পাঠকগণকে অনুরোধ মলয় রায়চৌধুরীর এই কবিতাটিকে অশ্লীল কবিতা না ভেবে নিচের বক্তব্যগুলো একটু ভালো করে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করবেন | আগেকার পর্বে আমি উল্লেখ করেছি যে হাংরি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা দায়ের হয় ১৯৬৪ সালে এবং তা চলে ৩৫ মাস, অর্থাৎ ১৯৬৭ পর্যন্ত । ১২০বি এবং ২৯৪ ধারা তুলে নিয়ে কেবল ২৯২ ধারায় চার্যশীট দেয়া হয় মলয় রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে তাঁর প্রচন্ড বৈদ্যুতিক ছুতার কবিতাটির জন্য ; বাদবাকি সবাইকে রেহাই দেয়া হয় । নিম্ন আদালতে সাজা হলেও, তিনি উচ্চ আদালতে মামলা জিতে যান ।
আদালতে সাক্ষী দিয়েছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় মলয়ের স্বপক্ষে | সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন মলয়ের দাদা সমীর রায়চৌধুরীর বিশেষ বন্ধু |সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর নিজের মুখে ই শুনুন :-
"একটি চিঠিপত্রের সংকলন প্রকাশিত হচ্ছে, আমাকে লেখা বিভিন্ন সময়ে অনেকের লেখা চিঠি। তাতে ছাপা হচ্ছে সমীর রায়চৌধুরীরর কয়েকটি চিঠি। আমার স্মৃতিশক্তি ইদানীং দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, ঐ চিঠিগুলির বিষয়বস্তু আমার মনে ছিল না। সেই সব চিঠিতে বিধৃত হয়েছে হাংরি জেনারেশান গড়ার ইতিহাস আর কৃত্তিবাসের সঙ্গে সমীর রায়চৌধুরীর সম্পর্ক। আমার মনে পড়ে গেল, এক সময় আমি কৃত্তিবাস নিয়ে বেশ সংকটে পড়েছিলাম। আমার পাশে আর কেউ ছিল না। কৃত্তিবাস একেবারেই বন্ধ করে দেবার কথা চিন্তা করেছিলাম। তখন আমার পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছিল সমীর। সে আমাকে বুঝিয়েছিল যে কিছুতেই কৃত্তিবাস বন্ধ করা যাবে না। সে সবরকম সাহায্য করতেই প্রস্তুত, এমন কি টাকা-পয়সা দিয়েও।"


আর মামলার আর একজন সাক্ষী ছিলেন সাহিত্যিক শক্তি চট্টোপাধ্যায় | যদিও তিনি এই আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন , কিন্তু তিনি পরে  প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা করেছিলেন | এবং মলয়ের বিপক্ষে সাক্ষী দেন |  তার বিবরণ নিচে দিলাম :-


পেশকার: এই নিন, গীতার ওপর হাত রাখুন । বলুন,
যা বলব ধর্মত সত্য বলব, সত্য বই মিথ্যা বলব না ,
কিছু গোপন করব না ।


শক্তি: যা বলব ধর্মত সত্য বলব, সত্য বই
মিথ্যা বলব না, কিছু গোপন করব না ।


পেশকার: নাম বলুন ।


শক্তি: শক্তি চট্টোপাধ্যায় ।


বিচারক অমল মিত্র: কী কাজ করেন তাই বলুন ।
হোয়াট ইজ ইয়োর লাইভলিহুড?


শক্তি: লেখালিখিই করি । এটাই জীবিকা ।


সরকারি উকিল : আচ্ছা মিস্টার চ্যাটার্জি, আপনি তো একজন বি. এ?


শক্তি: হ্যাঁ, পরীক্ষা দিয়েছিলাম।


বিচারক অমল মিত্র: আপনি বি.এ. কি না তাই বলুন
। আপনি কি স্নাতক?


শক্তি: আজ্ঞে না ।


সরকারি উকিল : আপনি তো প্রথম
থেকে হাংরি জেনারেশানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাই
না ?


শক্তি: ছিলাম ।


সরকারি উকিল: কী ভাবে ছিলেন সেটা ইয়োর
অনারকে বুঝিয়ে বলুন তো ।


শক্তি: সমীরের ছোট ভাই মলয় ইংরেজ কবি চসার
আর জার্মান ফোলিজফার অসওয়াল্ড স্পেংলারের
আইডিয়া থেকে একটা নন্দনতত্ব দিয়েছিল । সেই
আইডিয়া ফলো করে আমরা কয়েকজন
মিলে আন্দোলনটা আরম্ভ করি ।


সরকারি উকিল : আসামী মলয়
রায়চৌধুরীকে তাহলে চেনেন ? কবে থেকে চেনেন?


