যখন যমুনা কেঁদেছিল রাজা সৌদাসের বিরহে,
ঢেউ খেলায় ভাসিয়েছিল সারা নগর,
ঠিক তখনই কি জন্ম নিয়েছিল এই শহর?
এই অগ্নিময়, নির্মম, নিঃশেষ শহর?


রাত পোহালে সূর্য ওঠে না, জ্বলে ওঠে শুধু আগুন,
কলি তার বিষের ফণা ধরে ঢেকেছে শহরের গলিঘুঁজি।
এখানে প্রতিটি নিশ্বাস, জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর হাঁটা,
মায়ের বুকের দুধের মতো সাদা মেঘ, কালো হয়ে যায় দুঃখে।


তাই এখানে আকাশটা কালো কাপড়ের চাদর,
তারায় তারায় জ্বলে অসংখ্য চিতার আগুন।
রাস্তাগুলো কালো নদী, বয়ে চলে আর্তনাদ,
মানুষেরা পতঙ্গের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে অগ্নিকুণ্ডে।


বাতাস বয়ে যায় কঙ্কালের হাহাকার নিয়ে,
প্রতিটি নিশ্বাসে ছাইয়ের গন্ধ,
এখানে স্মৃতি জ্বলে মৃত প্রদীপের মতো,
আশা ধোঁয়ার মতো উড়ে যায় দূরে কোথাও।


এই শহর নিস্নেহ দেবতার মন্দির,
যেখানে বলি দেওয়া হয় স্বপ্ন আর আকাঙ্ক্ষা।
এখানে প্রতিটি  ইট নিজ গল্প বলে,
প্রতিটি গলি কবর দেয় অতীতকে।


কবিরা এখানে লেখে রক্তের কালি দিয়ে,
শিল্পীরা আঁকে কালো সূর্যের ছবি।
এই শহরে সুর হলো চিৎকার,
নৃত্য হলো মৃত্যুর শেষ নাচ।


কিন্তু, কোথাও কি একটা ফাটল আছে নাকি?
এই কালো দেয়ালের কোণে কি একটু আলোর ঝিলমিল রয়েছে?
হয়তো কোনো শিশুর হাসি, কোনো প্রেমিকের চোখ,
না হয় কোনো বাঁশরিয়ার  বাঁশির সুরে...


না,
এ শহরে আশা নির্বাসিত,
এখানে শুধু জ্বলে অগ্নি,
এই শহর মৃত্যুর নাট্যশালা।


এই শহরে মৃত্যু নির্মম খেলার ছলে
নিজেরই সৃষ্টিকে ধ্বংস করে দেয় হাসতে হাসতে।
শুধু কিছু ছাই থেকে হয়তো হবে কোনোদিন ফিনিক্সের জন্ম,
কিন্তু আজ, আছে শুধু নিশ্বাস, নিঃশব্দ চিৎকারের স্রোত।