মাদার গাছে মোরগ বসে
ককর ককর মধুর রসে
সুরেরে ছড়া কাটছিল
পিয়াল বাগের শিয়াল শোনে
গোস্ত খাবার স্বপ্ন বোনে
ফন্দি ফিকির আঁটছিল।
তাইরে নাইরে তাইরে নাইরে
গাছের তলায় হাঁটছিল
জিভের ডগায় লোভের লালা
আপন মনে চাটছিল।


পিয়াল পাতার টুপি মাথায়
বললো শিয়াল আস সালাম
মুয়াজ্জিনের কন্ঠ শিরিন
শুনবো সুখে খাস কালাম।


আসুন নেমে মোরগ মশায়
পড়বো নামাজ একসাথে
জামাত করে পড়লে নামাজ
মিলবে অনেক নেক তাতে।


মোরগ ভাবে কেল্লা ফতে
কেমনে বাঁচি শিয়াল হতে
লাগছে মনে ভয়;
মায়ের কথা পড়ছে মনে
বলছিল মা মরার ক্ষণে
ভয়কে করিস জয়।


খেললো হঠাৎ বুদ্ধিখানা
বললো মোরগ জড়িয়ে ডানা
একটু সবুর শিয়াল সাব
ঈমাম গেছে করতে অজু
ওই দিকে এক মামলা রজু
আসছে না হাঁস জামাতে
ঈমাম তারে আনবে ডেকে
থাকুক না হাঁস যতই বেঁকে
পারবে না আজ থামাতে
তাঁরা এলেই পড়বো নামাজ
এটাই আমার খিয়াল সাব।


একটু বসে জিকির করুন
চক্ষু মুদে স্বর করে
শুনলে জিকির ইবলিশ আলীর
বুকের ভেতর ডর ধরে।


শিয়াল ভাবে ‘উয়াও’
মোরগ পেলাম হাঁসও পাবো
হুক্কাহুয়া হুয়াও
হুক্কাহুয়া হুয়াও!


হাঁসের গন্ধে শিয়াল মশায়
সুরের জিকির করছিল
বিকট ভয়ে বনের পাখি
গাছের ডালে নড়ছিল।


আড়ালে এক তাগড়া কুকুর
তন্দ্রা চোখে ঝুলছিল
তিনি নাকি খান্দানি খুব
গায়ে বিশাল চুল ছিল।


হুক্কাহুয়া সুরের তানে
তার হয়েছে কান খাড়া
বললো বেটা আসছি দাঁড়াও
করবো তোমায় প্রাণ ছাড়া।


খ্যাক খ্যাক
ঘেউ ঘেউ
কই গেল
কোথা ফেউ?
ধরবো রে ধরবো
তার ঘাড়ে চড়বো।



শিয়াল ভাবে খাইছেরে
কুকুর আমায় পাইছেরে
লোভের আশা যাই ছেড়ে
সবার আগে বাঁচা
বাঁচলে যাবে নাচা
ছুট ছুট ছুট
নইলে জীবন লুট!


মোরগ বলে বাক দিয়ে
যাচ্ছ কোথায় শিয়াল শাহ
ছুটলে নাকি শিয়ালদাহ?
ঈমাম সাহেব আইস্যা গেছে
এই যে আমি নামতেছি-
শিয়াল বলে হাঁক দিয়ে
আমার অজু ছুইট্যা গেছে
গায়েতে জ্বর উইঠ্যা গেছে
মরার জ্বরে ঘামতেছি!


লেজগুটিয়ে পালায় শিয়াল
কুকুর ছুটে পিছে
এমন মজা দেখছনি কেউ
গল্পটা নয় মিছে।


জংলা ঘেষা গাঁও গেরামে
দেখতে পাবে গেলে
মুরগি চোরা শিয়াল নিয়ে
কুকুর কেমন খেলে।


আবার যদি খেয়াল করো
দেখবা লোকালয়ে
দুই পাঅলা শিয়াল কতক
খেলছে বোকা লয়ে –
ওরা ভীষণ দুষ্টু পাজি
স্বার্থবাদী ধূর্ত
কল নাড়াতে মস্ত কাজি
ইবলিস ওরা মূর্ত ।


ওদের থেকে বাঁচতে হলে
লাগবে সজাগ কানটা
নইলে ওরা গায়বে কিন্তু
তাইরে নাইরে গানটা;
এক নিমেষে যেতে পারে
যত্নে পোষা মানটা।


কিংবা ওদের নোংরা ফাঁদে
টেনে তোমায় নেবে খাঁদে
কলে পড়ে সাঙ্গ হবে
সাধের জীবন-জানটা।


*লোকজ গল্প অবলম্বনে
যশোর ১৮/৮/১৫