জাবেদ একটা নতুন টিউশন পেল। পরিচয় পর্বে ছাত্রের মা খুব করে বলে দিল ছাত্রটি বেশ দুষ্টু। আদর করে পড়াতে হবে। ধমক দেয়া যাবে না। সময়টা ঠিক করা হল। জাবেদ কলেজ থেকে যাবার পথে তিনটা থেকে সাড়ে চারটা পড়িয়ে যাবে। পরের দিন পড়াতে এল। খুব ভালো লাগল। ছাত্র মেধাবী। বেশি কষ্ট করতে হলো না। নাম জসীম। আধ ঘন্টা পর চা নিয়ে এল এক চমৎকার মেয়ে। হঠাৎ কেমন একটা আচ্ছন্নতা তাকে ঘিরে ফেলল। মেয়েটা খাবার রেখে কখন চলে গেছে খেয়ালই করে নি। চা-টা বেশ সুস্বাদু হয়েছে। সে জসীমকে জিজ্ঞেস করল চা কে বানায়। জসীম বলল তার নাজমা আপা। তার এস এস সি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তাই এখন ফ্রি। বাসায় থাকে। কিছুক্ষণ পর নাজমা এল ট্রে-টা নিয়ে যেতে। ইচ্ছে করেই জাবেদ একবারও তাকাল না ওর দিকে। চলে যাওয়ার সময় শুধু দেখল তার চুল সিল্কের কালো কাপড়ের মতো পিঠের ওপর ছড়িয়ে আছে। মন কাড়া সুন্দর একটি মিষ্টি মেয়ে। সাড়ে চারটায় বেরিয়ে এল জাবেদ। সারাটা পথ তার মনে হল তাকে আরো প্র্যাকটিক্যাল হতে হবে।


জসীমকে গোসল করিয়ে দিয়ে নাজমা বাথরুমে ঢুকল গোসল করতে। সাওয়ার ছেড়ে দিয়ে মাথায় একটি বিদেশী সেম্পুর খানিকটা মেখে নিল। ভেতরের আয়নায় ফেনা মাখা নিজের মুখও কেমন অচেনা মনে হচ্ছে। সে কি যথেষ্ট সুন্দর নয়। তাহলে জসীমের স্যার অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ছিল কেন। প্রথম যেদিন এসেছে সেদিনই মনে হয়েছে ও আমার জন্য এসেছে। ওকে দেখে বুকের ভেতর কেমন একটা অনুভূতি হয়েছিল। কি সুন্দর কথা বলে। হাসিটায় একটা মায়া আছে। পরের দিন চা বানাতে গিয়ে বারবার মনে হচ্ছিল যদি ভালো না হয়। ও জসীমকে বলেছে চা ভালো হয়েছে। অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। কিন্তু দেখে মনে হয় ইন্টারে পড়ে। জসীমকে যখন পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছিল তখন মনে হচ্ছিল বিশ্বের সব জ্ঞান আল্লাহ ওর মাথায় দিয়েছে। জসীমের কপাল ভালো। এমন একটা টীচার পেয়েছে। একটুও রাগ করে না। অপ্রয়োজনে একটা কথাও বলেনা। দুবার গেলাম। একবারও জিজ্ঞেস করল না আমার নাম কি। গোসল সেড়ে বের হয়ে চুল শুকাতে দিয়ে সে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসল। আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে নিজে বলতে লাগল- নাজমা অত সহজ নয়। ছেলেটা তোমাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। এর চেয়ে বড় অপমান তোমার আর কি হবে। তোমার এতদিনের সব ধারণা ভুল হয়ে যাচ্ছে। নাজমার মাথাটা ব্যাথা করছে। মাইগ্রেনের সমস্যা আছে। কিছুক্ষণ চশমা পড়লে কমে যায়। সে চোখ বন্ধ করে ড্রইং রুমের সোফায় বসে আছে। তিনটা বাজল। জাবেদ আসছে না কেন। তিনটা পাঁচ। কলিং বেলের আওয়াজ। নাজমা দরজা খুলে দিল। ভেতরে গিয়ে জসীমকে পাঠাল। ফ্রিজে কোল্ড ড্রিংক্স আছে। একটা ছোট বিস্কিটের প্যাকেট আর ড্রিংক্স দিয়ে এল। ব্যাথাটা বাড়ছে। শুয়ে পড়ল বিছানায়। আম্মা এসে যখন মাথায় হাত দিয়ে দেখল তখন বেশ জ্বর।


