শরত জমিয়ে রাখছো যে শূন্যতায়
বহু আগে অনুরূপ দু’পায়ে মাড়িয়ে চলে গেছি অনেক পথ,  
অন্যরকম কোনো ট্রেনে যেতে যেতে
মনে হয় যদি অনেকদূর গিয়ে তারপর
ট্রেন কিংবা গন্তব্য দুই-ই ভুল,
আমি গন্তব্যকেই বেছে নেই তখন বরং।


একজন নেমে যাওয়া ট্রেন যাত্রীর
অপেক্ষা বা উপেক্ষা থাকে না কোনো
এই অভিজ্ঞতা বারবার ফিরিয়ে নিয়েছে আমাকেও
গৃহে, তারপর হাতড়েছি শশ্মান শূন্যতা
চারদিকে কুয়াশার কাচে।  


কত শীতরাত, ব্যাঙনিদ্রা, নয়ানাভিরাম অন্ধকার,
আলো না জ্বলা ঘর, অনেক রাত নির্ঘুম,
এমন একাকী একা হাউসহোল্ড,
ফ্রোজেন ভাত-তরকারি,
এক গোছা চাবির আঁচল না পাওয়া ক্ষত,
রিডিং টেবিলের ইতস্তত এলোমেলো,
বুক-সেলফের ধুলা-বালি, ময়লার বালতি,
কিচেন-ভাগাড়-উচ্ছিষ্ট, কদর্য-মাধুরিমা,


এই তো পায় স্রেফ মানুষ, দিনান্তের অবসানে।  


আর ফিরিনি যখন উচ্ছনে যাওয়া দিন রাত্রে,
পথে পথে তখন ঘর ছিল।
কত ঘুম-ক্লান্তি-অবসাদ-হতাশা
উদ্যান-ফুটপাত-রাস্তায় ছিটিয়ে ছড়িয়ে,
জীবন ভরিয়ে জীবনকে করেছি পাঠ।


দেখেছি পিঠের দেয়ালে স্বরলিপি লেখা নারী,
ঝলসানো মুখ, গভীরে অজানা অসুখ নিয়ে
যীশুর মত ক্রুশবিদ্ধ মানুষ ঝুলছে লোকাস বাসে,
যেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী তারা ফিরছে কোথাও।
স্বামী, সন্তান, স্ত্রী তাদের এই শহরেই আছে,
কিংবা নেই তারা আছে দূরের কোনো গ্রামে,
যেখানে তখন হলুদ খামে সন্ধ্যা নামছে।  
তারপর রাত নামে ধীর পায়ে শহর জুড়ে বিলবোর্ড দেখে
এবড়োথেবড়ো পায়ে চলা পথে হেঁটে একা
একটি হাতের হাহাকারে মরে যায় মলিন রোদের মতো।
তোমাদের ওড়নার কাছে রাখে দীর্ঘ পথের ক্লান্তি,


অভিজাত ক্লাব, বিপনী-বিতান, সভা-সেমিনারে তৃপ্তি পাইনি,
দেখেছি ক্রমশ কেমন নাব্যতা জমে সম্পর্কে,
শৃঙ্খলাহীন জীবন মুক্তি চায়,
ভেঙে যায়, ভাঙে সব,
তবুও ভালোবাসে দুর্ভিক্ষের দারুণ দিনে
আততায়ী মেঘ অন্য আকাশে ভাসে,
যে যার মত বয়ে যায় তারপর,
   সমপর্ণের শান্ত পথের শেষে।


সভ্যতার ইতিহাসে অনেক অনেক বছর ধরে,
তোমাদের সাফল্য প্রেম সম্ভাবনা স্নেহ মমতা
অনায়াসে ছুঁড়ে ফেলার গাটসও তো থাকে
আর থাকে অনেক কিছুই হবার
সম্ভাবনার সমূহ সোনালী দিন।
ভীড় মিছিলেও হাঁটে হঠাৎ মায়া মুখ যদি মেলে,
সবুজ বাতিরা জ্বলে নেভে অবিরত চ্যাট-হিস্ট্রি মুছে ফেলে,
অনেক মৃত আইডি, অনেক মুখ মুছে যায় স্মৃতি-বিস্মৃতি মাঝে।


