ভূত চতুর্দশী বা নরক চতুর্দশী (প্রথম পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে - লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
তথ্যসূত্রঃ এই সময় পত্রিকা


ধনতেরাসের পরের দিন পালিত হয় নরক চতুর্দশী বা ভূত চতুর্দশী। আজ নরকচতুর্দশী বা ভূত চতুর্দশী। এই তিথিতে অকালমৃত্যুর ভয় ও নরক যাতনা থেকে মুক্তি পেতে যমের পুজো করা হয়ে থাকে। এই তিথিতে রাশি অনুযায়ী পুজো ও মন্ত্র জপ করলে শুভ ফলাফল পাবেন। তার পাশাপাশি ভূত চতুর্দশীতে দীপদানের প্রথা রয়েছে। এ দিন কোথায় কটি প্রদীপ জ্বালাবেন জেনে নিন।



ধনতেরসের দ্বিতীয় দিনে ভূত চতুর্দশী বা নরক চতুর্দশী পালিত হয়। এ দিন যমের পুজো ও দীপদান করার প্রথা রয়েছে। এ বছর ১১ নভেম্বর সন্ধ্যাবেলা যমের পুজো ও দীপদান করা হবে। শাস্ত্র মতে অকালমৃত্যুর ভয় থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য এই তিথিতে দক্ষিণ দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে তিল-জল দিয়ে যমকরাজের তর্পণ করা উচিত। পুরাণ অনুযায়ী এই তিথিতে যমের ১৪ নাম নিয়ে তাঁকে নমস্কার করলে নরক ভোগ করতে হয় না। মদন পারিজাত নামক গ্রন্থে যমরাজের যে ১৪ নামের উল্লেখ পাওয়া যায়, তা হল--


যমায় ধর্মরাজায় মৃত্যবে চান্তকায় চ,
বৈবস্বতায় কালায় সর্বভূতক্ষয়ায় চ।
ঔদুম্বরায় দধ্নায় নীলায় পরমেষ্ঠিনে,
ব্রকোদরায় চিত্রায় চিত্রগুপ্তায় বৈ নমঃ।।



নরক চতুর্দশীতে রাশি অনুযায়ী পুজো ও দীপদান করলে অকালমৃত্যুর ভয় দূর হয়। এই তিথিতে কোন রাশির জাতকরা কী ভাবে পুজো করবেন ও কোথায় কটি প্রদীপ জ্বালাবেন, তা বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।


মেষ ও বৃষ রাশি


ভূত চতুর্দশীতে বজরংবলীর পুজো করবেন মেষ রাশির জাতকরা। হনুমান মন্দিরে গিয়ে চামেলির তেলের প্রদীপ জ্বালান। তার পর হনুমান চালিসা পাঠ করুন। এর ফলে অকালমৃত্যুর ভয় দূর হবে। এই তিথিতে আপনারা নর্দমা ও রান্নাঘরে দুটি করে প্রদীপ জ্বালাবেন।


ভূত চতুর্দশীর দিনে বৃষ রাশির জাতকরা কালী মন্দিরে গিয়ে পুজো দিন। রাতের বেলায় কালি মন্দিরে গিয়ে তেলের প্রদীপ জ্বালান এবং ওম এং হৃীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চৈঃ মন্ত্রটি ১০৮ বার জপ করুন। এর প্রভাবে যমের ভয় থেকে মুক্তি পাবেন। আপনারা নর্দমায় ২টি ও বাড়ির প্রবেশদ্বারে তিনটি প্রদীপ জ্বালান।

মিথুন ও কর্কট রাশি


এই তিথিতে মিথুন রাশির জাতকরা যমের পুজো করে ওম সূর্যপুত্রায় বিদ্মহে, মহাকালায় ধীমহি। তন্নো যমঃ প্রচোদয়াৎ মন্ত্র জপ করুন। এর প্রভাবে যমের আশীর্বাদ পাবেন ও অকালমৃত্যুর ভয় দূর হবে। মিথুন জাতকরা ঘর, নর্দমা ও প্রবেশদ্বারে তিনটি করে প্রদীপ জ্বালান।


অন্য দিকে কর্কট রাশির জাতকরা দক্ষিণ দিকে যমের প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করুন। এ ছাড়াও অশ্বত্থ গাছে প্রদীপ জ্বালিয়ে ওম মাং যমায় প্রেতাধিপতয়ে দণ্ড হস্তায় মহিষ বাহনায় সায়ুধায় সপরিবারায় নমঃ মন্ত্র জপ করা উচিত। এর প্রভাবে নরকযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এ ছাড়াও কর্কট জাতকরা এক লোটা জল নর্দমায় ঢেলে একটি প্রদীপ জ্বালান। এর পর প্রবেশদ্বারে পাঁচটি প্রদীপ জ্বালাবেন।


