(ফেব্রুয়ারি ২০১৮ খিষ্টাব্দে "রমুছাঁচ" গ্রন্থে প্রকাশিত বাংলাছন্দ বিষয়ক একটি প্রবন্ধ। এতে ৬টি বাংলা ছন্দ সংক্ষেপে চিনে নেবার প্রয়াস আছে। ছন্দ শিক্ষায় যদি কোন বন্ধুর কাজে লাগে এই ভেবে উপস্হাপন করা ।)


        বুকের ভেতরে দমের ঘড়ি বাজে ডিপ ডিপ ডিপ। কান পেতে শুনুন দেখবেন কেমন অবিরাম চলে ছন্দের খেলা। প্রাণি-পাখি-কীট-পতঙ্গ-নদী-সাগর-বৃক্ষ-লতা প্রকৃতির পরতে পরতে বাঁধা এ ছন্দতরঙ্গ। এ যেন বৃত্তের মাঝে থেকে বৃত্তের বাইরে বেরিয়ে পড়া। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ যথার্থই বলেছেন ‘আমরা ভাষায় বলে থাকি, কথাকে ছন্দে বাঁধা! কিন্ত এ কেবল বাইরের বাঁধন, অন্তরে মুক্তি।’ অথাৎ বন্ধনেই মুক্তি। এ বন্ধন ছন্দের বন্ধন । আনন্দের বন্ধন।


কবিতাশিল্পে কবিরা কী বলে? প্রেম-সৌন্দর্য, অপ্রেম-অসুন্দর, দ্রোহ-জ্বালা, অভিজ্ঞতা, বোধ-চেতনা এগুলোইতো। এসব যখন বাস্তব ভাবনা থেকে আলাদা করে মনকে গভীর কোনও আবেগে আচ্ছন্ন করে অথাৎ কল্পনা ও অভিজ্ঞতায়  যখন চিন্তার আলো পড়ে তখন নিত্যনৈমিত্তিকতার বাইরে একটি ভাষার সৃষ্টি হয়। একে বলা যায় কাব্যভাষা। কারণ এতে থাকে গতি-যতি, ধ্বনি ও ধ্বনির বিরতি। এই যে বেগ-বিরতি তা সুনিয়ন্ত্রিত হলেই ছন্দের সৃষ্টি হয়। শ্যামাপদ চক্রবর্তী ছন্দের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, ‘যে পরিমিত পদবিন্যাসের ফলে বাক্যে একটি নৃত্যপর সঙ্গীতমধুর তরঙ্গময় প্রবাহের সৃষ্টি হয়, তারই নাম ছন্দ’। কবি আবদুল কাদির এর ভাষায়, ‘শব্দের সুমিত ও সুনিয়মিত বিন্যাসকে বলা হয় ছন্দ’। কবিতার সাথে তার ছন্দ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ছন্দ কবিতার অঙ্গই শুধু নয় আত্মাও বটে। ছন্দহীন কবিতা  কবিতার শবদেহ মাত্র। ছন্দ জিনিসটাই কান নির্ভর। বর্ণ গোনে ছন্দ হয় না। ছড়া, কবিতার ছন্দ কানে ঢুকেই প্রাণে প্রবেশ করে।


বাংলাভাষার প্রধান ছন্দ তিনটি। স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত। এগুলোর নামকরণ করেছিলেন ছন্দাচার্য শ্রীযুক্ত প্রবোধ চন্দ্র সেন। অবশ্য পরে তিনি এ নামগুলো অবৈজ্ঞানিক মনে করে এর পরিবর্তিত নাম রেখেছিলেন যথাক্রমে দলবৃত্ত, কলাবৃত্ত ও মিশ্রকলাবৃত্ত বা মিশ্রবৃত্ত। তা ছাড়াও বিভিন্ন ছান্দসিক, কবি এ তিনটি ছন্দকে ভিন্ন ভিন্ন নামে চিহ্নিত করেছিলেন। প্রধান তিনটি ছন্দ ব্যতিত বাংলা ভাষায় আরো কিছু ছন্দ রয়েছে। যেমন: মিশ্রছন্দ, গদ্যছন্দ, স্বরমাত্রিক, স্বরাক্ষরিক, অক্ষরমাত্রিক বা মাত্রাক্ষরিক। আবার অক্ষরবৃত্তের আছে নানান রূপ যেমন: অমিত্রাক্ষর, মুক্তক, পয়ার, মহাপয়ার। অবশ্য সকল ছন্দেই মুক্তক রচিত হতে পারে। এছাড়াও আছে কবিতার নানা ফর্ম বা রূপপ্রকল্প। যেমন: সনেট, লিমেরিক, হাইকু, তানকা, ক্লেরিহিউ, রুবাই ইত্যাদি। এগুলো সবই ভিনভাষার কবিতা থেকে আগত। এসকল ফর্ম কিংবা ছন্দবিজ্ঞান আলোচনা এখানে মুখ্য বিষয় নয়। নতুন ফর্ম বা রূপকাঠামো রমুছাঁচ এর ছন্দবিশ্লেষণ করার প্রাককালে বাংলা ছন্দের মৌলিক বিষয়ে পলকমাত্র ঘুরে আসাই উদ্দেশ্য।


