ওই বাঁশি দেয়
দু'টো আটান্নর ডাউন বনগাঁ লোকাল
ছেড়ে যাবে এখনই
এখনই দেবে ছেড়ে
আমাকে যেতে হবে
       চ্যাটার্জি বাড়ি দুধ দিতে
       ব্যানার্জি বাড়ি সবজি দিতে
       কল্যাণ সাহার মুদি দোকানে
        চাল ডাল তেল লবন আটা দিতে
  চৌধুরী গিন্নিমার মেয়ের ফ্রক দিতে
  মল্লিক বাড়ি খবরের কাগজ দিতে
  বিপিনের চায়ের দোকানে রুটি দিতে


তনুশ্রী  ( আমার বউ ) বলে-
কি করে যাবে তুমি  ?
কাল সারারাত জলে ভিজেছ
   একুশ বছরের পুরানো খড়ের চাল
                এবারও পাল্টানো যায় নি
     অমাবস্যার রাত
        এখনো বৃষ্টি থামেনি
তুমি শুয়ে থাকো
গায়ে ভীষণ জ্বর
  কপাল পুড়ে যাচ্ছে উত্তাপে


তনু, তনু আমার- -
শুধু শুধু কপালের দোষ দিয়ে কি লাভ !
কপাল; সেতো অনেক আগেই পুড়ে গেছে
    তাহলে একটি গান শোনো ;
      ' যে রাতে মোর দুয়ার গুলি ভাঙল ঝ'ড়ে "
  এখন যাই -
   বাড়ি ফিরে শেষ টুকু শোনাব


তনু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে-
       আজ কি না গেলেই নয়  ?
তুমি তো সবই জান
আগামী পরশু ছেলের স্কুলের
       ফি দেওয়ার লাস্ট ডেট
এক সপ্তাহের মধ্যে হাসপাতালে
পঁচিশ হাজার জমা না দিলে
বাবা আমার চিরদিনের জন্য
                    অন্ধ হয়ে যাবেন
তুমি অন্তত বাঁধা দিও না
          যিনি আমার পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন
তাঁর দৃষ্টি চলে গেলে
আমার চলার পথে
অন্ধকার আসবে নেমে


আমাকে যেতে দাও
আমার যেতে হবে
যেতেই হবে আমার
     দুধ না খেলে শিশুরা বড় হবে না
     সবজি মুদিদ্রব্য না পেলে
     বাবুরা তাদের ছেলে মেয়েরা খাবে কী ?
     ফ্রক না পেলে মেয়েরা স্কুলে যাবে কী করে ?
     সংবাদপত্র না পড়লে -
   মানুষ দেশের হাল হকিকত বুঝবে কী করে  ?


রুটি ছাড়া বিপিনের চায়ের দোকান বন্ধ হবে
                    খোকার পড়াও বন্ধ হবে
                     বাবা আমার অন্ধ --

তনু লক্ষ্মীটি আমার
আর আর দেরি কোরোনা
একটা গ্লাস জল দাও
আমাকে যেতে হবে
যেতেই হবে আমার
এখনই ছাড়বে বনগাঁ লোকাল
ওই দিল বাঁশি
ওই ওই বাঁশি দিল