সিংহ ও কন্যা রাশি


নরক চতুর্দশীর দিনে সিংহ রাশির জাতক-জাতিকারা বজরংবলীর পুজো করে ওম রামদূতায় নমঃ মন্ত্র জপ করুন। এর ফলে সমস্ত ধরনের সংকট থেকে মুক্তি পেতে পারেন এই রাশির জাতক। ভূত চতুর্দশীর দিনে নর্দমা ও প্রবেশদ্বারে একটি করে প্রদীপ জ্বালান।



কন্যা রাশির জাতকরা এই তিথিতে যমের পুজোর পাশাপাশি গণপতির পুজো করুন। তার পর ওম গং গণপতয়ে নমঃ মন্ত্র জপ করে যমের উদ্দেশে প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করুন। এর ফলে জীবনে প্রচুর সুখ-সমৃদ্ধি লাভ করতে পারবেন। এ ছাড়াও কন্যা জাতকরা নর্দমায় ২টি ও বাড়ির বাইরে তিনটি প্রদীপ জ্বালাবেন।


তুলা ও বৃশ্চিক রাশি


ভূত চতুর্দশীতে আপনারা অবশ্যই লক্ষ্মীর পুজো করবেন। তার পর ওম হৃীং শ্রীং ক্লীং অর্হ নমঃ মহালক্ষ্ম্যৈ ধরণেন্দ্র পদ্মাবতী সহিতে হূং শ্রী নমঃ মন্ত্র জপ করুন। আপনারা বাড়ির নর্দমায় ১টি ও প্রবেশদ্বারে চারটি প্রদীপ জ্বালান।


বৃশ্চিক জাতকরা হনুমান মন্দিরে পুজো দিন ও চামেলির তেলের প্রদীপ জ্বালান। এর পর ওম রামদূতায় নমঃ মন্ত্র জপ করুন। এর ফলে প্রভাবে জীবনের সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। আপনারা নর্দমা ও প্রবেশদ্বারে দুটি করে প্রদীপ জ্বালাবেন।


ধনু ও মকর রাশি


এই তিথিতে ধনু রাশির জাতকরা অবশ্যই কৃষ্ণের পুজো করবেন। এর পর ওম শ্রীং নমঃ শ্রীকৃষ্ণায় পরিপূর্ণতমায় স্বাহা মন্ত্র জপ করবেন। এই রাশির জাতকরা প্রবেশদ্বারে দুটি ও বাড়ির নর্দমায় ১টি প্রদীপ জ্বালান।


অন্য দিকে মকর রাশির জাতকরা নরক চতুর্দশীর দিনে সূর্যোদয়ের আগে বজরংবলীর পুজো করে নিন। আপনারা ওম হং হনুমতে নমঃ মন্ত্র জপ করবেন। এর পাশাপাশি ৩টি প্রদীপ নর্দমা ও ৫টি প্রদীপ প্রবেশদ্বারে জ্বালাবেন।


কুম্ভ ও মীন রাশি


কুম্ভ রাশির জাতকরা নরক চতুর্দশীর সন্ধ্যাবেলায় কালীর পুজো করুন। তার পর ওম ক্রীং কালিকে স্বাহা মন্ত্র জপ করুন। এর ফলে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এই রাশির জাতকদের বাড়ির নর্দমায় ২টি ও দরজার পাশে ২টি প্রদীপ জ্বালানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।


এই তিথিতে মীন রাশির জাতকরা বিষ্ণুর আরাধনা করুন। ওম নমো ভগবতে বাসুদেবায় নমঃ মন্ত্র জপ করবেন। এর ফলে বিষ্ণু ও লক্ষ্মীর আশীর্বাদ লাভ করতে পারেবন। এ ছাড়াও মীন জাতকদের ৩টি প্রদীপ নর্দমা ও ৫টি প্রদীপ প্রবেশদ্বারে জ্বালানো উচিত।


ভূত চতুর্দ্দশী কবিতা
কলমে-কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


ভূত চতুর্দ্দশী আজি শুন সর্বজন,
ভূতের বৃত্তান্ত কথা করিব বর্ণন।
মেছোভূত গেছোভূত ভূতের সর্দার,
বেঁটে ভূত মোটাভূত শাকচুন্নি আর।


ব্রাহ্মণের অপঘাতে মৃত্যু যদি হয়,
মরে ব্রহ্মদৈত্য হয়ে পুনঃ জন্ম লয়।
মুসলিম যদি কেউ মরে অপঘাতে,
মহম্মদ ভূত হয়ে ঘুরে মাঝরাতে।


অবিবাহিতা কুমারী অপঘাতে মরে,
অতৃপ্ত বাসনা নিয়ে ঘোরাফেরা করে।
পেত্নীরা শ্যাওড়াগাছে ডালে বাঁধে বাসা,
অন্ধকার রাতে ঝুলে, নাহি পূরে আশা।


বিবাহিতা নারী যদি অপঘাতে মরে,
শাকচুন্নি হয়ে তারা শাঁখা পলা পরে।
ভূত হয় মোর পূত পেত্নীরা হয় ঝি,
লক্ষ্মণ লিখিল কাব্যে ভূত চতুর্দ্দশী।