সিলেবল/অক্ষর/ দল/শব্দাংশ (Syllable): বাংলাভাষার ছন্দ ব্যাপারটা বুঝতে হলে প্রথমেই বুঝতে হবে তার ধ্বনি সম্পর্কে। আমরা যখন কোনো শব্দ উচ্চারণ করি তখন দুধরণের ধ্বনি মুখ থেকে নিঃসৃত হয়। আমাদের কান যেভাবে ধ্বনিদুটি শোনে তার একটি টেনে লম্বা করা যায়, এটি মুক্ত। অপরটি টেনে লম্বা করা যায় না, এটি রুদ্ধ। মুক্তটি স্বরধ্বনি এবং রুদ্ধটি ব্যঞ্জনধ্বনি। স্বরধ্বনি হচ্ছে এমন সব ধ্বনি যেগুলো উচ্চারণে ফুসফুস থেকে বেরিয়ে আসা বাতাস কণ্ঠনালি বা মুখগহ্বরের কোন স্থানে বাধা পায় না কেবল জিহ্বা, ঠোঁট ও চোয়ালের অবস্থার পরিবর্তন ঘটে সেগুলো। বাকী সব ব্যঞ্জনধ্বনি। এ, কা, দি, মু, মা এগুলো মুক্তধ্বনির দৃষ্টান্ত। আম, থাম, ঘুম, দিক এগুলো  রুদ্ধ ধ্বনির দৃষ্টান্ত। এই যে ধ্বনি তার যেটুকু বাকযন্ত্রের একটি প্রয়াসে উচ্চারিত হয় তাকেই সিলেবল/অক্ষর/ দল/শব্দাংশ বলে। এখানে আমরা পূর্বসূরী অনেক ছান্দসিকের মতো ইংরেজি সিলেবল শব্দটিকে পরিভাষা হিসেবে গ্রহণ করব। এখন মুক্ত ও রুদ্ধ সিলেবল চিনে নিতে হবে। যেমন: মনোবল একটি শব্দ। শব্দটি বিশ্লেষণ করলে ম.নো.বল এরূপ তিনটি সিলেবল পাওয়া যাবে।
এখানে ম.নো. এদুটি মুক্ত সিলেবল এবং বল রুদ্ধ সিলেবল। তাহলে বোঝা গেল সিলেবল দুপ্রকার ১) মুক্ত সিলেবল ২) রুদ্ধ সিলেবল।


মুক্ত সিলেবল (Open syllable): এ, কি, রে, খো, কা এগুলো মুক্ত সিলেবল। মুক্ত সিলেবলের ধ্বনি টেনে লম্বা করা যায়। এতে একটি মাত্র বর্ণ কিংবা একটি বর্ণ+কার চিহ্ন থাকে। মুক্ত সিলেবল সকল ছন্দেই এক মাত্রার মূল্য পায়। মুক্ত সিলেবল বোঝাতে ‘।’ দণ্ডচিহ্ন ব্যবহার করা যায়।


রুদ্ধ সিলেবল (Close syllable): বাম, দাম, ঘুম, দিক, ঠিক এগুলো রুদ্ধ সিলেবল। রুদ্ধ  সিলেবলের ধ্বনি টেনে লম্বা করা যায় না। এতে দুটি বর্ণ থাকে। প্রথম বর্ণটি কার চিহ্ন যুক্ত বা বিযুক্ত থাকতে পারে কিন্তু দ্বিতীয় বর্ণটিতে কার চিহ্ন থাকে না। দ্বিতীয় বর্ণটি হয়( ্ ) হসন্তবর্ণ। অর্থাৎ দ্বিতীয় বর্ণটি সম্পূর্ণ উচ্চারিত হয় না, আংশিক উচ্চারিত হয়। এই হসন্তবর্ণ বাংলা ভাষাকে বিশিষ্টতা দান করেছে। হসন্ত সংঘাতের ঝংকারে বাংলাভাষা ঝংকিত। শব্দের অন্ত-মধ্য যে কোনো স্থানে হসন্তবর্ণ থাকতে পারে। রুদ্ধ সিলেবল দিয়েই বাংলা ছন্দ নির্ণীত হয়। এটি তিন ছন্দে তিন রকম মাত্রা মুল্য পায়। স্বরবৃত্ত ছন্দে রুদ্ধ সিলেবল শব্দের আদি-অন্ত-মধ্য যে স্থানেই থাকুক এক মাত্রা মূল্য পাবে। মাত্রাবৃত্ত ছন্দে দুই মাত্রার মূল্য পাবে। কিন্তু অক্ষরবৃত্ত ছন্দে এর একটি চমৎকার ভিন্নতা আছে। অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রুদ্ধ সিলেবল যদি শব্দের প্রথমে কিংবা মধ্যে থাকে তা হলে এক মাত্রার মূল্য পাবে। কিন্তু যদি শব্দের শেষে থাকে তা হলে দুই মাত্রার মূল্য পাবে। তাছাড়া একক রুদ্ধ সিলেবলও দুই মাত্রার মূল্য পাবে। তা হলে দাঁড়াল, অক্ষরবৃত্তে রুদ্ধ সিলেবল শব্দের আদি-মধ্য এক মাত্রা কেবল অন্তে দুই মাত্রা এবং এক শব্দের রুদ্ধ সিলেবলও দুই মাত্রা গণ্য হবে। মাত্রা গোনার এই যে রীতি তার উপরই  ছন্দ নির্ভর করে। অক্ষরবৃত্তে কাব্য রচনায় একটি মূল্যবান কথা ‘বিযোড়ে বিযোড় গাঁথ, যোড়ে গাঁথ যোড়।’ রুদ্ধ সিলেবল বোঝাতে ‘¬–’ চিহ্ন ব্যবহার করা যায়।


