প্রিয় কবি সমীর প্রামানিকের "ট্রু হিরো পল রোবসন" পড়ে শুধু মুগ্ধ হলাম না, আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লাম । তাই এনিয়ে কিছু না লিখলে বিবেক দংশিত হচ্ছিলো।আজ সঠিক দিনে ও সঠিক সময়ে কবি আমাদের উপহার দিলেন সুন্দর একটি কবিতা।


"শোষণের কথা ফুটে ওঠে তাঁর ব্যারিটোনে      
হাজারো প্রতিকূল পার করে;
অসমতার বাঁধ ভেঙে গেয়ে ওঠে তাঁর কণ্ঠ; সাম্যের জয়গানে
জীবনের সংগ্রাম আজও তাই
আশ্রয় খুঁজে নেয় সুরে সুরে, -“ওল ম্যান রিভার।”


পল রবসনের আজ জন্মদিন।১৮৯৬ সালে প্রিন্সটন, নিউ জার্সিতে ৯ এপ্রিল তাঁর এই পৃথিবীতে আগমন।সাতাত্তর বয়স ঠিক মার্টিন লুথার কিং এর মতো রাজনৈতিক কর্মকান্ডের দ্বারা ,গানের মাধ্যমে, অভিনয়ের মাধ্যমে আজীবন কালো মানুষদের জন্যে লড়াই করে গেলেন।পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন ২৩ শে জানুয়ারী, ১৯৭৬ সালে।


একাধারে শিল্পী আর অন্যদিকে শিল্পীর মনের মধ্যে জ্বলেছে সমানে সংগ্রামের আগুন।কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন সংগীতশিল্পী পল রবসন ছিলেন মানবতাবাদী। প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের জন্য হাতিয়ার ছিল তাঁর গান। “ওল’ ম্যান’স রিভার” এমনই এক গান। ১৯২৭ সালে গাওয়া এই গানে কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন শ্রমিকদের অনিঃশেষ সংগ্রাম, বঞ্চনা আর নিপীড়নের আখ্যান মিলেছে মিসিসিপি নদীর বয়ে যাওয়া স্রোতের সুরে।


Ol' Man River---Paul Robeson
[Darkies work on de Mississippi,
Darkies work while de white folks play,
Pullin' dose boats from de dawn to sunset,
Gittin' no rest till de judgement day.
or musical part]
Don't look up
An' don't look down,
You don' dast make
De white boss frown.
Bend your knees
An'bow your head,
An' pull date rope
Until you' dead.)
Let me go 'way from the Mississippi,
Let me go 'way from de white man boss;
Show me dat stream called de river Jordan,
Dat's de ol' stream dat I long to cross.
O' man river,]
Dat ol' man river,
He mus'know sumpin'
But don't say nuthin'
He jes' keeps rollin'
He keeps on rollin' along.
Long ol' river forever keeps rollin' on...
He don' plant tater,
He don' plant cotton,
An' dem dat plants 'em
Is soon forgotten,
but ol' man river,
He jes'…


”আমি উদ্ধত আমেরিকার প্রভুসুলভ মনোভাবকে ভয় পাই না- তা যত শক্তিধর রাষ্ট্রই সে হোক্‌ না কেন । আমি আমেরিকান – এটাই সত্য। এটা উপেক্ষা করে যারা নিগ্রো জনগোষ্ঠির ‘আঙ্কল টম’ হয়ে থাকতে চায় তাদের আমি চ্যালেঞ্জ জানাই। এই জঘন্য সামাজিক প্রথাকে আমি আমৃত্যু ঘৃণা করব । আমার ব্যক্তিগত সাফল্য এখানে খুবই তুচ্ছ ব্যাপার । ১৪ মিলিয়ন নিগ্রো জনগোষ্ঠি যেখানে অন্যায়-অবিচারের শিকার হচ্ছে- সেখানে আমার একার সাফল্য দেখিয়ে আমি কী বলব যে আমাদের কোনো সমস্যা নেই? আমরা চাই পূর্ণ স্বাধীনতা। আমাদের অধিকার খর্ব করে –এমন কোনো স্বাধীনতা আমরা চাই না।”


পল রোবসনের ভাবশিষ্য ছিলেন আমাদের ভূপেন হাজারিকা । নদী বয়ে চলছে মহাকালের ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে। দুপারের গল্প, গড়পরতা দিনের আখ্যানে অনবরত আসে রদবদল, তাতে জোড় বাঁধে অবক্ষয়, অবিচার। বাড়ে হাহাকার। তবুও নদী বয়ে যায়। ভূপেন হাজারিকা অভিযোগ করেছিলেন সুরের সঙ্গতে, ‘ও গঙ্গা তুমি বইছ কেন’?


এ অভিযোগের সুর কি কেবল গঙ্গার কানেই গিয়ে মিলিয়েছে? কালে কালে তো বঞ্চনা আর দুর্ভাগ্যের সুরগুলো সবখানেই এমন। সব নদীর কানেই এমন সুর ঠেকেছে। পল রবসনের “ওল’ ম্যান’স রিভার” গানেও তো সেই একই সুর, একই কষ্ট, একই সংগ্রামের কথা প্রতিধ্বনিত হয়েছিল।


তুমি মৃত্যুহীন যে রবসন
পৃথিবীর প্রতি ভোরে পথে প্রান্তরে
মেহনতী জনতার প্রতি অন্তরে
তোমারই একতার গান শোনা যায় রবসন
সারা দুনিয়ার শোষিতেরা এক হয় রবসন।  


পল রবসন কে অন্তরের শ্রদ্ধা জানিয়ে কবি সমীর প্রামানিক কে দিলাম একটি উষ্ণ আলিঙ্গন এরকম একটি রচনার জন্যে