এই তো সেদিন
সারাদিনের ক্লান্তি শরীর ও মনে
আঁকড়ে ধরেছিল চিটা গুড়ের মতো।
এমন অবস্থা হলে রাতে ঘুম আসে কি সহজে?
ঘুমতে যাওয়ার আগে চেষ্টা করেছি সেসব ছাড়াতে।
কিন্তু রাত গভীর হলো তবু ঘুম এলো না।
বুঝেছি মগজে অজস্র ভাবনা
কাঁকড়াবিছার মতো আঁকড়ে ধরেছে
চেষ্টা করেছি দেহ-মন থেকে ওদের ছাড়িয়ে
দূরে নিক্ষেপ করে একটু শান্তিতে ঘুমতে।
কিন্তু সে আর হলো কৈ?
নিরুপায় হয়ে পায়চারীও করেছি ঘরের মেঝেতে
ঘুমের ঔষধ ও সেবন করেছি
বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ গড়াগড়ি, সেও!
যদি অনিদ্রা পালিয়ে যায়, স্বস্তিতে একটু ঘুম আসে!
বলি, বিছা কামড়ে ধরলে ছাড়ে কি সহজে?
হলো তাই, কিছুতেই ঘুম এলো না।
মনে হলো যা ভেবেছিলাম সব মিছে!
সব প্রচেষ্টা যেন হার মেনেছে।
শেষে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি, কে জানে!
শেষ রাতে স্বপ্ন দেখে তো অবাক!
যা দেখেছি সে তো মহাভারতের কাহিনী।
দেখেছি চলছে শ্রী কৃষ্ণ ও অর্জুনের কথোপকথন
বললেন শ্রী কৃষ্ণ তাঁর বন্ধু কৌন্তেয় পার্থকে
'শোনো, ছড়িয়ে পড়েছে তোমার নাম বিশ্ব-ভুবন
এমন দোর্দণ্ডপ্রতাপ ধনুর্বেদের নাম জানে না ক’জন?
এখন চারদিকে চলছে তোমাকে নিয়ে আলোচনা।
একটু কান পেতে শুনতে পারো সকলে বলছে কী।
পার্থ, বলবো কী আর তুমি এমনি ধনুর্বেদ
স্বয়ংবর সভায় অভ্রান্ত লক্ষ্য ভেদে সমর্থ হয়ে
পাঞ্চাল রাজকন্যা ধ্রুপদীরও করলে মন হরণ,
শৌর্য বীর্যে তুমি এমনি বলীয়ান
উলুপী ও চিত্রাঙ্গদার মনও করলে জয়।
অকুতোভয় পার্থ, দেখো পাপের ব্যাপ্তি এতো ছড়িয়েছে
এ সময় কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ ছাড়া গত্যন্তর দেখি না।
মনে রেখো,এখন যা ঘটবে সেটি ধর্মযুদ্ধ!
এবার সে যুদ্ধ হবে কুরুক্ষেত্র প্রাঙ্গণে
পাণ্ডব ও কৌরবদের হতে হবে পরস্পরের মুখোমুখি।
প্রস্তুত হও সে যুদ্ধে পাপের সাম্রাজ্য ধ্বংস করতে।
কৌরবদের মহারথীদের বিরুদ্ধে ও করতে হবে যুদ্ধ!
হত্যাও করতে হবে জ্ঞাতি কৌরবদের।
এ কথা শুনে হলো কি?
হাত-পা সহ সর্বাঙ্গ কাঁপছে নাকি?
জেনে রাখো, সবই হবে আমার নির্দেশনায়!
যা ঘটবে সে ক্ষেত্র আগেই প্রস্তুত করেছি রেখেছি
তুমিও উপলক্ষ মাত্র।
তবু জ্ঞাতি কৌরবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অনীহা?
তবে বলতে হয় তোমার বিশ্ব-দর্শন এখনো বাকি।
দেখো সে যুদ্ধে ঘটবে কী!