শক্তি: হ্যাঁ চিনি । অনেক কাল থেকে ।


সরকারি উকিল: কী ভাবে জানাশোনা হল?


শক্তি: ওর বড় ভাই সমীর আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ।
সমীরের চাইবাসার বাড়িতে থাকার সময়ে আমি প্রচুর
লিখতাম । সেই সূত্রে মলয়ের সঙ্গে ওদের পাটনার
বাড়িতে পরিচয় ।


সরকারি উকিল: কারা-কারা এই হাংরি জেনারেশান
আন্দোলন আরম্ভ করেন?


শক্তি: মলয় রায়চৌধুরী, ওর বড় ভাই সমীর
রায়চৌধুরী, হারাধন ধাড়া ওরফে দেবী রায়,
উৎপলকুমার বসু আর আমি । ছাপাটাপার খরচ প্রথম
থেকে ওরা দু-ভাইই দিয়েছে । পরে আরও অনেকে যোগ দিয়েছিলেন । তাঁদের নাম বলব কী?


সরকারি উকিল : তা আপনি যখন পায়োনিয়ারদের
একজন, তখন এই আন্দোলনের সঙ্গে আর সম্পর্ক
রাখলেন না কেন?


শক্তি: এমনিই । এখন আমার লেখার কাজ অনেক
বেড়ে গেছে ।


বিচারক অমল মিত্র: ইউ মিন দেয়ার ওয়াজ এ
ক্ল্যাশ অব ওপিনিয়ন? নট ক্ল্যাশ অব ইগো আই
সাপোজ?


শক্তি: আজ্ঞে হ্যাঁ । তাছাড়া এখন আর সময় পাই
না ।


সরকারি উকিল : কতদিন হল
আপনি হাংরি জেনারেশানের সঙ্গে যুক্ত নন?


শক্তি: প্রায় দেড় বছর ।


সরকারি উকিল: দেখুন তো, হাংরি জেনারেশানের এই
সংখ্যাটা পড়েছেন কি না ?


শক্তি: পড়েছি । কবিতা পেলেই পড়ি।


সরকারি উকিল: ‘প্রচন্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’
কবিতাটা পড়েছেন কি?


শক্তি: হ্যাঁ । কবিতাটা আমি পড়েছি ।


সরকারি উকিল : পড়ে আপনার কী মনে হয়েছে?


শক্তি: ভালো লাগেনি ।


সরকারি উকিল: ভালো লাগেনি বলতে আপনি অবসিন…..


আসামী পক্ষের উকিল : আই অবজেক্ট তু ইট ইয়োর
অনার । হি কান্ট আস্ক লিডিং কোয়েশ্চেন্স ইন
সাচ এ ওয়ে ।


সরকারি উকিল : ওয়েল, আই অ্যাম
রিফ্রেজিং দি কোয়েশ্চেন । আচ্ছা মিস্টার
চ্যাটার্জি, ভালো লাগেনি বলতে আপনি কী বোঝাতে চাইছেন?


শক্তি: ভালো লাগেনি মানে জাস্ট ভালো লাগেনি ।
কোনো-কোনো কবিতা পড়তে ভালো লাগে, আবার
কোনো-কোনো কবিতা পড়তে আমার
ভালো লাগে না ।


বিচারক অমল মিত্র: সো দি ডিফারেন্স অব
ওপিনিয়ন ওয়াজ বেসড অন লাইকস অ্যান্ড
ডিসলাইকস । হেয়ার ইউ মিন দি পোয়েম ডিডন্ট
অ্যাপিল টু ইয়োর ইসথেটিক সেনসেস ?


শক্তি: ইয়েস স্যার ।


সরকারি উকিল: দ্যাটস অল ।


আসামী পক্ষের উকিল : ক্রসিং হবে না ।


হাংরি আন্দোলনের অবদান সম্পর্কে বিভিন্ন আলোচক বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন । হাংরি আন্দোলন সম্পর্কে এম ফিল এবং পি আইচ ডি গবেষণা হয়েছে । অতএব যে কয়েকটি ক্ষেত্রে গবেষকরা একমত সেগুলি গ্রহণ করা যেতে পারে ।


