হ্যাঁ আমি বলছি হাংরি আন্দোলনের কথা। ১৯৬১ সালের নভেম্বরে পাটনা শহর থেকে একটি ইশতাহার প্রকাশের মাধ্যমে হাংরি আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিলেন সমীর রায়চৌধুরী, মলয় রায়চৌধুরী, শক্তি চট্টোপাধ্যায় এবং দেবী রায়। আন্দোলনের প্রভাবটি ব্যাপক ও গভীর হলেও, ১৯৬৫ সালে প্রকৃত অর্থে হাংরি আন্দোলন ফুরিয়ে যায়।


'অর্গ্যাজম'  শব্দটার সঙ্গে অল্পবিস্তর সবাই পরিচিত।কথাটি যৌন সংক্রান্ত, যা মুহূর্তের মধ্যে সারা শরীরে ছড়িয়ে দেয় অনাবিল আনন্দ। ঠিক একই ভাবে হাংরির কবিরা কবিতা লিখতে শুরু করলেন  অর্গ্যাজম  এর মতো স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে। মলয় রায়চৌধুরী রচিত গোটাদুয়েক প্রেমের কবিতার উল্লেখ করলে বোধয় বুঝতে সুবিধে হবে।


১)অন্তরটনিক


বিড়ি ফুঁকিস অবন্তিকা,
চুমুতে শ্রমের স্বাদ পাই।
বাংলা টানিস অবন্তিকা,
নিঃশ্বাসে ঘুমের গন্ধ পাই।
গুটকা খাস অবন্তিকা,
জিভেতে রক্তের ছোঁয়া পাই।
মিছিলে যাস অবন্তিকা,
ঘামে তোর দিবাস্বপ্ন পাই।


২)কপিরাইট


অবন্তিকা, অতি-নারী, অধুনান্তিকা
পঞ্চান্ন বছর আগে চৈত্রের কোনারকে
লোডশেডিঙের রাতে হোটেলের ছাদে
ঠোঁটের ওপরে ঠোঁট রেখে বলেছিলি
চুমু প্রিন্ট করে দিচ্ছি সারা নোনা গায়ে
ম্যাজেন্টা-গোলাপি ভিজে লিপ্সটিকে
গুনেগুনে একশোটা, লিমিটেড এডিশান
কপিরাইট উল্লঙ্ঘন করলে চলবে না ।


অবন্তিকা, সাংবাদিকা, অধুনান্তিকা
এ-চুক্তি উভয়েরই ক্ষেত্রে লাগু ছিল
কিন্তু দুজনেই এর-তার কাছে থেকে
শুনেছি কখন কবে কার সাথে শুয়ে
ভেঙেছি ভঙ্গুর চুক্তি কেননা মজাটা
ঠোঁটের ফাইনপ্রিন্টে লিখেছিলি তুই ।


হাংরি আন্দোলনের ইস্তাহারে একজাগায় বলা হয়েছিল ...........
**কবিতা চলাকালীন আমাকে এবং আমার সমস্ত কিছুকে যতরকমভাবে পারা যায় উপস্থাপিত করা ।
**কথা বলার সময়ে যে ধরণ, মাপ আর ওজনের শব্দ ব্যবহার করা হয়, কবিতাতেও অবিকল তাই ।
**তীরের মতো বয়ানে অতিষ্ঠ অস্তিত্ব, বিবমিষা, বিরাগ আগাগোড়া তীব্রভাবে জানানো ।


১৯৬২ সালে এই ভাষাতেই কলেজ স্ট্রিট কফি হাউস থেকে খালাসিটোলা, বারদুয়ারি অবধি সর্বত্র গোপন বিপ্লবী আন্দোলনের ব্লু প্রিন্টের মতো ছড়িয়ে পড়ে একটি ম্যানিফেস্টো। ২৬৯ নেতাজি সুভাষ রোড, হাওড়া থেকে প্রকাশিত এই ম্যানিফেস্টোর ওপরে লেখা হাংরি জেনারেশন। নীচের লাইনে তিনটি নাম। স্রষ্টা: মলয় রায়চৌধুরী। নেতৃত্ব: শক্তি চট্টোপাধ্যায়। সম্পাদনা: দেবী রায়।


হাংরি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চিত্র পরিচালক সৃজিত মুখার্জি কয়েক বছর আগে 'বাইশে শ্রাবন' বলে একটি মুভি বানিয়েছিলেন। সেখানে একটি চরিত্র লেখা হয়েছিল কিছু হাংরি কবির আদলে। তাতে একটি কবিতা ছিল, যার দুটি লাইন এখানে উল্লেখ করছি। লিখেছিলেন অকালপ্রয়াত কবি ফাল্গুনী রায়।
"জেগে ওঠে পুরুষাঙ্গ, নেশার জন্যে হাড় মাংস রক্ত ঘিলু শুরু করে কান্নাকাটি
মনের বৃন্দাবনে পাড়াতুতো দিদি বৌদিদের সঙ্গে শুরু হয় পরকীয়া প্রেম"  


হাংরির প্রথম ম্যানিফেস্টো যখন বেরোয় তখন তার শেষের লাইনগুলি ছিল এরকম ...........
'কবিতা সতীর মতো চরিত্রহীনা,
প্রিয়তমার মতো যোনিহীনা
ও ঈশ্বরের মতো অনুষ্মেশিনি'


সবকিছু দেখে মনে হয়না কী হাংরির কবিরা নিজেদের যতনা সাহিত্যবিপ্লবী মনে করতেন তার চেয়ে বেশি পরিমানে ছিলেন যৌনবিপ্লবী??


উত্তর আপনাদের ওপর ছেড়ে দিলাম।


কবিতা আন্দোলন নিয়ে আরো কিছু লেখার ইচ্ছে রইলো।