বৃদ্ধাশ্রম
                    পূরব ব্যানার্জী
জীর্ণ দেহ, মলিন মুখে, গাল ভরা ওই হাসির জোয়ার ;
নিস্তেজ প্রাণ, গভীর চোখে, লুকিয়ে যেন ব্যাথার পাহাড়।
নাই অভিযোগ, নাই প্রতিবাদ, জীবনযুদ্ধে যোদ্ধা নিরব,
মুখ চাওয়াচাওয়ি, অচেনার ভীর, পরাজিত যত সৈনিক সব।।
বিস্ময়ে আমি হেরিলাম এক সভ্যদেশের কয়েদখানা ।
বৃদ্ধ জনক জননীর আবাসগৃহ, বৃদ্ধাশ্রমের  আস্তানা।।
আসিয়াছে কেহ স্বেচ্ছায় সেথা, লুকায়ে হৃদয়ে  বুকফাটা ব্যাথা ।
কারো বা স্নেহের নয়নের মণি, শান্তির তরে পাঠায়েছে সেথা।।
যে চোখে কখনো ছিল উচ্ছ্বাস, উদ্বেলিত স্নেহ,মমতা অপার ;
আজ সেই আঁখি ছলছল নীরে, খোঁজে মরে কিবা ভুল হল তার।।
যে বাহুডোরে ছিল বাঁধা কভু আদরের তার প্রানপ্রিয় ধন।
নিদ্রা ক্ষুদা সব ভুলে যারে প্রানাধিক ভেবে করেছে যতন।।
জীবনের এই অন্তলগনে যেই মুখ তার শেষ সম্বল।
অন্ধ স্নেহ আজ অভিশাপ, শতো অপমানে  তবু চাহে যার মঙ্গল।।
কেমনে সেই অপত্যজন মানুষ হয়েও হেলায় করে বিবেকের  বিসর্জন।
যার কোলেপিঠে হয়েছে সবল, কেমনে করে তারে বৃদ্ধাশ্রমে নির্বাসন।।
কাঁদে অন্তর, বুকে হাহাকার, অভিমানে হৃদয় ভেঙে চুরমার।
কোন অপরাধে, কোন পাপ দোষে, শাস্তি এমন হায় বিধাতার।।
নিত্য যারে না দেখিলে নয়নে, চিত্ত ব্যাকুল, প্রান আনচান !
আজ বিধিদোষে সেই প্রানপ্রিয় অবাধে যত মমতার দেয় বলিদান।।
গর্ভে ধরিয়া যারে বুকে লয়ে স্বপ্ন আশায় ছিল দিল দরিয়া,
বার্ধক্য আজ তার সঙ্কট, ভুলে শৈশব আজ মুখ লয় ফিরিয়া।।
শিক্ষার এই মুল্য যদি হয়, সভ্যতার যদি হয় এই পরিচয়।
চাই না এমন পূঁথির শিক্ষা, সভ্য হতে তবে আমি নাহি চায়।।