(১). পত্রিকার নামকরণ : হাংরি আন্দোলনের পূর্বে পত্রিকার নাম হতো কবিতা, পূর্বাশা, অরণি কৃত্তিবাস, অগ্রণি, শতভিষা,উত্তরসূরী, ধ্রুপদী, সংবেদ, ক্রান্তি, চতুরঙ্গ ইত্যাদি । হাংরি আন্দোলনকারীরা যে-ধরণের নাম রাখার চল করলেন তা বৈপ্লবিক । ফলে তার পর থেকে পত্রিকার নামকরণে বিপুল পরিবর্তন ঘটল । যেমন, কৌরব, আবার এসেছি ফিরে, মানুষের বাচ্চা, ঢ়পের কাগজ, আমি আর লীনা হঁটে চলেছি, ক্ষেপচুরিয়াস, দিল্লী হাটার্স ইত্যাদি ।


(২) সাবঅলটার্ন বা নিম্নবর্গ থেকে সাহিত্যক্ষেত্রে আগমন, যা কবিতা, কৃত্তিবাস, শতভিষা, ধ্রুপদী ইত্যাদি পত্রিকায় দৃষ্টিকটুভাবে অনুপস্হিত থাকতো । হাংরি আন্দোলন প্রথম যৌথভাবে প্রন্তিকের ডিসকোর্সকে স্হান করে দিল ।


(৩). পাঠবস্তুতে মুক্তসূচনা ও মুক্তসমাপ্তির প্রচলন ,বিশেষ করে প্রদীপ চৌধুরী, ফালগুনী রায়, মলয় রায়চৌধুরী, ত্রিদিব মিত্র ও শৈলেশ্বর ঘোষের কবিতা-বিশেষ যেখান থেকে ইচ্ছা পড়া যায়, স্তবক ও পংক্তি উপর-নিচ রদবদল করে পড়া যায় । একই প্রক্রিয়া গদ্যে এনেছেন সুভাষ ঘোষ, সমীর রায়চৌধুরী, ফালগুনী রায় ও সুবিমল বসাক ।


(৪). মনস্হিতি প্রকাশকালীন অব্যয় শব্দ কবিতায় প্রয়োগ; যেমন ওঃ, আঃ, আহ, আআআআআআআহ‌,, উঃ, শ্যাঃ, ফুঃ, হাহ ইত্যাদি, বিশেষ করে মলয় রায়চৌধুরী, প্রদীপ চৌধুরী ও ফালগুনী রায়- এর কবিতায় ।


(৫). পাঠবস্তুতে অনুক্রমহীনতা প্রয়োগ : বাক্যবুননে লজিকাল ক্র্যাক বা যুক্তিফাটল প্রয়োগ যা দেবী রায়, মলয় রায়চৌধুরী, শৈলেশ্বর ঘোষ প্রমুখের কবিতার বৈশিষ্ট্য । সত্তর দশকের পর পশ্চিম বাংলায় এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে ।


(৬). গুরুচণ্ডালী শব্দগঠন ও বাক্য প্রয়োগ যা হাংরি আন্দোলনকারীদের পূর্বে নিষিদ্ধ ছিল বর্তমানে আকছার হয়ে গেছে ।


(৭). ভঙ্গুর বাকপ্রতিমা প্রয়োগ । হাংরি আন্দোলনকারীদের কবিতায় একটি ছবি সম্পূর্ণ গড়ে ওঠার আগেই তা মিলিয়ে গিয়ে আরেকটি ছবি ভেসে ওঠে । বাংলা কবিতায় এটি এখন প্রতিষ্ঠিত শৈলী ।


(৮). যৌন চিত্রকল্প, অশ্লীল শব্দ, গালমন্দ, নিচুতলার অভিব্যক্তি যা পাঁচের দশক পর্যন্ত পাঠবস্তুতে নিষিদ্ধ ছিল তার যথেচ্ছ প্রয়োগের সূত্রপাত করে গেছেন হাংরি আন্দোলনকারীরা ।


(৯). তাঁদের পাঠবস্তুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে গৌহাটি বিস্ববিদ্যালয়ের রিডার ড, শঙ্কর ভট্টাচার্য লিখেছেন যে সেগুলো "সাধারণত প্রতিবাদ-মুখর, আনুষ্ঠানিকতা-বর্জিত, প্রাতিস্বিকতায় ভঙ্গুর, অস্হির, আস্বস্তিকারক, ছকহিন, ঐক্যহীন, খাপছাড়া, এলোপাতাড়ি ও আয়রনিমূলক" । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগীব প্রধান ড. তরুণ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, "ভাষায়, ছন্দে, অলংকার, স্তবকে তুমুল ভাংচুর" করেছেন তাঁরা, এবং "যৌনতার সঙ্গে এসেছে ব্যঙ্গ, আত্মপরিহাস ও অসহায় মানুষের নিস্ফলতার যন্ত্রণা; আত্মপ্রক্ষেপ ঘটিয়ে তঁরা নিরপেক্ষ হয়ে যান" । আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বি. দে মলয় রায়চৌধুরী ও হাংরি আন্দোলন বিষয়ে ৩৫০ পৃষ্ঠার গবেষণার জন্য পিএচ.ডি. সন্মান দ্বারা ভূষিত হয়েছেন ।
  