মাত্রা (Mora): একটা ধ্বনি বা সিলেবল উচ্চারণ করতে যে সুক্ষ্ম সময় লাগে তার পরিমাণকে এক মাত্রা হিসেবে গণ্য করা হয়। অন্যভাবে বলা যায় একটা হ্রস্ব স্বর উচ্চারণ করতে যে সুক্ষ্ম সময় ব্যয় হয় তা-ই একমাত্রা। উল্লেখ্য বাংলাবর্ণে হ্রস্বস্বর এবং দীর্ঘস্বর দুটোই বিদ্যমান। দীর্ঘস্বর বাংলা ছন্দে আলাদা মাত্রামূল্য পায় না।


যতি (Pause): ছন্দে যতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাঁটার সময় আমরা অবিরাম পদক্ষেপ ফেলতে পারি না। প্রতি পদক্ষেপে থেমে আবার চলতে হয়। এটাই চলার ছন্দ। কবিতার ছন্দও অনুরূপ। কবিতা পড়তে হয় দোলায় দোলায়। ছন্দ মানেই যতি আর গতির খেলা। এক দোলা থেকে অপর দোলায় যেতে যে বিরতি পড়ে তাকে যতি বলে। তিন রকমের যতি আছে। যেমন: ১) পূর্ণযতি ২) অর্ধযতি ৩) লঘুযতি।
উচ্চারণে যেখানে সম্পূর্ণরূপে থামতে হয় সেখানে পূর্ণযতি পড়ে। আর যেখানে পূর্ণযতির অর্ধ বিরতি পড়ে সেখানে অর্ধযতি এবং যেখানে লঘু বিরতি পড়ে সেখানে লঘু যতির সৃষ্টি হয়।


অস্তগামী ।সূর্য বলে, ।।‘হে পৃথিবী ।যাই।
আজকে তোমার ।যে দিন গেছে ।।কালকে কিন্তু।নাই।


এখানে ‘অস্তগামী’ ‘হে পৃথিবী’ ‘আজকে তোমার’ ‘কালকে কিন্তু’ এর পরে লঘু যতি পড়েছে। আবার ‘সূর্য বলে’ ‘যে দিন গেছে’ এর পরে অর্ধযতি এবং ‘যাই’ ‘নাই’ এর পর পূর্ণযতি পড়েছে। এছাড়া আরও দুটি অতি সুক্ষ্ম যতি লক্ষ করা যায়। যেমন: অস্.ত: গা.মী শব্দটিতে ‘অস্’, গা এর পরে (লঘুতর অপেক্ষা ক্ষুদ্র) খানিক বিরতি পড়েছে এবং ‘ত’, মী এর পরে লঘুতর বিরতি পড়েছে। প্রথমোক্তটি অণুযতি এবং দ্বিতীয়টি উপযতি হিসেবে গণ্য। লঘুতর অপেক্ষা ক্ষুদ্র যতি দ্বারা খণ্ডিত ছন্দ বিভাগকে সিলেবল, লঘুতর যতি দ্বারা খণ্ডিত ছন্দ বিভাগকে উপপর্ব, লঘুযতি দ্বারা খণ্ডিত ছন্দ বিভাগকে পর্ব, অর্ধযতি দ্বারা খণ্ডিত ছন্দ বিভাগকে পদ এবং পূর্ণযতি দ্বারা খণ্ডিত ছন্দ বিভাগকে পঙক্তি বলে।


