মেঘলা আকাশ, নিথর বাতাস!
ভেবেছি হলো কী? প্রকৃতি নিশ্বাস ও ফেলবে নাকি!
তাকে চেনা দুষ্কর, ঘটাতে পারে কত কী!
অচিরে শুরু হলো মেঘের গুরুগুরু ডাক
পাখপাখালিরা ব্যস্ত হয়ে ফিরলো নীড়ে।
দেখেছি ঠায় দাঁড়িয়ে দুর্যোগের সম্ভাবনা।
সে ঘটনা মনে উস্কে দিলো
মাহেশ রথের মেলায় দুর্যোগের কাহিনী
মনে এলো গভীর অর্থ সংকটে পড়েও
রাধারানী মূল্যবোধ হারায়নি।
জেনেছি দুস্থ সে মেয়ে বেচতে গেলো বনফুলের মালা
বেলা গড়ালো, তবু বেচা গেলো না।
কেউ কিনতে রাজি হলো না।
তার উপর প্রকৃতিও মুখ বেজার করে বসলো
সন্ধ্যা হতেই মুষল ধারায় বৃষ্টি শুরু হলো।
পরের ঘটনা, সে তো সকলের জানা।
তারপর আজ অবধি নানান ঘাত প্রতিঘাতের
মধ্য দিয়ে কেটেছে বহু বছর।
রথ ও উল্টোরথের মেলা? সেও হলো বহুবার।
ভারাক্রান্ত মনে সেদিন ভেবেছি বসে
রাধারানীর মতো দুস্থদের জীবনে
এ দীর্ঘ সময়ে কত পরিবর্তন ঘটেছে!
এক নিঃশ্বাসে মনে এলো বছর বারো আগের ঘটনা
জনগণের মনে ছিল ব্যাপক উদ্দীপনা
কেননা সামনে, হোক সে ভিন্ন চেহারা
তবু সে ও ছিল রথের মেলা।
জীবনরথ ভিন্ন পথে টানতে তারা ছিলো আত্মহারা।
দেখেছি তারা উল্লাসে টানলো রথ
কট কট করে শব্দ হলো রথের চাকায়
তবু তাদের যায়নি রোখা।
ভাবলো, অদেখার ঘেরাটোপে আছে কত কী!
সেসব না দেখলে মন মজে কি?
প্রকৃতি? সে হাসলো অন্তরালে বসে!
অচিরে ধেয়ে এলো ঝড় আইলা, আমফান রুদ্ধশ্বাসে।
জনগণ শুনলো সেই বজ্র-নিদান।
অনেকের জীবন ভেঙ্গে চুরে হলো খান খান।
এখন আবারো নাকি উল্টোরথের সময়
প্রকৃতিও মনে হয় হচ্ছে নির্দয়।
তার মতিগতিও বোঝা দুষ্কর।
পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে
কে জানে, কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ক্ষয় ক্ষতি?
ভাবছি এ সময় খোলা জানালায় বসে
এ যুগের রাধারানীরা কেমন আছে?
জীবনে মূল্যবোধকে তারা কিভাবে দেখছে?
উল্টোরথে তারা করবে কী?
(কৃতজ্ঞতা স্বীকার: বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘রাধারানী’ প্রবন্ধ)