তাই পাঠকগণকে আবার অনুরোধ মলয় রায়চৌধুরীর এই কবিতাটিকে অশ্লীল কবিতা না ভেবে ওপরের  বক্তব্যগুলো একটু ভালো করে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করবেন |


প্রচন্ড বৈদ্যুতিক ছুতার
— মলয় রায়চৌধুরী


ওঃ মরে যাব মরে যাব মরে যাব
আমার চামড়ার লহমা জ্বলে যাচ্ছে অকাট্য তুরুপে
আমি কী করবো কোথায় যাব ওঃ কিছুই
ভাল্লাগছে না
সাহিত্য-ফাহিত্য লাথি মেরে চলে যাব শুভা
শুভা আমাকে তোমার তরমুজ আঙরাখার
ভেতরে চলে যেতে দাও
চুরমার অন্ধকারে জাফরান মশারির আলুলায়িত
ছায়ায়
সমস্ত নোঙর তুলে নেবার পর শেষ নোঙর
আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে
আর আমি পার্ছি না অজস্র কাচ
ভেঙে যাচ্ছে কর্টেক্সে
আমি জানি শুভা, যোনি মেলে ধরো, শান্তি দাও
প্রতিটি শিরা অশ্রুস্রোত
বয়ে নিয়ে যাচ্ছে হৃদয়াভিগর্ভে
শাশ্বত অসুস্থতায় পচে যাচ্ছে মগজের সংক্রামক স্ফূলিঙ্গ
মা তুমি আমায় কঙ্কালরূপে ভূমিষ্ঠ করলে না কেন ?
তাহলে আমি দু’কোটি আলোকবর্ষ ঈশ্বরের
পোঁদে চুমু খেতুম
কিন্তু কিছুই ভালো লাগে না আমার কিছুই
ভালো লাগছে না
একাধিক চুমো খেলে আমার গা গুলোয়
ধর্ষণকালে নারীকে ভুলে গিয়ে শিল্পে ফিরে এসেছি কতোদিন
কবিতার আদিত্যবর্ণা মূত্রাশয়ে
এসব কী হচ্ছে জানি না তবু বুকের
মধ্যে ঘটে যাচ্ছে অহরহ
সব ভেঙে চুরমার করে দেব শালা
ছিন্নভিন্ন করে দেব তোমাদের পাঁজরাবদ্ধ উৎসব
শুভাকে হিঁচড়ে উঠিয়ে নিয়ে যাব আমার ক্ষুধায়
দিতেই হবে শুভাকে
ওঃ মলয়
কোলকাতাকে আর্দ্র ও পিচ্ছিল বরাঙ্গের মিছিল মনে হচ্ছে আজ
কিন্তু
আমাকে নিয়ে আমি কী কোর্বো বুঝতে পার্ছিনা
আমার স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে
আমাকে মৃত্যুর দিকে যেতে দাও একা
আমাকে ধর্ষণ ও মরে যাওয়া শিখে নিতে হয়নি
প্রস্রাবের পর শেষ ফোঁটা ঝাড়ার দায়িত্ব আমায় শিখতে হয়নি
অন্ধকারে শুভার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়া শিখতে হয়নি
শিখতে হয়নি নন্দিতার বুকের ওপর
শুয়ে ফরাসি চামড়ার ব্যবহার
অথচ আমি চেয়েছিলুম আলেয়ার নতুন জবার মতো যোনির সুস্থতা
যোনিকেশরে কাচের টুকরোর মতন ঘামের সুস্থতা
আজ আমি মগজের শরণাপন্ন বিপর্যয়ের
দিকে চলে এলুম
আমি বুঝতে পর্ছিনা কী জন্যে আমি বেঁচে থাকতে চাইছি
আমাকে নতুন ও ভিন্নতর কিছু কোর্তে হবে
শুভার স্তনের ত্বকের মতো বিছানায় শেষবার
ঘুমোতে দাও আমায়
জন্মমুহূর্তের তীব্রচ্ছাট সূর্যজখম মনে পড়ছে
আমি আমার নিজের মৃত্যু দেখে যেতে চাই
মলয় রায়চৌধুরীর প্রয়োজন পৃথিবীর ছিল না
