কবিতাকে এবং আমাদের ভালোবাসার প্রাণের প্রণয়ী(সুইটহার্ট) এই কবিতার আসরটিকে যদি আমরা সত্যি সত্যি ভালোবাসি, তাহলে কবি ও কবিতা শিল্প নিয়ে রুচিশীল পাঠক তৈরির লক্ষে ও কবিতা শিল্পের উন্নতি করতে আমাদের সবাইকার সচেষ্ট হওয়া উচিত।আর এই আলোচনা সভাটি তার জন্যে সবচেয়ে উপযুক্ত প্লাটফর্ম। তাই আসরের নবীন,প্রবীণ, পুরুষ এবং মহিলা সব কবিকে অনুরোধ ও আহ্বান করি আপনারা আপনাদের মতামত ব্যক্ত করুন আর সেটা নিয়ে সবাই আলাপচারিতার মাধ্যমে এই আসরটিকে আরো সম্মৃদ্ধ করে আলোকিত করি।


শুরুটা নাহয় আমিই করি?
আজকের বিষয় রাখছি............


"ভালো কবিতা লিখতে গেলে কবিতা পড়ার অভ্যেস করা উচিত কি?"


আমার মতামত ....
কিভাবে শুরু করি বলুন তো ? চলুন কবিগুরুকে নিয়েই শুরু করি। রবীন্দ্রনাথ ছবি আঁকা শুরু করেছিলেন ৭০ বছর বয়েসে তাঁর শেষ জীবনের প্লেটোনিক প্রেমিকা ওকাম্পোর উৎসাহ প্রদানে। ওকাম্পো ছিলেন রবীন্দ্রনাথের প্রাণের বিজয়া। পূরবী'র (বিজয়াকে উৎসর্গিত) কবিতাগুলো কবি আর্জেন্টিনায় ওকাম্পোর বাড়িতে থাকাকালীন লেখা। ওকাম্পো তাঁর লেখার পাণ্ডুলিপিতে অদ্ভুত একটা জিনিস লক্ষ্য করলেন। পূরবীর পান্ডুলিপিতে বিচিত্র সব কাটাকুটি দেখে তিনি লিখেছেন ......
‘ওঁর একটি ছোট খাতা টেবিলে পড়ে থাকতো, ওরই মধ্যে কবিতা লিখতেন বাংলায়। বাংলা বলেই যখন-তখন খাতাটা খুলে দেখা আমার পক্ষে তেমন দোষের কিছু ছিল না। এই খাতা আমায় বিস্মিত করল, মুগ্ধ করল। লেখার নানা কাটাকুটিকে একত্রে জুড়ে দিয়ে তার ওপর কলমের আঁচড় কাটতে যেন মজা পেতেন কবি। এই আঁকিবুঁকি থেকে বেরিয়ে আসতো নানা রকমের মুখ, প্রাগৈতিহাসিক দানব, সরীসৃপ অথবা নানা আবোলতাবোল। সমস্ত ভুল, সমস্ত বাতিল করা লাইন, কবিতা থেকে বহিষ্কৃত সব শব্দ এমনি করে পুনর্জীবিত হতো এক ভিন্ন রূপের জগতে, আমাদের দিকে তাকিয়ে যেন স্নিগ্ধ কৌতুকে হাসত তারা … এই ছোট খাতাটাই হলো শিল্পী রবীন্দ্রনাথের সূচনাপর্ব।’
আমি বলি কি কবিতা লিখে এই যে মজার ছলে তিনি কাটাকুটি করতেন আর সেই কাটাকুটি হয়ে যেত একটা চিত্র আর এই মজার ছলে কাটাকুটির অভ্যাসটি তাঁকে বানিয়ে দিলো চিত্রকর।
ঠিক একইভাবে কবিতা পড়ার অভ্যাস যদি আমরা করতে পারি, তাহলে আজ না হয় কাল নিশ্চিতভাবে আমাদের কলম থেকেও কিছু ভালো কবিতা বেরিয়ে আসতে বাধ্য।  
আমরা এই আসরে বেশিরভাগ সৌখিন কবি। কবিতা যেহেতু সুখপাঠ্যের শিল্পমুখ, তাই আমরাও কবিতা লিখে ও অন্যদের পড়িয়ে সুখ পাই। তবে সৌখিন হলেও আমরা সবসময় আপ্রাণ চেষ্টা করি কিকরে কবিতাটিকে মানসম্মত করা যায়। আর এই মানসম্মত কবিতা লিখতে গেলে আমার অভিজ্ঞতায় বলে যা হাতের কাছে পাও পড়ো। তা সে  বটতলার চটি বই হোক বা খবরের কাগজ হোক, ছোট গল্প হোক, উপন্যাস হোক, নামি দামি কবির কবিতা হোক,অথবা আমাদের মতো আনাড়ি কবির কবিতা হোক। আমি নিশ্চিত, কিছু না কিছু পেয়ে যাবেন। নয় কবিতা লেখার ভাবনা অথবা কিছু শব্দ ও আরো কিছু কবিতা লেখার রেসিপি ও মশলা।


