আজ ২২শে অক্টোবর বাঙালির হৃদয়ের কবি জীবনানন্দের মৃত্যু দিবসে কবির শ্রীচরণে শ্রদ্বাঞ্জলি প্রয়াসে আমার এই ক্ষুদ্র প্রতিবেদন ।
১৪ই অক্টোবর, ১৯৫৪ তারিখে কলকাতার বালিগঞ্জে এক ট্রাম দুর্ঘটনায় তিনি আহত হন। ট্রামের ক্যাচারে আটকে তার শরীর দলিত হয়ে গিয়েছিল।রাসবিহারী এভিনিউ এ থাকাকালীন রোজ সকালে তিনি পায়চারি করতে বেড়াতেন।ফেরার সময় দুটো ডাব হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন।আপনভোলা কবি লক্ষ্য করেন নি যে অন্য লাইন দিয়ে আরো একটা ট্রাম আসছিলো। গুরুতরভাবে আহত জীবনানন্দের চিৎকার শুনে ছুটে এসে নিকটস্থ চায়ের দোকানের মালিক চূণীলাল তাঁকে উদ্ধার করে। ভেঙ্গে গিয়েছিল কণ্ঠা, ঊরু এবং পাঁজরের হাড়।গুরুতরভাবে আহত কবিকে ভর্তি করা হয় শম্ভূনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। এ সময় ডাঃ ভূমেন্দ্র গুহ-সহ অনেক তরুণ কবি জীবনানন্দের সুচিকিৎসার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন। কবি-সাহিত্যিক সজনীকান্ত দাস এ ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাঁর অনুরোধেই পশ্চিমবঙ্গের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় কবিকে দেখতে এসেছিলেন এবং আহত কবির সুচিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছিলেন যদিও এতে চিকিৎসার তেমন উন্নতি কিছু হয়নি।শেষ পর্যন্ত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন কবি। চিকিৎসক ও সেবিকাদের সকল প্রচেষ্টা বিফলে দিয়ে ২২শে অক্টোবর, ১৯৫৪ তারিখে রাত্রি ১১টা ৩৫ মিনিটে কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
মৃত্যু শয্যায় শুয়ে তিনি কবি সজনীকান্তকে বলেছিলেন "আমায় একটা কমলালেবু দেবে"?মনে পরে গেলো তার সেই বিখ্যাত একটি কবিতার কথা। নাম দিয়েছিলেন "কমলালেবু" ।
'একবার যখন দেহ থেকে বার হয়ে যাব
আবার কি ফিরে আসব না আমি পৃথিবীতে?
আবার যেন ফিরে আসি
কোনো এক শীতের রাতে
একটা হিম কমলালেবুর করুণ মাংস নিয়ে
কোনো এক পরিচিত মুমূর্ষুর বিছানার কিনারে।'


আমার নিজের রচিত কবিতা জীবনানন্দকে নিয়ে :-


আনন্দ যার জীবনে বিরলতম অনুভব, জীবনানন্দ।
বিষন্নতার সঙ্গে নিত্য যার সহবাস,জীবনানন্দ।
নির্বাসিত জীবনে সতত যিনি সৃষ্টিশীল, জীবনানন্দ।
নির্জনতম কবি, অবচেতনার কবি, জীবনানন্দ।
রবির আলোয় আলোকিত না হয়ে একলা চললেন, জীবনানন্দ।
অনুচ্চারিত বিদ্রোহ করে ছন্দের বন্ধন ভাঙ্গলেন, জীবনানন্দ।
কবিতার আঙ্গিক ভেঙ্গে তছনছ করলেন, জীবনানন্দ।
এবড়ো খেবড়ো অনালোকিত রাস্তায় হাঁটলেন, জীবনানন্দ।


হাজার বছর পথ হাঁটার পরেও ভুলবনা---------
বনলতা আর জীবনানন্দ।