মহাশক্তির আরাধনায় দুর্গা দেবীর বন্দনা
শ্রী শ্রী মহাঅষ্টমী পূজা (পৌরাণিক কাহিনী)
তথ্য সংগ্রহ ও কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


শ্রী শ্রী দুর্গা মহাঅষ্টমী পূজার বিশেষত্ব হল সন্ধিপূজা অষ্টমী ও নবমী তিথির মিলনক্ষনে সন্ধিপূজা। মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী পেরিয়ে আজ দুর্গাপুজোর মহা অষ্টমী পূজা। যত কাজই থাকুক না কেন, বাঙালি এই দিন ঠাকুরের সামনে নতুন জামা-কাপড় পরে অষ্টমীর অঞ্জলি দেবেই। মন্ত্রপাঠ করে সকলেই দেবীর চরণে ফুল, বেলপাতার অঞ্জলি দান করেন।


মহাস্নান শেষে অষ্টমী পূজা করা হয়। মহাষ্টমীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ হল ‘কুমারী পূজা’। যেখানে একজন কুমারীকে দেবী দুর্গারূপে আরাধনা করা হয়। যেসব বালিকারা বয়:সন্ধিতে পৌঁছায়নি এদিন সকালে তাদের দেবীরূপে পুজো করা হয়। ১৬টি উপকরণ দিয়ে পূজার সূত্রপাত হয়। শুরুতেই গঙ্গাজল ছিটিয়ে কুমারী মা-কে শুদ্ধ করে তাঁর চরণযুগল ধুয়ে তাঁকে বিশেষ অর্ঘ্য প্রদান করা হয়।


অর্ঘ্যের শঙ্খপাত্রকে সাজানো হয় গঙ্গাজল, বেল পাতা, আতপ চাল, চন্দন, পুষ্প ও দূর্বাঘাস দিয়ে। দেবীর গলায় পরানো হয় পুষ্পমাল্য। এরপর অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বাতাস- এই পাঁচ উপকরণ দেওয়া হয় ‘কুমারী’ পূজাতে। বয়স অনুযায়ী এদের নাম হয়ে থাকে সন্ধ্যা, সরস্বতী, ত্রিধামূর্তি, কালিকা, সুভগা, উমা, মালিনী, কুব্জিকা, অপরাজিতা, কালসন্দর্ভা, রুদ্রানি, ভৈরবী, মহালক্ষ্মী, পীঠনায়িকা, ক্ষেত্রঞ্জা ও অম্বিকা। এ ১৬টি নামে এরা বয়স অনুযায়ী পূজিত হয়।


অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিস্থলে করা হয় সন্ধি পূজা। মহাষ্টমীর সন্ধ্যায় ১০৮টি প্রদীপ জ্বালিয়ে সন্ধি পূজা করা হয়। কথিত আছে, মহিষাসুর বধের সময় সন্ধির এই ক্ষণেই দেবী দুর্গা চামুণ্ডা বা কালীমূর্তির রূপ ধারণ করেছিলেন। সন্ধি কথার অর্থ হল ‘মিলন’। অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমী তিথির শুরুর ২৪ মিনিট, মোট ৪৮ মিনিটের মধ্যে শেষ করতে হয় সন্ধিপুজো। এই দুই তিথির মহামিলনের সময়কে ‘মহাসন্ধিক্ষণ’ বলা হয়। এই পুজো করার অর্থ হল রাগ, অভিমান সব ভুলে একসঙ্গে থাকা।


শারদীয়া দুর্গাপূজা জাতীয় জীবনে সর্বাঙ্গীন। তাই বাংলা কবিতা আসরের সকল  কবি ও সহৃদয় পাঠকবৃন্দকে জানাই শারদীয়া দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা। বাংলা কবিতার জয় হোক, কবিগণের জয় হোক। জয়গুরু!!!


মহাশক্তির আরাধনায়  দেবী বন্দনা
শ্রী শ্রী মহাঅষ্টমী পূজা (তৃতীয় পর্ব)
কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


মহা অষ্টমীর পূজা বিদিত ভুবনে,
অষ্টমী বিহিত পূজা হয় শুভক্ষণে।
শঙ্খঘন্টা ধূপদীপ প্রসাদের থালা,
সম্মুখে মঙ্গল ঘট তাহে ফুলমালা।


সুগন্ধি চন্দন আর ধূপ দীপ মালা,
ফলমূল মিষ্টিদ্রব্য প্রসাদের থালা।
অষ্টমীর সন্ধিপূজা বিহিত বিধান,
অষ্টোত্তর শত নীল কমল প্রদান।


অষ্টমীতে উপবাস সারাদিন ধরে,
পুরোহিত মন্ত্রপাঠ করে ভক্তিভরে।
পুষ্পাঞ্জলি দেয় সবে উপবাসীগণ,
শক্তি আরাধনা করে মঙ্গল কারণ।


ঢাকীরা বাজায় ঢাক উচ্চ কলরবে,
পূজার মণ্ডপে নাচে শিশুবৃদ্ধ সবে।
সন্ধিক্ষণে হয় পূজা সন্ধিপূজা কয়,
অষ্টমীর সন্ধিপূজা বিধি মতে হয়।


সন্ধিক্ষণে দিতে হয় ছাগ বলিদান,
পশুরক্তে দেবীপূজা না হয় বিধান।
শোন শোন বিশ্ববাসী আমার বচন,
বলিহীন হোক পূজা কহিছে লক্ষ্মণ।