পর্ব (Foot): পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে লঘুযতি দ্বারা খণ্ডিত ছন্দ বিভাগকে পর্ব বলে। পর্ব তিন প্রকার: ১) পূর্ণ পর্ব ২) অপূর্ণ পর্ব ৩) অতি পর্ব।
নেতার/ মুখে ছিল/ স্বশাসনের/কথা
মূল/ লক্ষ ছিল/দেশের স্বাধী/নতা।


অতি পর্ব : অতি পর্ব হচ্ছে পূর্ণ পর্ব অপেক্ষা কম মাত্রার পর্ব যা পঙক্তির প্রারম্ভে থাকে। এখানে ‘নেতার’ এবং ‘ মূল’ শব্দ দুটি অতিপর্ব।


পূর্ণ পর্ব:  অতি পর্ব বিহীন চরণের প্রথমে ও মাঝে যে পর্ব থাকে  তা-ই পূর্ণ পর্ব । এখানে ‘ মুখে ছিল ’ ‘স্বশাসনের’ ‘ লক্ষ ছিল’ ‘দেশের স্বাধী’ এ চারটি পূর্ণ পর্ব। বাংলা ছন্দে চার, পাঁচ, ছয়, সাত, আট, এবং দশ মাত্রার পূর্ণ পর্ব হয়। সাধারণতঃ স্বরবৃত্ত ছন্দে চার মাত্রা, মাত্রাবৃত্তে চার থেকে আট মাত্রা এবং অক্ষরবৃত্তে ছয়, আট, দশ মাত্রা নিয়ে পর্ব ঘটিত হয়ে থাকে। উল্লেখ্য বিজোড় মাত্রার পূর্ণ পর্ব মাত্রাবৃত্ত ছন্দই ভালো নিতে পারে।


অপূর্ণ পর্ব : কবিতা-চরণের শেষ পর্বটি অপূর্ণ পর্ব । এটিও পূর্ণ পর্ব অপেক্ষা কম মাত্রা বিশিষ্ট পর্ব। উদ্ধৃতিতে ‘কথা’ ‘নতা’ শব্দদুটি অপূর্ণ পর্ব।


মধ্যখণ্ডন: পর্ব মিলানোর প্রয়োজনে যদি কোনো শব্দের মাঝখানে দোলাটি শেষ হয় এবং শব্দের অবশিষ্টাংশ যদি অন্য পর্বের সাথে পড়তে হয় তবে তাকে মধ্যখণ্ডন বলে। যেমন:
ধন আছে /পৃথিবীতে /নেই সম/বন্টন।
এখানে সমবন্টন শব্দের ‘সম’এর পরে মধ্যখণ্ডন হয়েছে। শব্দটির বাকী অংশ ‘বন্টন’ অপূর্ণ পর্ব।


স্বরবৃত্ত ছন্দ: যে ছন্দের মাত্রা গণনায় মুক্ত সিলেবল এবং রুদ্ধ সিলেবল উভয়ই একমাত্রার মূল্য পায় তা-ই স্বরবৃত্ত ছন্দ। এটি দ্রুত লয়ের ছন্দ।
এর পর্ব সাধারণতঃ ৪ মাত্রার হয়ে থাকে যেমন:
  –    ।।।       –    ।।।       –      ।।।    –
আয় ছেলেরা/ আয় মেয়েরা /ফুল তুলিতে/ যাই,
                                         জসীম উদ্দীন
এখানে স্বরবৃত্ত ছন্দে প্রতি পূর্ণ পর্বে ৪ মাত্রা পাওয়া যায়। তিনটি পূর্ণ পর্ব এবং শেষে ১ মাত্রার একটি অপূর্ণ পর্ব রয়েছে।


মাত্রাবৃত্ত ছন্দ: যে ছন্দের মাত্রা গণনায় মুক্ত সিলেবল এক মাত্রা এবং রুদ্ধ সিলেবল শব্দের আদি-মধ্য-অন্ত যেখানেই থাকুক দুই মাত্রা মূল্য পায় তাকেই মাত্রাবৃত্ত ছন্দ বলে। মাত্রাবৃত্তে (ঐ,ঔ)  যৌগিক স্বরদুটি দুই মাত্রার মূল্য পেয়ে থাকে । এটি মধ্যম লয়ের ছন্দ। এর পর্ব ৪, ৫, ৬,৭ মাত্রার হয়ে থাকে। যেমন:
। । । ।       –  –     । । । ।       –
পিলিপিলি/ পিপপিপ/ পিলিপিলি/ পিপ
–  –      ।।    ।।       । –   ।    –
চাঁদ নয়/ খোকা-সোনা/ চাঁদের প্র/দীপ।
এখানে প্রতি পূর্ণ পর্বে ৪ মাত্রা পাওয়া যায়। প্রতি চরণে তিনটি পূর্ণ পর্ব এবং শেষে ২ মাত্রার একটি অপূর্ণ পর্ব রয়েছে।


