মানুষের মন অন্ধ যখন
- কবীর হুমায়ূন
মানুষের মন অন্ধ যখন;
নয়ন তখন অর্থবিহীন।
চেতনাবিহীন ভাবনার তলে
সারা দেহ তার হয় যে অসাড়,
পঙ্গুতা পায় দেহমনখানি।
সাদাকে তখন দেখে না সে সাদা,
সত্যকে তার মনে হয় ভুল;
যুদ্ধ-ধামামা বেজে উঠে মনে,
অহমিকা ছেড়ে সরতে চায় না
কভু এক চুল। আলোর ঝলক
পৌঁছে না কভু মননের ঘরে,
রুদ্ধ-আগল তার চারিধারে।
অসুর শক্তি শুধু তড়পায়,
এলোমেলো নাচে নিকষ আঁধারে।
মানুষের মন হয় যদি নদী,
বহতা জলের ধারা অনিবার;
আলোকের রশ্মি নবীন উষসী,
পাখির কাকলি জাগে চারিধার।


প্রিয় কবি কবির হুমায়ূনের এই কবিতাটি পড়ে সবচেয়ে আগে যে কবির কথা মনকে নাড়া দিলো তিনি হচ্ছেন বিশ্বের সাড়া জাগানো উপন্যাস  
" লেডি চাটারলিজ লাভার" এর লেখক ডি এইচ লরেন্স এর সেই বিখ্যাত চিন্তাভাবনার উক্তি "যিনি চোখে দেখেন, কিন্তু মন জানে না, তা বিদ্যমান নেই" । তিনি আরও ব্যাখ্যা করেছেন, যখন কেউ কোনও কিছুর দিকে তাকাতে পারে এবং মন যা জানে তার বাইরেও কেউ নতুন জিনিস আবিষ্কার করতে এবং বোঝার বিকাশ করতে পারে।.কবি কবীর হুমায়ূন এর এই কবিতাটি যেন একই চিন্তাধারার প্রতিবেদন।
"মানুষের মন অন্ধ যখন;
নয়ন তখন অর্থবিহীন।
চেতনাবিহীন ভাবনার তলে
সারা দেহ তার হয় যে অসাড়,
পঙ্গুতা পায় দেহমনখানি।"


অত্যন্ত সুন্দর,চারু ও রমণীয় ভাষায় তিনি এই কবিতাটি আসরকে উপহার দিয়েছেন।


জ্ঞান অর্জন ও অধ্যয়ন এর সময় শিক্ষকদের উচিত এই কথাটি ছাত্রদের মস্তিষ্কে প্রবেশ করিয়ে দেয়া।চিকিৎসা শাস্ত্রে একটা খুব প্রচলিত কথা আছে "ক্লিনিক্যাল আইজ", অর্থাৎ যার যত বেশি ক্লিনিকাল চোখ থাকবে সে ততো ভালো রোগের চিকিৎসা করতে পারবে।চিকিত্সা অনুশীলনকারী অবিস্মরণীয় করতে ক্লিনিকাল লক্ষণ এবং চিহ্নগুলি যিনি যত বেশি মনের মধ্যে অনুধাবন করবেন, তিনি ততো বেশি চিকিৎসক হিসেবে সফলতা অর্জন করবেন।ঠিক একই ভাবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শুধু চোখ দিয়ে নয়, মনের গভীরে নিজ নিজ বিষয়কে প্রবেশ করাতে  পারবেন তিনি ততই হবেন ভালো কবি, ভালো সাহিত্যিক, ভালো ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি। একটা সুন্দর কবিতা লিখতে গেলে অনেকগুলো সুন্দর কবিতা বারবার পড়ে তার প্রতীতি শুধুমাত্র চোখ দিয়ে নয়,মনের অনুভূতির দ্বারা গ্রহণ করে অনুভূতিতে প্রবেশ করিয়ে নিরূপণ করাতে পারলে, সাধনার দ্বারা একটা এই ধরণের ভালো কবিতা লেখা যায়।অর্থাৎ শুধু visualization নয়, চাই realization ও determination .  সম্ভবত এটি 'দেখার' এবং 'দেখার' মধ্যে পার্থক্য। লক্ষ লক্ষ মানুষ অবশ্যই লক্ষ লক্ষ আপেল গাছ থেকে পড়ে থাকতে দেখেছিল, কিন্তু এটি নিউটনই ছিলেন 1666 সালে এই ঘটনায় মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দেখেছে। আর্কিমিডিস, তাঁর মতো লক্ষ লক্ষ ব্যক্তির মতো, যা একটি নিত্যনৈমিত্তিক কাজ হিসাবে বিবেচিত হয় তার জন্য স্নানের টবে প্রবেশ করেছিলেন, কিন্তু উচ্ছ্বাসের তত্ত্ব এবং বস্তুর পরিমাণ পরিমাপের সঠিক উপায় নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিল, কারণ তাঁর দেহ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের পানিকে বাস্তুচ্যুত করেছিল। এই জাতীয় সমস্ত ব্যক্তি যারা আমাদের অগ্রগতিতে অবদান রেখেছেন তাদের একটি জিনিস মিল রয়েছে, মন যে জিনিসগুলি জানে না সেগুলি দেখার জন্য চোখ। সহজ ভাষায়, এটি পর্যবেক্ষণের শক্তি।
আমাদের প্রিয় কবির ভাষায়।......
"আলোর ঝলক
পৌঁছে না কভু মননের ঘরে,
রুদ্ধ-আগল তার চারিধারে।
অসুর শক্তি শুধু তড়পায়,
এলোমেলো নাচে নিকষ আঁধারে।


এই কবিতাটি একটি অতি পরিশালিত ও সঠিক পর্যবেক্ষণের ফসল। এরকম একটি কবিতা উপহার দেবার জন্যে কবিকে জানাই আমার অভিনন্দন।


আসরের সবাই বন্ধু বান্ধব ও পরিবার সহ সবাই সুস্থ থাকুন এই কামনা করি।