'যেখানে দেখিবে ছাই,
উড়াইয়া দেখিবে তাই ,
পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন'


তাই কবিতা লিখতে গেলে পড়ার অভ্যাস খুব জরুরি বলে আমি অন্তত মনে করি। জানি, কবিতা উপভোগের মানদণ্ড ক্রমে ক্রমে পাল্টে যাচ্ছে। কবিতার কথাবিন্যাস, ছন্দ, বাস্তবতা সবকিছু এখন কবিতার মধ্যে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।কবিতার পাঠক বিভিন্ন ধরণের। কবিতা কেও শুধু শোনেন কান দিয়ে, কেউ অভ্যেসবশে, কেউ বা মস্তিষ্ক দিয়ে, ক্রিটিক্যালভাবে, কিন্তু সবাই কবিতাকে স্পর্শ করতে চান তাকে আবেগ দিয়ে, কেউ অবলম্বন হিসেবে, কেউ বা তাকে নিছক মেধাপ্রকল্প হিসেবে।প্রত্যেকের ইচ্ছার অভিমুখ কিন্তু একইদিকে। একটু ছায়া, একটু স্বস্তি, একটু শান্তি। এরকম মানুষ চিরকাল আছেন যাঁরা মনে করেন আমি কবিতা বুঝিনা তাই ওটা ট্র্যাশ। সময়ের অপচয়। কেউ বা কবিতার কাছে কিছু পেয়ে থাকেন, তাই তাঁরা আরো কিছু পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যান। কেউ বা মেধাচর্চা করে শেষ পর্যন্ত কবিতার রহস্যময় জগতে ঢোকার পাসপোর্টও পেয়ে যান। সবারই স্বাধীনতা আছে নিজের মতো করে ভাবার। তবে শ্রমের শর্তটি অস্বীকার করলে আমাদের মতো কবির কিন্তু কিছু প্রাপ্তি হবেনা। কবিতার কাছে কিছু পেতে গেলে ভাষাটি অন্তত ভালোভাবে শিখতে হবে। কারণ কবিতা ভাষাভিত্তিক শিল্প।কবিতার কোনও সীমা নেই।


তাই কবিতা লেখাটাকে আসুন আমরা  চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে লিখি এই আসরে।


উপসংহার :
এই আসরের প্রিয় বন্ধুগণ;
আপনাদের আবার অনুরোধ, আপনারা সবাই এগিয়ে আসুন আপনাদের নিজের নিজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ও মনের আদানপ্রদানের মাধ্যমে এই আলোচনা সভাটিকে ভালোবাসার মাধ্যমে আরো উর্বর করে তুলি। এতে আমাদের সবাইকারই লাভ।


প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই আমার প্রিয় পাঠকদের।