অক্ষরবৃত্ত ছন্দ: অক্ষরবৃত্ত ছন্দে মুক্ত সিলেবল অন্যান্য ছন্দের মতো এক মাত্রা হিসেবে গণ্য হবে। আর রুদ্ধ সিলেবল যদি শব্দের প্রথমে কিংবা মধ্যে থাকে তা হলে এক মাত্রার মূল্য পাবে। কিন্তু যদি শব্দের শেষে থাকে তাহলে দুই মাত্রার মূল্য পাবে। এটি ধীর লয়ের ছন্দ। এর পর্ব ৬, ৮ ও ১০ মাত্রার হয়ে থাকে। যেমন:
।।      ।।    ।  – । ।      ।।  ।।    –। ।।      ।।
লোক থেকে লোকান্তরে /আমি যেন স্তব্ধ হয়ে/ শুনি
। । ।    ।–    –      । । –   । – ।   । –
আহত কবির গান।/ কবিতার আসন্ন বি/জয়।
                                        আল মাহমুদ
এখানে প্রতি পূর্ণ পর্বে ৮ মাত্রা পাওয়া যায়। প্রতি চরণে দুটি পূর্ণ পর্ব এবং শেষে ২ মাত্রার একটি অপূর্ণ পর্ব রয়েছে।


গদ্যছন্দ: গদ্যছন্দকে বলা হয় ‘স্বাভাবিক’ বা ‘প্রকৃতিক’ ছন্দ। এটি ভাবের ছন্দ। এর ছন্দস্পন্দ বা গতি ও যতি ভাব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তা আবার ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন হতে পারে। এক কথায় বলা যায়, প্রবাহমান গদ্যে রচিত পংক্তিমালার মূল অভিঘাত যদি কবিতার হয় এবং তা যদি ভাব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তা-ই গদ্যছন্দ। গদ্যছন্দে রচিত কবিতার শব্দরাশিকে নিয়মিত ছন্দে (স্বরবৃত্ত, অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত) পর্ব বিন্যাস বা মাত্রা গণনা করলে ছন্দ নিয়মিত হয় না। গদ্যছন্দে সাধারণত অন্ত্যমিল থাকে না। তবে অন্ত্যমিল থাকলেও দোষের কিছু নেই।


মিশ্রছন্দ: একাদিক ছন্দের মিশ্রনে একটি কবিতা রচিত হলে তাকে মিশ্রছন্দ বলে। একটি কবিতার একাদিক চরণে একাদিক ছন্দ কিংবা একই চরণে ভিন্ন ভিন্ন ছন্দের সম বা বিষম পর্ব কিংবা ছন্দোবদ্ধ কবিতায় মাঝে মাঝে গদ্যের চাল যদি সচেতন ভাবে প্রযুক্ত হয় তবেই মিশ্রছন্দ হয়। অমিয় চক্রবর্তী বাংলা মিশ্রছন্দের প্রবর্তক হিশেবে গণ্য ।
রমুছাঁচ:  রংধনুর সাত রং, সঙ্গীতের সাতসুর এবং রহমান মুজিব নামের ৭ টি বর্ণের জন্য সাত চরণ আর নামের দুটি অংশের দুটি আদ্যাক্ষর ‘র’,‘মু’  এবং রূপপ্রকল্প বা রূপকাঠামো অর্থে ছাঁচ। একুনে রমুছাঁচ। এটি ৭ চরণের ছড়া বা কবিতা । ৫৬ থেকে ৮০ মাত্রায় এর বক্তব্য সমাপ্ত হবে। ১, ৪ এবং ৭ নং চরণ হবে ১১ থেকে ১৬ মাত্রার সমিল, সম-মাপের। অথাৎ চরণগুলোর মাত্রা সমান হবে এবং অন্ত্যানুপ্রাস থাকবে।  ২, ৩ এবং ৫, ৬ নং চরণ হবে ৫ থেকে ১০ মাত্রার। ২ ও ৩ নং চরণ হবে সমিল, সম-মাপের। আবার ৫ ও ৬ নং চরণ হবে সমিল, সম-মাপের। মিল বিন্যাস ‘কখখকগগক’। বৈচিত্র্যের প্রত্যাশায় মাত্রাগত ব্যাপ্তি রাখা হয়েছে। একই রমুছাঁচ এ একাদিক ছন্দ ব্যবহার করা যেতে পারে। রমুছাঁচ এর প্রথম চরণ হবে ভাব বা বিষয়বস্তুর উপক্রমণিকা যা চালিকাশক্তি রূপে রচনাটি এগিয়ে নেবে। ২, ৩ ও ৪ নং চরণে ভাবের বিস্তার, ৫ ও ৬ নং চরণে ভাবের সংশ্লেষণ ঘটিয়ে ৭ নং চরণে বক্তব্যে যৌক্তিক পরিণতি এনে সমাপ্তি টানতে হবে। এর ৭টি চরণ অন্তরগত ঐক্যে একটি বক্তব্যকে পূর্ণতা দেবে – যেমন করে রংধনুর সাত রং রংধনুকে, সঙ্গীতের সাতসুর সঙ্গীতকে পূর্ণতা দেয়। প্রতিটি রমুছাঁচের শিরোনাম থাকবে। একাধিক রমুছাঁচ এর সমন্বয়ে রমুছাঁচ পরম্পরাও রচনা করা যেতে পারে। স্বরমাত্রিক, স্বরাক্ষরিক, অক্ষরমাত্রিক বা মাত্রাক্ষরিক ছন্দে রমুছাঁচ লিখা হলে যে কোনো একটি ছন্দে মাত্রা সংখ্যা ৫৬ থেকে ৮০ এর মধ্যে থাকলেই হবে।  নিম্নে কয়েকটি রমুছাঁচ এর ছন্দ বিশ্লেষণ করে দেখানো হলো।


