মলিন বসনে স্বামী পরিত্যক্তা,
কাজে কর্মে অশক্ত? না, সেও না।
কোলে এক দুগ্ধপোষ্য শিশু
গোত্র হারার মতো দিকভ্রান্ত রমণীর
হয়তো পিতৃগৃহেও ঠাই জোটেনি।
যাই হোক সে মহানগরীতে এসে
দুগ্ধপোষ্য শিশুকে দেখভালের অভাবে
বাবুদের বাড়ির কাজ, সেও করতে পারেনি।
মানহানির কথা ভেবে করবে কী?
নিরুপায়, ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়া আর গতি কী?
রোজ ফুটপাথে বসে ভিক্ষা করে
আর দিনান্তে ঠিকানা?
অজানা অপরিচিত কারো বসত বাড়ির
সামনের একখণ্ড অপ্রশস্ত ফুটপাথ।
বরাত জোড়ে সে পড়লো খান্তা পিসির সুনজরে
নিম্ন মধ্যবিত্ত বৃদ্ধা, কতটুকু সাহায্য করতে পারে?
তবু সামর্থ্য নিগড়ে সাহায্যের হাত বাড়ালো
জানা গেল, এইতো সেদিন তার দাক্ষিণ্যে
হতভাগ্য মহিলার বরাতে জুটলো দু’মুঠো পান্তা
খান্তা পিসির হাঁড়ি থেকে পড়ে পাওয়া,
বিগত রাতে বাড়ির সবার খাওয়া দাওয়ার পর
অবশিষ্ট যেটুকু ছিল সেটাই পোষা বিড়ালের সাথে
ভাগবাটোয়ারার পড়ে যা জুটলো,
আর একটু নুন ও একটা কাচা-লঙ্কা
সেও, তার কাছ থেকেই চেয়ে আনা।
বিনা সংকোচে সেটুকু এনে
সেদিন দুপুরে বিধাতাকে সাক্ষী রেখে
হতভাগ্য মহিলা শিশুপুত্রকে কোলে নিয়ে
ন্যুব্জ হয়ে বসলো মানবতার ভগ্ন সেতুর নিচে,
চেটেপুটে খেলো যেটুকু জুটলো
তারপর ঢক ঢক করে জল গিলে
সারলো তার খানাপিনা, তুললো তৃপ্তির ঢেঁকুর!
বিগত দিন থেকে অভুক্ত থাকার পর
এভাবে মেটালো তার মধ্যাহ্ন ভোজ।
শুনি, মানুষের মনে জমাট বেঁধে থাকে
কোনও ব্যক্তি কিবা সমাজের বিরুদ্ধে
কত-না অভিযোগ,
খোঁজ নিয়ে জানলো বৃদ্ধা, এ জীবনে
তার অপ্রাপ্তির বহর নিয়ে
নেই কারো বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ।
হায়রে, বিধাতার এ কী বিচার!
কালের স্রোতে নদীতে ভাসমান কচুরিপানার মতো
শিশুপুত্রকে নিয়ে সেও ভাসছে নিয়ত।