(উৎসর্গ: হুমায়রা তাসনিয়া রহমান, আমার মেয়ে)


প্রথমবার স্কুলে যাবার উৎসব তোমার
নিষ্কন্টক রাখতে পারিনি
প্রথমবার তোমার দেখার পথটাকে
জানার তৃষ্ণাকে
পুড়িয়েছি অযোনিজ পৈশাচিক উল্লাসে
রেখেছি বন্দী করে তোমার উড়বার সাধ
টিভি রিমোটে উপহার দিয়েছি অশুভ সিরিয়াল
দগ্ধ শিশুর কাতর কান্না, কয়লার মত কিছু দেহ
দাউ দাউ স্বপ্নখেকো আগুন...


ক খ না শিখিয়ে তোমাকে শেখাচ্ছি ককটেল, বারুদ
ফুলের নাম পাখির নাম না শিখে তুমি শিখছ
হরতাল, অবরোধ, পেট্রোল, বোমা
তোমার খেলাজুড়ে লাঠি আর বন্দুক অনুষঙ্গ
তোমার খেলাজুড়ে কোন পুতুল নেই, কোন ফুল নেই, পাখি নেই
আছে হাতবোমার উল্লাস আর একচোখা নাবিকের চিৎকার


বছরের শুরুতেই তুমি দল বেঁধে ছুটতে চেয়েছিলে
বছরের শুরুতেই তুমি পাখির মত উড়তে চেয়েছিলে
বছরের শুরুতেই তুমি ভোরের আলোয় নাচতে চেয়েছিলে


ফুটবার আগেই ভেঙে ফেলেছি ডালশুদ্ধ কুঁড়ি
উড়বার আগেই ছেটে দিয়েছি তোমার কচি কচি ডানা
যদি উড়ে উড়ে তুমি আকাশের বিশালতা গায়ে মেখে নাও
যদি উড়ে উড়ে তুমি আমাদের কদর্য অন্ধকার দেখে ফেল
যদি উড়ে উড়ে তুমি আমাদের পাপাচার দেখে ফেল তাই


তোমাকে উড়তে না দেয়ার অপরাধে
আমাকে ক্ষমা করো না
তোমাকে ফুটতে না দেয়ার অপরাধে
আমাকে ক্ষমা করো না
তোমার মানুষ হবার রাস্তাটা খুবলে খাওয়ার অপরাধে
আমাকে ক্ষমা করো না


আমাকে ক্ষমা করো না
আমি অক্ষম এক পিতা
আমাকে ক্ষমা করো না
আমি মেরুদণ্ডহীন এক ঘুমন্ত নাগরিক
আমাকে ক্ষমা করো না
আমি ব্যর্থ এক মানুষ, এক পরাজিত শিক্ষক
আমাকে ক্ষমা করো না
আমি যে ওয়াদা করে তোমায় পৃথিবীর ভোর দেখিয়েছি
সে ভোর কালো ধুয়ায় ঢেকে চলেছি প্রতিক্ষণ
নিজের পায়ে দলে চলেছি নিজের দেখানো স্বপ্ন
আমাকে ক্ষমা করো না
আমি আগুনে পুড়িয়েছি আমার বিবেকের রুগ্ন দেহ
আমাকে ক্ষমা করো না
আমি আমারই টাকায় কেনা গুলিতে ঝাঝরা করেছি
আমারই রক্তে অর্জিত স্বদেশ, আমার মনুষ্যত্ব, আমার প্রেম
আমাকে ক্ষমা করো না
আমাকে, আমাদের এই নষ্ট সময়ের প্রতিটি উদ্ধত সীমারকে
তোমরা কক্ষনো ক্ষমা করো না।


আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাও
আমি স্বীকার করতে চাই আমার নির্বিষ পৌরুষত্ব
আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাও
আমি স্বীকার করতে চাই আমার ভিতরের অস্থিরতা
নিষ্পৃহ খোলস,
আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাও
আমি স্বীকার করতে চাই ধ্বংসের উপর দাঁড়িয়ে
কোন শুভ বার্তা রাখতে পারিনি তোমার চোখের তারায়


আমাকে ক্ষমা করো না।
আমাকে তোমরা কক্ষনো ক্ষমা করো না।