এমন ও তো হতে পারে , তখন ও জীবন ছিল
ল্যাটেন্ট হীটের মতো --
অন্তর্লীন তাপের প্রবাহ ।
ওই যে কি বলে যেন, তোমাদের জীবন বিজ্ঞানে -- 'অব্যক্ত জীবন ' ।
বরফের দেশে শীত কালে ব্যাঙেরা যেমন
ফসিল হয়ে ও বেঁচে থাকে ,
এতই ঠুনকো হয়ে যায়
হাড় গোড় , হৃৎপিণ্ড্ পাকস্থলি
শিরায় শিরায় স্তব্ধ হয়ে যাওয়া রক্ত স্রোত
ধুলো হয়ে যাওয়া রক্ত কণিকা
যা টোকা দিলে ভেঙে চুর চুর !!
তবু বেঁচে থাকে ভিতরে জীবন নিয়ে
যেমন বীজের ভিতরে বৃক্ষের ভ্রূণ !
আবার বসন্ত এলে গলে যায় জমাট বরফ
বেঁচে ওঠে , নেচে ওঠে দাদুরী শরীর !
এমন ও তো হতে পারে , তখন ও অবশিষ্ট ছিল কিছু আয়ু ;
খরচ করার মত কিছু টাকা ;
ভোগ ও ভোগান্তি ,
বাকি ছিল কিছু উপভোগ ।
তোমরা ভেবেছিলে , শ্বাস নেই ,
হৃদয়ে স্পন্দন নেই ,
রক্তের প্রবাহ নেই ,
নড়ন চড়ন নেই
প্রত্যঙ্গ নিথর !
ডাক্তার চর চর করে লিখে দিল , সার্টিফিকেট
শুভাথী বললেন ‘ রেস্ট ইন পিস’
রাম যদু হরি – পাড়ার ছেলেরা
“স্বর্গের রথ” ডেকে দিল ।
মৃতের পা দুটো ছুঁয়ে বসে থাকা করণীয় জেনে
ভরণীয়া সেই থেকে ঠায় ব'সে --
সব কাজ ফেলে ।
ততক্ষণে ,গাড়ি এসে গেছে- অতএব
ইচ্ছে থাক অথবা না থাক , বুঝে গেছি
কাচ ঢাকা কালো গাড়ি চ’ড়ে
যেতে হবে আদি গঙ্গার লাগোয়া শ্মশানে
সব্বাই সন্মানের সাথে
করে দেবে ট্রাফিক ক্লীয়ার !
ইচ্ছে ছিলনা , তবু ও তোমরা শুইয়েছো
নারকেল দড়ি দিয়ে বাঁধা কাঁচা বাঁখারির খাটে ,
সাদা ফুল বুকের উপর
ফুলগুলি পাথরের মত ।
আমার শরীরে ওরা কি যেন মাখালো ।
খাঁটি গব্য ঘৃত ? - পতঞ্জলির ?
মাথার কাছে গোছা গোছা ধূপ
সুগন্ধবিহীন – শুধু ধোঁয়া হয়
সহ্য হয় না ।
কন্ঠে স্বর নেই আজ তাই
প্রতিবাদে হইনা মুখর ।
(অবশ্য কবে বা করেছি ? )
আমি চিৎকার করে বলতে চাইছি
আমি বেঁচে আছি ! বেঁচে আছি !
শুনতে পাচ্ছো না ? বেঁচে আছি !
পবিত্র অগ্নিতে আমার
তেমন আকর্ষণ নেই !
পাটকাঠির আগুনের ছ্যাঁকা আমার ঠোঁট জ্বালিয়ে দিচ্ছে !
এ ভাবে কোরো না ! এভাবে কোরো না ।
তার চেয়ে আমাকে 'মমী' করে রাখো ,
একান্তই যদি না ও হয় ,
মাটি চাপা দাও ।
তোমরা কেউ শুনছো না তাও !
চুল্লীর লৌহ দরোজা খুলে দিলে--
স্ট্রেচারে শোয়ানো দেহ ঠেলে দিলে
ড্রাগন আগুনে ।
হয়তো বা , ছেলে এল উড়ে তারপর গুরগাঁও থেকে ।
ঘন্টা খানিক আগুনের সাথে লড়ে
মনে নাই কখন যে
শেষে ছাই হয়ে যাই ।
তারপর ...
খালি-গায়ে ওই ছেলেগুলো হয়তো
ঘেঁটে ঘুঁটে খুঁজে বার করেছিল নাভিমূল
আগুনে যা পুড়ে ও পোড়ে না ।
তারপর ...
তারপর কেউ কেউ ঝাড়া হাত-পা !!!