বার্তা বহে আনে
কী কথা আজ বলে গেল বাতাস কানে কানে।
দোয়েল কোকিল ভুলে গেছে গাইতে কেন গান
নড়ছে না তো বসেই আছে কীসের অভিমান!
জোড়াসাঁকোয় প্রহর কাটে মৌন সবার মুখ
কপোল বেয়ে অশ্রুধারা মনে গভীর দুখ।
এমনই এক শ্রাবণ-দিনে তাঁর বিদায় ক্ষণ
পাড়ি দিলেন তারার দেশে হারিয়ে গেল ধন।
ধরার বুকে অসীম তিনি বীণায় বাজে সুর
দেশের রবি বিশ্ব কবি অতুল কোহিনুর।