আমিই কবিজায়া লাবণ্য;
কবির নাম জীবনানন্দ।
বনলতা সেন,
আমাকে দিলেন
দারিদ্রতা আর নিরানন্দ।


এই লিমেরিকটি আমি ০৭ /১২ /২০১৭ এ এই আসরে প্রকাশ করেছিলাম। তাই নিয়ে ইচ্ছে হলো কিছু বক্তব্য রাখার।
প্রথমেই বলে রাখি এটা কোন তাত্ত্বিক আলোচনা বা নিয়ম নির্দেশক নয়। যুক্তিযুক্ত মনে হলে মানবেন, না হয় নির্বোধ আলোচনা মনে করে ভুলে যাবেন।  
কবি হিসেবে জীবনানন্দের স্থান বাঙালির হৃদয়ের গহীনে। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর স্ত্রী লাবণ্যের প্রতি যে অবহেলা করেছেন তার জন্যে আমার তাঁর প্রতি কিছু ক্ষোভ আছে । মাত্র সাত বছর বয়সে চার মাসের ব্যবধানে লাবণ্য গুপ্ত তাঁর বাবা এবং মাকে হারান। পিতৃ মাতৃ হীন সেই বালিকার ভার নেন তাঁর জ্যাঠামশায় অমৃতলাল। লাবণ্য যেমন ছিলেন রূপসী আবার তেমনি বুদ্ধিমতী । স্কুলের পালা শেষ করে ঢাকার ইডেন কলেজে শুরু হলো কলেজ জীবন। স্বদেশী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়লেন। ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে তখন তুমুলভাবে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের আগুন জ্বলছে। সেই লাবণ্যকে হঠাৎ একদিন জ্যাঠামশাই বাড়িতে ডেকে নিয়ে এলেন। হস্টেল থেকে বাড়িতে আসতে এক মাঠ কাদা ভাঙতে হয়। আসতেই জ্যাঠামশাই বললেন, বাড়িতে অতিথি এসেছেন চা জলখাবার এনে দাও।  জ্যাঠামশাই পরিচয় করিয়ে দিলেন।  ইনি দিল্লী থেকে এসেছেন। ওখানকার রামযশ কলেজে পড়ান। ইংরেজির অধ্যাপক। আর এ আমার ভাইঝি লাবণ্য। অধ্যাপক জীবনানন্দ দাশ চোখ তুলে নমস্কার করলেন।সেদিন দুপুরে জ্যাঠামশাই লাবণ্যকে বললেন দিল্লী থেকে যে ছেলেটি এসেছিলেন, তিনি তাকে দেখতেই এসেছিলেন। এবং যাবার সময় মনোনীত করে গেছেন। লাবণ্যের কিন্তু তখন বিয়ে করতে একটুও ইচ্ছে নেই। সে সময়ে কারই বা থাকে। বিশেষ করে সবে তখন কলেজে ঢুকেছে, সবে মুক্তির স্বাদ, সবে রাজনীতির রহস্যময় আস্বাদ।জ্যাঠামশাই লাবণ্যকে জীবনের বাস্তব দিকগুলির কথাও ভাবতে বললেন সেদিন। বাবা নেই, মা নেই। কেবল তিনিই সম্বল।
খানিকটা অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও লাবণ্য বিয়েতে রাজি হয়েছিলেন অবস্থার চাপে পড়ে।
জীবনানন্দ দাশ সব সময়ই তাঁর স্ত্রীকে উপেক্ষা করতেন। লাবণ্য দাশ মহিলা হিসেবে অসাধারণ ছিলেন। জীবনানন্দ দাশ উৎকৃষ্ট স্বামী ছিলেন না। উৎকৃষ্ট পিতাও ছিলেন না। কাব্য নিয়েই ছিল তার যত সাধনা, ধ্যান। কবিতার জন্যই সাহিত্যের জন্যই তিনি তিক্ত জীবনযাপন করে গেছেন। তিনি তাঁর স্ত্রীকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। জীবনানন্দ দাশ সংসার চালাতে  অক্ষম ছিলেন।
১৯৫৪ সালের ১৪ অক্টোবর কলকাতার বালিগঞ্জে ট্রাম দুর্ঘটনায় আহত হন কবি জীবনানন্দ দাশ।  এই দুর্ঘটনার কারণেই ২২ অক্টোবর শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে মৃত্যু হয় ।শেষের দিকে সম্পর্ক এতই তিক্ত হয়ে গিয়েছিলো যে  লাবণ্য হাসপাতালে দেখতে পর্যন্ত্য যাননি ।এমনকি মৃত্যুর পরে তাঁর বাড়িতে গাড়ি পাঠানো স্বত্তেও তিনি যাননি !


আমার এই কবিতাটি এই পরিপ্রেক্ষিতেই লেখা ।
কষ্ট স্বীকার করে লেখাটি পড়ার জন্যে কবি ও পাঠক বন্ধুদের ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই। সবাই ভাল থাকুন।