স্বরবৃত্ত ছন্দে রচিত একটি রমুছাঁচ এর ছন্দ বিশ্লেষণ:


। –     । –      । –    । ।     । ।   ।।       । । । ।
কখন কোথায় /আঘাত পেলে/ তারই ব্যথা/ ফুঁকেফুঁকে
।  –     ।।   ।।।
শোকের সপে/ লুটালে
।  –   ।।   ।।।
শামুক হয়ে/ গুটালে
। –     ।–      । ।    । ।    –।    ।–       । । । ।
আশার বেলুন/ ফুটো করে /ভাঙলে কপাল/ ঠুকেঠুকে।
। ।     । ।     – । ।
এটা কোনো/ কর্ম কী?
– ।   । –   –।  ।
সুস্থ্য মানব/ধর্ম কী?
।   ।।   –       ।। ।।    –।    । –      ।।  ।।
যা গেছে যাক/ চুকেবুকে/ বক্ষ মিলাও /বুকে বুকে।


স্বরবৃত্ত ছন্দে মুক্ত ও রুদ্ধ উভয় সিলেবল এক মাত্রা হিসাবে গণ্য হয়। তাই এখানে প্রত্যেক পূর্ণপর্বে ৪ মাত্রা এবং অপূর্ণ পর্ব ৩ মাত্রা রয়েছে। স্বরবৃত্ত চর চর করে চলতে স¦াচ্ছন্দ্য বোধ করে। এখানেও তা-ই হয়েছে। এর মাত্রা বিন্যাস ১৬, ৭, ৭, ১৬, ৭, ৭, ১৬ = ৭৬ মাত্রা। মিল বিন্যাস কখখকগগক।


মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত একটি রমুছাঁচ এর ছন্দ বিশ্লেষণ:


।।   ।।    ।।   ।।    ।।     ।। –     ।।–
দিকে দিকে/ জমে গেছে/ অপরাধ/ অনাচার
।।  ।।        – –
পথে পথে /জঞ্জাল
।  । –     –   –
মানুষের/ মন জাল
–       –    ।।    –      –।।   ।।     –
ফোঁস-ফাঁস /ছাড়ে তাই/ কেউটেরা/ ফণা তার।
।।     –      ।।    –
এসো আজ /সোজা হই
। । –      । ।  –
নাগিনীর/ ওঝা হই
। ।    –     – –      –।   ।     ।।   –
ভাঙা চাই /বিষদাঁত /চলবে না/ কণা ছাড়।


মাত্রাবৃত্ত ছন্দে মুক্ত সিলেবল একমাত্রা ও রুদ্ধ সিলেবল যেখানেই থাকুক দুই মাত্রা হিসাবে গণ্য হয়। সে বিবেচনায় এখানে প্রত্যেক পূর্ণপর্বে ৪ মাত্রা  রয়েছে। এর মাত্রা বিন্যাস ১৬, ৮, ৮, ১৬, ৮, ৮, ১৬= ৮০ মাত্রা। মিল বিন্যাস কখখকগগক।


অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত একটি রমুছাঁচ এর ছন্দ বিশ্লেষণ:


–। ।    । –      ।।      –। । ।    ।।  –
অঙ্গনে গোলাপ ফোঁটা/ দৃষ্টিভ্রমে করি ধার
–। –   –
গন্ধহীন ফুল
। । ।   । –
কাগজে রাতুল
। –    ।–।    । ।      ।।    ।।     । । –
অশেষ অমূল্য ভেবে/ টবে রাখি– গড়ি হার।
। । ।   । –
স্বকীয় রতন
। ।   ।   । –
পাবে না যতন
।   ।–    । । –      ।।    ।।   । । –
এ স্বভাব বাঙালির /কবে হবে পরিহার?


