প্রথম পর্বের আলোচনার জের টেনে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার শুরুতেই আজ আপনাদের সামনে হাজির করবো  দুই মহারথীকে বা দুই মহাপুরুষকে। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন। তিনি তার বিখ্যাত আপেক্ষিকতার তত্ত্ব এবং বিশেষত ভর-শক্তি সমতুল্যতার সূত্র আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত। তিনি ১৯২১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
আর একজন বিশ্বকবি আমাদের পরম প্রিয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি ১৯১৪ সালে গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদ 'সং অফারিংস' লিখে নোবেল পুরস্কার পান। দু’জনের মধ্যে ছিল পরস্পরকে জানার অসীম কৌতূহল।
একজন কবি, যাঁর প্রকৃতির রসবোধের সঙ্গে বিজ্ঞানচেতনার অন্তরঙ্গ যোগ আছে। আর-একজন বিজ্ঞানী, যাঁর সত্যদর্শনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক চিরন্তন সৌন্দর্যবোধ। অর্থাত্‌ অন্তঃকরণে তিনি একজন কবি। এমন দুই মনীষী যদি কখনও মুখোমুখি কথা বলতে বসেন, তাহলে সেটা শুধু সৌজন্যমূলক বাক্যালাপ হয়ে থাকতে পারে না। তাঁদের কথোপকথনে দু’জনের মনের গভীর থেকে মণিমাণিক্য উঠে আসতে বাধ্য।কবি এবং বিজ্ঞানীর মধ্যে ১৯৩০ সালে বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছিল। সংগীত নিয়ে শেষ আলোচনাটুকু ছাড়া বাকি আলাপনে দু’জনের কথার মধ্যে কোনও মিল হয়নি। তা কি কথা হলো ? দুজনকার  কথোপকথনে দুএকটা কথা আলোচনা করলে কেমন হয় বন্ধুরা ? আইনস্টাইন রবীন্দ্রনাথকে বলেছিলেন, বাস্তব সত্য মানুষের মনের ওপর বা দ্রষ্টার ওপর নির্ভর করে না। একটা টেবিলকে দেখার জন্য কেউ না থাকলেও সেটা ওখানেই থাকবে। অন্যদিকে, রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য ছিল যে, টেবিলটা ব্যক্তিমনের বাইরে হলেও, বিশ্বমনের বাইরে নয়। আইনস্টাইন সেটা মেনে নিতে পারেননি।
আরো একটা আলোচনার বিষয় ছিল সংগীত নিয়ে ।গানের সৌন্দর্যবোধ কি মানুষের প্রকৃতির মধ্যে নিহিত না তার প্রশিক্ষণের ফল, এই নিয়ে। আইনস্টাইন কবিকে বলেছিলেন, ‘আপনার টেবিলের ওপর ঐ লাল ফুলটাকে আমি দেখছি, তা আপনার আর আমার কাছে এক না-ও হতে পারে’।  কবির জবাব আমার জানা নেই ।
যাই হোকনা কেন বিংশ শতাব্দীর যুগসন্ধিক্ষণের দুই যুগস্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং আলবার্ট আইনস্টাইন। এই মহাপণ্ডিতদ্বয়ের লেখালেখি, গবেষণা, আবিস্কার এবং সৃষ্টিকর্ম বিশ্বকে নিশ্চিতভাবে আলোড়িত এবং আলোকিত করেছে আর আমাদের জন্যে তৈরি হয়েছে এক বিশাল রত্নভাণ্ডার।


উপসংহার :-
গল্প আর বড় না করে ছোট করা যাক বন্ধুরা । নাহলে হয়তো আমার লেখা আপনাদের বিরক্তির কারণ ঘটাতে পারে ।প্রান্তিকভাবে তাহলে কথাটা কি দাঁড়ালো ? বিজ্ঞান ও কবিতার মধ্যে যদি কোনো বিরোধ থেকেও থাকে, এটা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে বিজ্ঞানের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য  কবিতাকে আরও জোরদার করে।  প্রত্যেকটি  চূড়ান্ত রহস্যের হাতছানি বৈজ্ঞানিকদের যেভাবে এগিয়ে নিতে অনুপ্রাণিত করে, কবিকেও  শৈল্পিক চেতনার সৌন্দর্য কবিতা লেখার এক অপরিহার্য্য উপাদান যোগায়।  ইংরেজ কবি কীট্স্ নিউটনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছিলেন যে আলোকের সূত্রের দ্বারা রামধনুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি রংধনুর সৌন্দর্যকেই ক্ষুন্ন করেছেন।কীট্স্ই আবার অন্য এক প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে সত্যই সৌন্দর্য্য।


তাই আমার এই আলোচনার শেষ কথাটি হলো 'সত্যই সৌন্দর্য্য'।


[আমার পরের ও শেষ পর্বের আলোচনায় থাকবে বিজ্ঞান ও কবিতার নান্দনিক অনুভূতি নিয়ে]


পাঠকদের জানাই আমার আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা।