আজ যিনি শাশুড়ি, তিনিও একদিন বউ হয়ে এসেছিলেন ওই সংসারে। হয়তো তাকে নানা ধরণের গঞ্জনা সইতে হয়েছে তার শাশুড়ির কাছ থেকে। এর ফলাফল হতে পারে দুই রকম।


১। নিজের শাশুড়ির আচরণ মনে করে, তিনিও তার পুত্রবধুর উপর একই ধরণের নির্যাতন করে এক ধরণের প্রতিশোধমূলক আত্মতৃপ্তি পেতে চান।
২। নিজের দুর্দশার কথা স্মরণ করে তিনি বুঝেছেন, সেটা ছিলো তার প্রতি অন্যায় আচরণ। এমন আচরণ নিজের পুত্রবধুর সংগে করা অনুচিত।


আমার অবস্থা দ্বিতীয় ধরণের। আমার আজকের অবস্থানে আসতে প্রবল প্রতিকূলতার মুখোমুখী হতে হয়েছে। বেতারে আমার লেখা প্রথম প্রচারিত গানটিই ''এ মাসের গান'' হয়ে যাওয়াতে, আমার কাছাকাছি বা অল্প আগে ''গীতিকার'' হওয়া প্রায় সবাই ক্ষুব্ধ হন। তার উপর, টেলিভিশনে প্রথম যে মনোনীত ''গীতিকার'' তালিকা প্রকাশ করেন তাতে, বহুদিন ধরে লিখে আসছেন এমন অনেকের নাম না থাকলেও, আমার নামটি ছিলো। দুটোই ১৯৬৫ সালের কথা। ফলে নিজে কোনো দোষ না করেও, আমি অনেকের চক্ষুশূল হয়ে যাই। এর পর যখন আমি পত্রিকায় লিখি, যারা সঠিক ছন্দে লিখতে পারেন না, বা ছন্দ জানেন না, তাদের হয় ছন্দ শিখে নেয়া উচিৎ, নয় তো লেখা ছেড়ে দেয়া উচিত - তখন তো অনেকের গায়ে আগুন ধরে যায়। এটা ১৯৭৩ সালের কথা।


আমার ভাগ্য ভালো, (১) কয়েকজন নবীন ছন্দ শিখতে ও ছন্দে লিখতে উতসাহী হন, (২) আমি বেতারে ততোদিনে পদস্থ কর্মকর্তা হয়ে গেছি। কিন্তু, অযোগ্যেরা সব সময়ই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তারা মিলে একটা জোট তৈরী করার চেষ্টা করে। তারা দেখতে চায়, বেতারে আমার কতো গান রেকর্ড হচ্ছে। খুজে হতাশ হয়। কারণ তাদের অনেকের ৮ - ১০টির বিপরিতে দেখা যায়, আমার ১টা রেকর্ড হচ্ছে। আমি যে অবৈধ সুযোগ নিচ্ছি না, এটা প্রমাণ হওয়াতে তাদের প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করা আর হয়ে ওঠে না। এরপর, তারা সুরস্রষ্টাদের কাছে আমার বিরুদ্ধে বলে,''আপনারা আমাদের গানে যে সুর করেছেন, তা কি ভালো-মন্দ না বুঝেই সুর করেছেন? রফিক সাহেব বলে যে আমরা নাকি ছন্দ জানি না। তাহলে তো, আমাদের গানে সুর করা মানে, আপনারাও কিছু জানেন না।'' দুই একজন ছাড়া আর কেউ তাদের কথায় বিচলিত না হয়ে, উল্টো বলেন, ''ছন্দটা শিখে নিতে দোষ কি? উনি/ও তো ঠিকই বলেছেন/ বলেছে।'' এই ভাবে একের পর এক বহু ঝামেলা করেছে। ওদের যন্ত্রণায়, নিজের হাতে গড়া বহু প্রতিষ্ঠান ছেড়ে এসেছি। কিছুদিন আগে, লুতফর রহমান রিটন, এক ''গীতিকার''এর নামোল্লেখ করে (আসলে সেই গীতিকারের কাঙালপনা প্রসঙ্গে) কিছু লিখে, বলেছেন, এই জন্যেই তিনি ''গীতিকার'' হননি।


আসলে, ছন্দ, সঠিক অন্ত্যমিল, কাব্যিক নির্মাণ ছাড়া, ২-৪টা গান ''হিট'' করে গেলেও যে বেশী দূর যাওয়া যায় না এটা প্রথম বোঝা প্রয়োজন। সেই বোধ থেকেই আমি যখন যেমন সুযোগ পেয়েছি, চেষ্টা করেছি নতুন প্রজন্মকে ''অকবির'' অপবাদ থেকে ফিরিয়ে কবিতামূখী করতে। ওই শাশুড়ির দ্বিতীয় ধরণের মানসিকতায়।


লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে এখানে: https://www.facebook.com/chandroBikkhon/posts/802336603257111