আমরা জানি অক্ষরবৃত্ত ছন্দে মুক্ত সিলেবল একমাত্রা ও রুদ্ধ সিলেবল শব্দের আদিতে বা মধ্যে থাকলে এক মাত্রা এবং শব্দের অন্ত্যে বা শেষে থাকলে দুই মাত্রা হিসাবে গণ্য হয়। সে বিবেচনায় এখানে ১, ৪ ও ৭ নং চরণের পর্ব বিন্যাস ৮/ ৮ মাত্রার এবং ২, ৩, ৫,৬ নং চরণে ৬ মাত্রার একটি করে পর্ব রয়েছে । এর মাত্রা বিন্যাস ১৬, ৬, ৬, ১৬, ৬, ৬, ১৬=৭২ মাত্রা। মিল বিন্যাস কখখকগগক।


স্বরমাত্রিক ছন্দ: যে কবিতা বা ছড়ার ছন্দ বিশ্লেষণ করলে স্বরবৃত্ত এবং মাত্রাবৃত্ত উভয় রীতিতেই সিদ্ধ হয় তাকেই স্বরমাত্রিক ছন্দ বলে। নিম্নে স্বরমাত্রিক ছন্দে রচিত একটি রমুছাঁচ এর পর্ব বিভাজন দেখানো হলো :


     ৪            ৪          ৩
যারা কেবল/ ঝগড়া করে/ বেহুদা
    ৪          ৪
দড়িটাকে /সর্প করে
     ৪          ৪
বাহুবলে /দর্প করে
       ৪              ৪          ৩
আবোল তাবোল/ যারা বলে /হে খোদা
     ৪          ৪
এবং যারা /তথ্য ঢাকে
      ৪          ৪
মিথ্যে দিয়ে /সত্য ঢাকে
       ৪            ৪          ৩
তাদের একটু/ বোধি-শোধি/ দে খোদা।


স্বরবৃত্ত ছন্দে এখানে ১১, ৮, ৮, ১১, ৮, ৮, ১১= ৬৫ মাত্রা আছে। আবার মাত্রাবৃত্ত ছন্দে গণনা করলে দেখা যাবে:


            ১০               ৩
যারা কেবল ঝগড়া করে/ বেহুদা
    ৪          ৫
দড়িটাকে /সর্প করে


   ৪          ৫
বাহুবলে /দর্প করে
             ১০                  ৩
আবোল তাবোল যারা বলে /হে খোদা
     ৫          ৫
এবং যারা /তথ্য ঢাকে
      ৫          ৫
মিথ্যে দিয়ে/ সত্য ঢাকে
             ১০                ৩
তাদের একটু বোধি-শোধি /দে খোদা।


মাত্রাবৃত্ত ছন্দে এখানে ১৩, ৯, ৯, ১৩, ১০, ১০, ১৩= ৭৭ মাত্রা পাওয়া যাবে। লক্ষ করলে দেখা যাবে ১০ মাত্রার পর্বকে প্রথম চরণে ৫, ৫ এবং চতুর্থ ও সপ্তম চরণে ৬, ৪ মাত্রায় বিভাজন সম্ভব।


স্বরাক্ষরিক ছন্দ: যে কবিতা বা ছড়ার ছন্দ বিশ্লেষণ করলে স্বরবৃত্ত এবং অক্ষরবৃত্ত উভয় রীতিতেই সিদ্ধ হয় তাকেই স্বরাক্ষরিক ছন্দ বলে। নিম্নে স্বরাক্ষরিক ছন্দে রচিত একটি রমুছাঁচ এর পর্ব বিভাজন দেখানো হলো:
        ৪            ৪          ৩
অদ্য যে বীজ /বপন হলো/ ভূমিতে
       ৪               ৪
কাল যদি দাও /পায়ে পিষে
     ৪             ৪
বিছন ধুলোয় /যাবে মিশে
    ৪             ৪            ৩
এমন হলে /পারা যায় ফুল/ চুমিতে?
        ৪             ৪
গাছ-পাতা-ফুল/ যত্নে জাগে
       ৪          ৪
ফলের ফলন /অনুরাগে
    ৪             ৪             ৩
পুষ্ট-প্রেমে/ হও-না বীজের/ সু-মিতে।


স্বরবৃত্ত ছন্দে এখানে ১১, ৮, ৮, ১১, ৮, ৮, ১১ = ৬৫ মাত্রা আছে। আবার অক্ষরবৃত্ত ছন্দে গণনা করলে দেখা যাবে:
            ১০                 ৩
অদ্য যে বীজ বপন হলো /ভূমিতে
        ৬            ৪                
কাল যদি দাও /পায়ে পিষে
        ৬            ৪      
বিছন ধুলোয় /যাবে মিশে
             ১০              ৩
এমন হলে কেমন পুষ্প/ চুমিতে?
         ৬            ৪        
গাছ-পাতা-ফুল /যত্নে জাগে
       ৬           ৪          
ফলের ফলন /অনুরাগে
             ১০                ৩
পুষ্ট-প্রেমে হও না বীজের/ সু-মিতে।


