মহাশক্তির আরাধনায় দেবী বন্দনা
শ্রী শ্রী মহাদশমী (পৌরাণিক কাহিনী)
কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


আজ বিজয়া দশমী। পিতৃগৃহ ছেড়ে উমা এবার ফিরে যাবেন কৈলাশে স্বামী মহাদেবের কাছে। তাই মর্ত্যবাসীর মন খারাপ। দুর্গাপুজোর এই শেষ দিনটিকে দশমী বা বিজয়া দশমী বলা হয়ে থাকে। কেন দশমীকে বিজয়া দশমী বলা হয়, তাই এখন জেনে নেব আমরা।


পৌরাণিক মত


পুরাকালে মহিষাসুর নামে এক অসুর ব্রহ্মার বর পেয়ে প্রবল ক্ষমতাশালী হয়ে স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল দখল করে নেন। তিনি দেবরাজ ইন্দ্রকে স্বর্গ থেকে বিচ্যুত করেন। ব্রহ্মা তাঁকে বর দিয়েছিলেন যে কোনও পুরুষ তাঁকে হত্যা করতে পারবেন না। তবে কোনও নারী তাঁকে বধ করতে পারবেন না, এমন পর দেওয়া হয়নি। তখন সব দেবতার সম্মীলিত শক্তি থেকে আবির্ভূত হলেন দেবী দুর্গা। পুরাণে মহিষাসুর বধের কাহিনী অনুসারে টানা নয় দিন ও নয় রাত্রি যুদ্ধের পর শুক্লা দশমীতে দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেন। এই বিজয় লাভকেই বিজয়া দশমী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।


রামায়ণ অনুসারে


ত্রেতা যুগে লংকার রাজা রাবণ শ্রীরামচন্দ্রর পত্নী সীতাকে অপহরণ করেছিলেন। দেবী দুর্গার আশীর্বাদ নিয়ে রাম স্ত্রীকে উদ্ধার করতে লংকা আক্রমণ করেন। শুক্লা দশমীতেই তিনি রাবণকে বধ করেন। রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রামের জয়লাভকেও চিহ্নিত করে বিজয়া দশমী।


মহাভারত অনুসারে


মহাভারতেও এই বিশেষ তিথিটির উল্লেখ রয়েছে। ১২ বছর বনবাস ও এক বছর অজ্ঞাতবাসের শেষে পাণ্ডবরা আশ্বিন মাসের শুক্লা দশমীতেই একটি শমীগাছের কোটরে তাঁদের লুকনো অস্ত্র পুনরুদ্ধার করেন এবং নিজেদের পরিচয় ঘোষণা করেন।


বৌদ্ধ ধর্ম মতে


অনেকে মনে করে বিজয়া দশমীর আসল নাম অশোক বিজয়া দশমী। কলিঙ্গ যুদ্ধে জয়ের পর ১০ দিন ধরে মৌর্য সম্রাট অশোক বিজয় উত্সব পালন করেছিলেন, সেটিই অশোক বিজয়া দশমী। আর শুক্লা দশমীতেই তিনি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তাই বৌদ্ধদের কাছেও এই দিনটি গুরুত্বপূর্ণ।


বিজয়া দশমীর তাত্‍পর্য


আবার অনেকে মনে করেন দেবীকে মাটির প্রতিমা থেকে মুক্তি দেওয়া হয় এদিন। সেই কারণেই এটি বিজয়া দশমী নামে পরিচিত। চার দিন ধরে চিন্ময়ী দেবীকে যে মৃন্ময়ী রূপে পুজো করা হয়, দশমীতে বিসর্জনের পর তার থেকে মুক্তি পান দেবী দুর্গা। শারদীয়া দুর্গাপূজা জাতীয় জীবনে সর্বাঙ্গীন। তাই বাংলা কবিতা আসরের সকল  কবি ও সহৃদয় পাঠকবৃন্দকে জানাই শারদীয়া দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা। বাংলা কবিতার জয় হোক, কবিগণের জয় হোক। জয়গুরু!!!


মহাশক্তির আরাধনায় দেবী বন্দনা
শ্রী শ্রী মহাদশমী পূজা (পঞ্চম পর্ব)
কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


মহা দশমীর পূজা মহা ধূম ধাম,
ছোটরা বড়রে করে বিজয়া প্রণাম।
দশমী বিহিত পূজা হয় বিধি মতে,
শঙ্খঘণ্টা ঢাক বাজে কাঁসর সহিতে।


মন্দিরেতে পুরোহিত মন্ত্রপাঠ করে,
একসাথে পুষ্পাঞ্জলি দেয় ভক্তিভরে।
শঙ্খধ্বনি উলুধ্বনি মহা কোলাহল,
প্রতিমা বরণ করে রমণী সকল।


একত্রে সিঁদুর খেলা দেবী বিসর্জন,
মর্ত্য হতে দেবীমার কৈলাশে গমন।
পূর্বাহ্নে রাবণ জ্বলে বাজি পুড়ে কত,
জন সমাগমে ভিড় জমে অবিরত।


বাঙালীর দুর্গাপূজা খুশির বাহার,
একটি বছর তরে প্রতীক্ষা আবার।
বিজয়া দশমী কাব্য হল সমাপন,
কবিতায় লিখে কবি শ্রীমান লক্ষ্মণ।