জ্যোৎস্নার আলো-আধারিতে
আমি একা দাড়িয়ে,
এক প্রাসাদের সামনে
যেথায় শত-সহস্র বছরের ইতিহাস বন্ধী হয়ে আছে,  
চারি ধার নীরব, কোন জনমানব নেই আশে-পাশে,
আধো আলো - আধো আধারিতে
আমি একা দাড়িয়ে ।  


সব দরজা-জানালা ভেঙ্গে দিব
ইতিহাসের সাথে আমি খেলা করব আজ,  
আমি ছন্নছাড়া, আমার নেই কোন অন্য কাজ,
আমি জানি;  আমি সব ইতিহাস জানি।  


হেথায় ঐ কোনার ঘরে নাচের জলসা বসত রোজ,
নুরজাহান কিংবা আসমানি
আরও কত শত নাচ-নেওয়ালি
নাচত সেথায় রোজ,  
কোন এক মাতাল রাজার মাতলামিতে
সে গলায় ফাঁস দিয়েছিল
কিংবা কেটে ফেলেছিল তার নাড়ী,
আমি ছাড়া তার নেয় না ত কেউ খোজ।
আজো জলসার ঘরে শোনা যায় তার নূপুরের আওয়াজ
শোনা যায় তার চিৎকার,
এ সবই প্রমাণ বীভৎসতার।


পশ্চিম বারান্দায়, ঐ বদ্ধ ঘরটায়
সেখানে আজও শোনা যায় এক রাজকন্যার কান্নার আওয়াজ,
কোন এক অত্যাচারী রাজা তারে তুলে এনেছিল
তার সামনেই হত্যা করেছে তার পিতাকে
এটাই নাকি ছিল তাদের রেওয়াজ।
আজও সে পূবের হাওয়ায় ভেসে আসে তার আর্ত চিৎকার।


ঐ পূর্বের ঘরটায়  
থকত এক পরির মত রাজ কন্যা
ঘুরে বেরত প্রাসাদময়,
গলায় দিয়েছিল ফাঁস
রাখালির বাঁশির শুরই করেছিল তার সর্বনাশ।  
আজও আমি তার পায়ের ধ্বনি শুনতে পাই
রাখালির বাঁশির স্বরে আজও আমার প্রাণ ছুটে যায়।


এই যে এই সদর দরজাটা দেখছ
একদিন এখান দিয়ে বের হয়ে গেছিল কোন এক রাজপুত্র,
তার মা ওই বারান্দায় দাড়িয়ে তাকে বিদায় দিয়েছিল
তার অপরাধ,  বেদের মেয়ে কে ভালোবাসে ছিল।  
আজও প্রতি জ্যোৎস্নার প্রথম পক্ষে
শোনা যায় অসহায় মা এর  চুরির ধ্বনি।  
আমি জানি;  আমি সব জানি।


আমি ইতিহাস পড়িনি তবুও জানি,  
একদিন এই ঘরে কান্নার রোল পড়েছিল,  
হিন্দু বলে গলা কাটা গেছিল এক ব্রাক্ষ্মনের
আজোও তার রক্ত রাঙিয়ে দেয় এই বসার ঘর,  
পাশের ঘর থেকেই ভেসে আসে রহমত আলীর চিৎকার
তার অপরাধ সে মুসলমান।
রহমত আলীর রক্ত,
আর ব্রাক্ষ্মনের রক্ত,  আজ মিলেমিশে একাকার।


আজো কালরাতে প্রতি আমি শুনতে পাই
এক বীরাজ্ঞনার চিৎকার,
শুনতে পাই
এক যুদ্ধ-শিশুর কান্নার ধ্বনি,
শুনতে পাই  
আর নর পিশাচের হুংকার।


জলসার ঘরে আজ আমি দেখি
এক রাজপুত্র তানপুরায় দিচ্ছে তান,
সে তানে নাচছে এক নাচনে-ওয়ালী
গাইছে ভালবাসার গান।


আমি আজও শুনি কোন রাজরানির হাসি,
আমি জানি এখনেই এক রাজপুত্র বিয়ে করেছিল
এক কৃষক কন্নাকে,
ভালবাসার দায়ে পড়তে হয় নি কাউকে ফাঁসি।


বসার ঘর থেকে আজও ভেসে আসে
করিম বক্সের গান
যে গানে তান নিয়েছিল নিতাই ঠাকুর।
কি জে মধুর সেই শুর।


এমন হাজারো ইতিহাস জমে আছে
এই প্রাসাদের কোনায় কোনায়,  
এসব ইতিহাস নয়
আজও বেঁচে আছে সমাজ বাস্তবতায়,
আজও আমি হাহাকার শুনি
শুনি হাসির ধ্বনি।
আজও সাম্য আছে
আছে অসাম্য।
আজও ঘৃণা হারে ভালবাসার কাছে।