অক্ষরাবৃত্ত ছন্দে এখানে ১৩, ১০, ১০, ১৩, ১০, ১০, ১৩ = ৭৯ মাত্রা
পাওয়া যাবে।


অক্ষরমাত্রিক বা মাত্রাক্ষরিক: যে কবিতা বা ছড়ার ছন্দ বিশ্লেষণ করলে মাত্রাবৃত্ত এবং অক্ষরবৃত্ত উভয় রীতিতেই সিদ্ধ হয় তাকেই স্বরাক্ষরিক ছন্দ বলে।নিম্নে অক্ষরমাত্রিক ছন্দে রচিত একটি রমুছাঁচ এর পর্ব বিভাজন দেখানো হলো :


          ৮                     ৬
থোড় বড়ি খাড়া হলে/ খাড়া বড়ি থোড়
            ৮              ২
এক পা এগোলে ফের/ বাধা
          ৮            ২
এটা যেন জাদুকরি/ ধাঁধা
            ৮                     ৬  
গোলেমালে তালেগোলে/ কাটে না তো ঘোর।
         ৮
একে মারে ওকে মারে
          ৮
প্রতিদিন জেতে হারে
           ৮                     ৬
তুমি খোকা কেন চাও /সোনা রং ভোর?


অক্ষরবৃত্ত এবং মাত্রাবৃত্ত উভয় ছন্দেই এখানে ১৪, ১০, ১০, ১৪, ৮, ৮, ১৪ = ৭৮ মাত্রা পাওয়া যাবে। মাত্রাবৃত্ত ছন্দে ৮ মাত্রার পর্বকে ৪, ৪ এবং ৬ মাত্রার পর্বকে ৪, ২ পর্ব বিভাগ করে পড়তে হবে। যেমন:


     ৪           ৪            ৪       ২  
থোড় বড়ি/ খাড়া হলে/ খাড়া বড়ি /থোড়
     ৪         ৪            ২
এক পা এ/গোলে ফের/ বাধা


    ৪        ৪         ২
এটা যেন /জাদুকরি/ ধাঁধা
       ৪           ৪            ৪           ২      
গোলেমালে/ তালেগোলে/ কাটে না তো/ ঘোর।
       ৪          ৪
একে মারে /ওকে মারে
    ৪         ৪
প্রতিদিন /জেতে হারে
     ৪           ৪            ৪       ২  
তুমি খোকা/ কেন চাও /সোনা রং /ভোর?


লক্ষ করলে দেখা যাবে দ্বিতীয় চরণে এক পা এ/গোলে ফের/ বাধা
কাব্যাংশে ‘এগোলে’ শব্দটিতে মধ্যখণ্ডন হয়েছে।


উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বাংলা ভাষার বর্ণীত ছন্দ সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণাসহ রমুছাঁচ এবং এর ছন্দ বিষয়ে একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।


  বাংলা ছন্দের রেখাপাত রচনায় ঋণ স্বীকার:


১) নূতন ছন্দপরিক্রমা: প্রবোধ চন্দ্র সেন। প্রথম সংস্করণ, চতুর্থ মুদ্রণ, ১৯৯৫। আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা।
২) ছন্দ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রবোধ চন্দ্র সেন সম্পাদিত। বর্ণবিচিত্রা সংস্করণ, ২০০৫। বর্ণবিচিত্রা, ঢাকা।
৩) ছন্দ-সমীক্ষণ: আবদুল কাদির। প্রথম প্রকাশ, ১৯৭৯। মুক্তধারা, ঢাকা।
৪) কবিতার ক্লাস: নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। পরিবর্ধিত পঞ্চম সংস্করণ, ১৩৮৫। অরুণা প্রকাশনী, কলকাতা।
৫) আধুনিক বাংলা ছন্দ: নীলরতন সেন। প্রথম পর্ব। প্রথম দে’জ সংস্করণ, ১৯৯৫। কলকাতা।
৬) বাংলা কবিতার ছন্দ: মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। চতুর্থ সংস্করণ, ৩য় মুদ্রণ, ২০০১। প্রতীতি প্রকাশন, ঢাকা।
৭) বাংলা গান রচনাকৌশল ও শুদ্ধতা: মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান। প্রথম প্রকাশ, একুশে বইমেলা ২০১২।হাওলাদার প্রকাশনী,ঢাকা।
৮) ছন্দ ও অলঙ্কার: ডঃ বিমলেন্দু দাম। চতুর্থ পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত সংস্করণ, ২০০২। যোগমায়া প্রকাশনী, কলকাতা।
৯) ছন্দের বারান্দা: শঙ্খ ঘোষ। দ্বিতীয় পরিবর্ধিত সংস্করণ, ১৩৮২। অরুণা প্রকাশনী, কলকাতা।
                                                 - ০-