কিছুই থাকে না আগের মতো
মানুষে মানুষে যোগাযোগ যাকে বলে,
এরপর থতমত শামুক জীবন গুটিয়ে গুহায় দেখে যেতে হয়
চারদিকে সব নরক আগুন জ্বালিয়ে যাচ্ছে
‘স্নেহ-মমতার ঘরানা’ সকল গন্ধ,
নতুন সম্বন্ধ, স্পন্দিত আলোয় জোনাকির ঝিলমিল,
অন্ত্যমিল নতুন কোনো কবিতার,
এই তো খোঁজে আবার,
প্রথম দিনের উষার মতো নতুন কোনো সম্ভাবনার দিনে।  
দিন যাপনের ত্বরিকা তারপর নফস পতনের শব্দ শোনে,
রুহানি রাতের শেষে গায়ত্রী শিবমন্ত্র শেখায় পুরুষার্থ বোধ
আর তোমাদের নারীত্ব, তোমাদের ঐশ্বর্য খসে যায়
                          সভ্যতার পুরনো বিষাদে।


তোমাদের করুণা ও মায়া, গৃহস্থ অর্থনীতি,
কূটকৌশল, ভূ-রাজনীতি, যৌনতার ইতিহাস,
আর মুখোশ মনীষার সবটাই দেখে-চেখে, মনে বোধ আসে
সে বড় সাফোকেটিং— এই কিছুই হতে না চাওয়ার জীবনে।
আর জীবন যাপনের পৌনঃপুনিক দক্ষতা বলো যাকে,
দু’ চারটে ছকে বাঁধা জীবন অমন, অভিভাকত্ব, রেজিমেন্টেশান
স্বমেহনে বহু আগে উপেক্ষার কমোডে ফেলে এসে
নিস্তার চায় জীবন,
        তবুও কি আসে নির্ভার নিরিবিলি?


ক্লান্তি নয় আমাদের ছোঁয় নির্লিপ্তি ও অবসাদ
আর তোমাদের শরীর— সেও ছুঁতে গিয়ে বারবার
তড়িতাহত হয়ে ফিরতে হয় শব্দ ও নৈঃশব্দ্যের কাছে।
চুমু ও থুতু একত্রে পান করে যৌথজীবন পায়
তারপর এমন বহু রাত,
         উৎপাত আর ফর্দে ভরা দিন।


সহজ শর্তে ঋণ যদি খোঁজ,
সাধক পুরুষ চাও যদি তবে সাধিকা হও আগে।
ব্যাথাভরা অনুরাগে আজও তো ভালোবাসতে জানি,


এখন এই শরতে কী এমন নতুন গল্প শোনাবে?
কী এমন অমৃত সুধা করাবে পান?
মানুষের স্টোরি টেলিংয়ের ইতিহাস,
সে তো যার যার নিজস্ব ন্যারেটিভ, ধ্বনি অভিধান,
ভেতরের রেখা মুছে ফেলে তবু আরও বৃহৎ রেখায়
মানুষের মানচিত্র-ভূগোল-ডেমোগ্রাফি
              পৃথক ইতিহাসের অংশ।


মানুষ নই মূলত জন্তু,
শিম্পাঞ্জি ও গরিলার মামতো ভাই,
মহাসমারোহে জীবনকে আঁচড়ে আঁচড়ে উপভোগ করি
বিপুল গৌরবে, মনে রাখার মতো আর কোনো ধন্দ নাই,
যে পরগণায় থাকো, যে কোনো শহরে,
যার তার কাছে যাও,
জেনো,
       সহজ শর্তে কোনো গ্রহণ নাই।