তোমার তীব্র রূপালি ক্লিটোরিসে ঘুমোতে দাও
কিছুকাল শুভা
শান্তি দাও শুভা শান্তি দাও
তোমার ঋতুস্রাবে ধুয়ে যেতে দাও আমার পাপতাড়িত
কঙ্কাল
আমাকে তোমার গর্ভে আমারি শুক্র থেকে জন্ম
নিতে দাও
আমার বাবা-মা অন্য হলেও কি আমি এরকম হতুম ?
সম্পূর্ণ ভিন্ন এক শুক্র থেকে মলয়
ওরফে আমি হতে পার্তুম ?
আমার বাবার অন্য নারীর গর্ভে ঢুকেও কি মলয় হতুম ?
শুভা না থাকলে আমি কি পেশাদার ভালোলোক
হতুম মৃত ভায়ের মত
ওঃ বলুক কেউ এসবের জবাবদিহি করুক
শুভা, ওঃ শুভা
তোমার সেলোফেন সতীচ্ছদের
মধ্যে দিয়ে পৃথিবীটা দেখতে দাও
পুনরায় সবুজ তোশকের ওপর চলে এসো শুভা
যেমন ক্যাথোড রশ্মিকে তীক্ষ্ণধী চুম্বকের আঁচ
মেরে তুলতে হয়
১৯৫৬ সালের সেই হেস্তনেস্তকারী চিঠি মনে পড়ছে
তখন ভাল্লুকের ছাল দিয়ে সাজানো হচ্ছিল তোমার
ক্লিটোরিসের আশপাশ
পাঁজর নিকুচি-করা ঝুরি তখন তোমার স্তনে নামছে
হুঁশাহুঁশহীন গাফিলতির বর্ত্মে স্ফীত
হয়ে উঠছে নির্বোধ আত্মীয়তা
আ আ আ আ আ আ আ আ আ আঃ
মরে যাব কিনা বুঝতে পার্ছিনা
তুলকালাম হয়ে যাচ্ছে বুকের ভেতরকার সমগ্র অসহায়তায়
সব কিছু ভেঙে তছনছ করে দিয়ে যাব
শিল্পের জন্যে সক্কোলকে ভেঙে খান-খান
করে দোবো
কবিতার জন্যে আত্মহত্যা ছাড়া স্বাভাবিকতা নেই শুভা
আমাকে তোমার লাবিয়া ম্যাজোরার স্মরণাতীত
অসংযমে প্রবেশ কোর্তে দাও
দুঃখহীন আয়াসের অসম্ভাব্যতায় যেতে দাও
বেসামাল হৃদয়বত্তার স্বর্ণসবুজে
কেন আমি হারিয়ে যাইনি আমার মায়ের যোনিবর্ত্মে
কেন আমি পিতার আত্মমৈথুনের পর তাঁর
পেচ্ছাপে বয়ে যাইনি
কেন আমি রজোঃস্রাবে মিশে যাইনি শ্লেষ্মায়
অথচ আমার নিচে চিত আধবোজা অস্বহায়
আরাম গ্রহণকারিণী শুভাকে দেখে ভীষণ কষ্ট হয়েছে আমার
এরকম অসহায় চেহারা ফুটিয়েও
নারী বিশ্বাসঘাতিনী হয়
আজ মনে হয় নারী ও শিল্পের
মতো বিশ্বাসঘাতিনী কিছু নেই
এখন আমার হিংস্র হৃৎপিণ্ড অসম্ভব মৃত্যুর
দিকে যাচ্ছে
মাটি ফুঁড়ে জলের ঘূর্ণি আমার গলা ওব্দি উঠে আসছে
আমি মরে যাব
ওঃ এসমস্ত কী ঘটছে আমার মধ্যে
আমি আমার হাত হাতের চেটো খুঁজে পাচ্ছি না
পায়জামায় শুকিয়ে যাওয়া বীর্য থেকে ডানা মেলছে
৩০০০০০ শিশু উড়ে যাচ্ছে শুভার স্তনমণ্ডলীর দিকে
ঝাঁকে-ঝাঁকে ছুঁচ ছুটে যাচ্ছে রক্ত থেকে কবিতায়
এখন আমার জেদি ঠ্যাঙের চোরাচালান
সেঁদোতে চাইছে
হিপ্নোটিক শব্দরাজ্য
থেকে ফাঁসানো মৃত্যুভেদী যৌন-পরচুলায়
ঘরের
প্রত্যেকটা দেয়ালে মারমুখী আয়না লাগি
য়ে আমি দেখছি
কয়েকটা ন্যাংটো মলয়কে ছেড়ে দিয়ে তার অপ্রতিষ্ঠ খেয়োখেয়ি ।