যতবার গেছি ওপথ দিয়ে ট্রেনে করে।
গঙ্গার খালের ধারে,
ঘরগুলি সারে সারে,
একই ভাবে দাঁড়িয়ে বিগত পঁচিশ বছরে।
তাকাব না ভাবি, তবুও আসে গোচরে।
রেলের শ্রমিক-মজুরদের ধাম,
রেল কোয়ার্টার যার পোশাকী নাম।
চোখ বন্ধ করি স্মৃতি হাতড়াতে যেন_
দেখি একটা ঘর কমদামি আসবাবে
সাজানো গোছানো,
আর দরজায় হাসি মুখে দাঁড়ানো
আমার বান্ধবী গায়ত্রী সেন।


_কিরে ঠিক চিনে চিনে এলি চলে?
_আসব না! যাসনি কেন দুদিন স্কুলে?
_শরীরটা ছিল না ভালো।
কাল ঠিক যাবে কথা ছিল।
কাল গেল,
আজ গেল_
এলো না তবু বান্ধবী আমার।
ভাবলাম খোঁজ নিতে হবে আজ একবার।


চারজন বসি গাদাগাদি করে এক বেঞ্চে।
''ও না আসাতে আরাম করে বসা গেছে ''
_বলল আমাদেরই একজন।
আমার কিন্ত ভালো নেই মন।
চন্দ্রাদি ধমক দিলেন অংকের ক্লাসে।
'এত অন্যমনস্ক কেন? কি এত ভাবছ বসে? '


তখনই দুঃসংবাদ এল নোটিসের খাতায়।
আচ্ছন্ন পুরো ক্লাস পিন পড়ার নিস্তব্ধতায়।
ছুটি হয়ে গেল স্কুল।
আমার দুচোখে তখন বাঁধ ভাঙা জল।
দিগ্বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে
ছুটছি আমি উর্ধশ্বাসে,
পথ যে ফুরায় না আর__
আরও কত দূর রেল কোয়ার্টার?


কাছাকাছি এসে দেখি
কত পুলিশ চারিদিকে।
একটা সাদা কাপড়ে মুড়ে, দুটো লোকে
নিয়ে গেল আমার প্রিয় বান্ধবীকে।
শুনলাম পোস্টমর্টেম হবে।
গলায় দড়ি দিয়ে ছিল যে সে!


কি ব্যাথা ছিল তার?
এতোদিন পাশে বসে
কোন অভিযোগ, কোন অভিমান
প্রকাশ করেনি সে।
হাসি মুখ ছিল তার সর্বদাই।
তবু কেন? আধফোটা কলিটিকে,
শীর্ণ কালো মিষ্টি মেয়েটিকে_
চলে যেতে হল
মাত্র বারো বছর বয়সেই!!


**এটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত। গায়ত্রী আমার ছোটবেলার স্কুলের বন্ধু ছিল। লেখাটিও অনেক আগের।