ছোটবেলায় প্রচুর ঘুড়ি ওড়াতাম। সুতোয় মাঞ্জা দিতাম ।
প্রথমে সহকারী, পরে নিজেই টিপ ধরতাম ।
সুতো ছেড়ে ঘুড়ি ওড়ানোয় যে কী আনন্দ ।
ছোটবোন বা পাড়ার কোন কাচ্চাবাচ্চা ধরাই দিত।
হাওয়া না থাকলেও টাংকি মেরে মেরে
ঘুড়ি টাকে হাওয়ার রাজত্বে নিয়ে যাওয়ার বিদ্যে আয়ত্ত করায়
রাজ্যজয়ের উল্লাস মেশা।
ক্রমশঃ দূরে আরও দূরে , উঁচুতে আরও উঁচুতে নিয়ে যাওয়া ।
তারপর সময় মত গোঁত্তা মেরে
অন্য ঘুড়িকে টেনে বার করে দেওয়ার জান্তব আহ্লাদ !
এক অনাস্বাদিত চরম তৃপ্তি ।
ঘুড়ি যে না উড়িয়েছে সে এ আনন্দ বুঝবে না।
একদম মাচো শৌর্য বীর্যের বিজ্ঞাপন ।
দিনের পর দিন খেটে খুটে সুতোটাকে প্যাঁচ খেলার জন্য তৈরি করা,
ট্রায়াল দিতে প্র্থম দিকে অল্প বেড়ে লেটে খেলা ।
ফাঁক বুঝে তারি মাঝে টেনে দেওয়া।
কাটা ঘুড়ির দিকে আড়ে দেখে
চুল ঠিক করার ছলে
পাশের বাড়ির রুবীর দিকে এক ঝলক ।
ওয়াও !
উল্টোটাও হয়। নিজের প্রতিটা কাটা পড়ায়
মিশে থাকে পরাজয়।


এই পুরো সময়টা আমি কখন লাটাই ধরিনি।
ওসব এলেবেলে কাজ মেয়েরাই করে।
আমার বোন বা পাড়ার কাচ্চাবাচ্চা রা ।
ওরাই লাটাই ছাড়ত বা গুটোত।
আমি কখনও জয়ের আনন্দে তৃপ্ত;
কখনও পরাজয়ের গ্লানিতে মূহ্যমান ।
এভাবেই সময় ...।


এখন যখন আমার বেলা পরে এলো,
আমি ঐ লাটাই ধরা ও ছাড়ার গুরুত্ব বুঝতে শিখেছি ।
মাঝে মাঝে এর তার ঘুড়ি ওড়ানয় লাটাই ধরি।
ক্রমশঃ অন্যান্য অধীত বিদ্যার মত লাটাই ধরা ও ছাড়া এখন সহজ।
ইচ্ছে হল নিজের হাতে লাটাই নিয়েই এবার তবে ওড়াই ।
প্যাঁচ খেলতে গিয়ে কিন্তু এখন প্রতিবারই আমার ঘুড়ি কেটে যায়।
হাতের সে জোর আর নেই।
পরাজয়ে প্রথমে জেদ পরে দুখ্খু বাড়ে ।
আমি ভাবি ।
একজন দক্ষ ঘুড়ি উড়িয়ের তো এর'ম হওয়ার কথা নয় ।
সমস্যাটা কোথায় ?
হঠাৎ খেয়াল হোল।
অনেক দিনের পুরোনো মাঞ্জায় সে জোর কোথায় ?
ঠিক সময়ে গোঁত্তা দেওয়ার কায়দাও ভোঁতা হয়ে এসেছে।
তাই যতই কেন এখন হাতে নি লাটাই,
শেষ পর্যন্ত আমার ঘুড়ি পড়বে কাটাই ।