নাজনীন সাখাওয়াৎ সকাল থেকে রান্নাঘরে ব্যস্ত। মেয়েটার জ্বর কমেনি। আজকে শুক্রবার। কোথাও তেমন কোন ডাক্তার বসবেনা। তিনি বোঝেন না ডাক্তারের আবার শুক্রবার কি। রোগ কি শুক্রবারে হবে না বলেছে। এখন ডাক্তাররাও এক একজন ব্যবসায়ী হয়ে গেছে। গেলেই কয়েকটা টেস্ট করাতে দেবে। রিপোর্ট দেখে বলবে তেমন কোন সমস্যা নাই। অবশ্য ভয় ছিল। বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু এসব হচ্ছেতো চারিদিকে। তাই টেস্টগুলো করালাম। এখন নিশ্চিন্ত। পুরো ব্যবসা। ভিজিটও নিবে। ল্যাব থেকে কমিশনও পাবে। আটটা বাজে। মানুষটা এখনো ফোন করছে না কেন। শুক্রবারে এ সময় সাখাওয়াৎ সাহেব ফোন করেন। সবার সাথে কথা বলেন। আজ কোন কারণে দেরি হচ্ছে। নাজনীনের মনে হল গতকাল মেয়ের অসুখের কথা একবার ফোন করে জানাতে পারতেন। আবার ভাবল মানুষটা বাইরে থাকে। টেনশেন করবে। তাছাড়া ভেবেছিল জ্বরটাও সেড়ে যাবে। এখন মনে হচ্ছে জানানো দরকার ছিল। সংসারের দায়িত্ব কি শুধু তার একার। বাবা হিসেবে তার কি কোন দায়িত্ব নেই। মোবাইলটা বাজছে। জসীম গেছে ধরতে। ও জানে এ সময় ওর আব্বা ফোন করে। নাজনীন ভাবছে ওকে কি একবার আসতে বলবে। কেন জানি খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করছে।


আজকে জসীমকে নিয়ে আম্মু চাচার বাসায় গেছে। দুপুরে নিমন্ত্রন। বিকেলে চাচার মেয়ে শারমিনকে বরপক্ষের লোকজন দেখতে আসবে। আম্মুরা একদম রাতের খাবার খেয়ে তবে আসবে। নাজমাকে যেতে বলেছিল। নাজমা বলল ওসব বাইরের লোকের সামনে গিয়ে নিজেকে প্রেজেন্ট করা তার সেকেলে মনে হয়। তার চেয়ে ঘরে বসে একটা উপন্যাস শেষ করা অনেক ভালো। ওরা বেরুল একটার সময়। নাজমার মাথায় আজ ভুত চেপে আছে। আজকে তাকে পুরো সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে। একটুও ভুল করলে চলবে না। জাবেদ একটু দেরি করে এল। দরজা খুলে দিল নাজমা। শরবত তৈরি ছিল। নাজমা গিয়ে নিয়ে এল। জাবেদ জিজ্ঞেস করলো -জসীম কই। নাজমা বললো- আম্মু আর জসীম চাচার বাসায় গেছে। - তাহলে আমি যাই। -আমাকে একটু পড়াও না। -কি পড়াব। -এই যে কেমন করে ভালবাসতে হয়। -সেতো তুমি আমার চেয়ে ভালো জানো। -তাহলে একটা পরীক্ষা হোক। তারপর জাবেদকে জড়িয়ে ধরে বলল- আমি তোমাকে ভালবাসি জাবেদ। দুর্দমনীয় ভালবাসার আহ্বান কে কবে রোধ করতে পেরেছে। তাই জাবেদও বলল -আমিও তোমাকে ভালবাসি নাজমা। অনেকক্ষন পরষ্পরকে জড়িয়ে ধরে কেটে গেল। আযানের ধ্বনিতে তাদের চেতনা হল। তারা ঠিক করলো নামাজ পড়বে। আর তাদের ভালবাসাকে কবুল করার জন্য মহান রাব্বুল আল আমিনের কাছে দোয়া চাইবে।