“ও ভাই ভয়কে মোরা জয় করিব হেসে
গোলাগুলির গোলাতে নয় গভীর ভালবেসে।”


কবি যতীন্দ্র মোহন বাগচী (১৮৭৮-১৯৪৮) মহোদোয়র  কালজয়ী এ কবিতাটি বার বার প্রাণে বাজছিল। পড়ছিলাম আসরের কবি প্রনব মজুমদার এর ‘হামি’ শিরোনামের কবিতা –


“ একটা হামি দাও/ দিলাম
কুঁড়ি ফুল হয়ে গেল,
একটা হামি দাও/ দিলাম
ছেলে বড় হয়ে গেল,…
আমার কাছে কোন আগ্নেয়াস্ত্র নেই
আছে অসংখ্য হামি
ভাবছি কি করে সবকিছু সুন্দর বানাই……


পড়তে পড়তে হোডিনির যাদুর মতো ক’টি দৃশ্য চোখে ভেসে উঠে। এ কী জাদুবাস্তবতা (Magic Realism)? খেয়াল করে দেখলাম না বাস্তবইতো। হামি ভালোবাসার প্রতীক। কুঁড়ি ফুল হয়ে যাওয়া, শৈল্পীক ইংগিতে  নর নারীর ভালোবাসায় মানব বর্ধনের বিষয় উঠে আসে। অপর হামিতে ছেলে বড় হয়ে যাওয়া, পিতা- মাতা ও সমাজের যত্নে মানব শিশুর মানুষ হয়ে ওঠা, এবং এতে যে স্নেহ-ভালোবাসার প্রয়োজন তা যাদুর মতই উঠে আসে। অতপর প্রবোদ্ধা কবি তাঁর বোধ ও ইপ্সার কথা বলেন, তিনি বলতে চান পৃথিবীটা ভালোবাসায় ভরপুর হলে এর শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য আগ্নেয়াস্ত্রের প্রয়োজন ফুরাবে। বাস্তববাদীরা হয়তো বলবে, “ এটা ইউটোপিয় ভাবনা”। হোক না, তাতে কি;  কবির শান্তিবাদী মনোভাব এবং মানব প্রেমের পরিচয়তো পাওয়া গেল। স্বপ্নতো কবিরাই দেখবে আর কবিতার পাঠকতো জেনে নিল ভালোবাসার শক্তির কথা, যা আমাদের অগ্রজ কবি যতীন্দ্র মোহন বাগচীও বলে গেছেনে । বাগাচী মহোদয় চেয়েছেন ভালোবাসা দিয়ে ভয়কে জয় করতে। অন্যদিকে কবি প্রনব মজুমদার চান হামি তথা স্নেহ ভালবাসার মাধ্যমে সারা পৃথিবীকে সুন্দর করে তুলতে। দুই শতাব্দীর দুজন কবি কতটা শান্তিবাদী! ভাবনায় কাছাকাছি থেকেও কতটা আলাদা!

কবি প্রনব মজুমদার এর শব্দচয়ন, বাক্যবিন্যাস, প্রকাশভঙ্গি সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং আকর্ষণীয়।  মতিবাক এ কবির আকাঙ্খার সাথে তাল মিলিয়ে আসুন আমরা হামি তথা ভালোবাসার কারখানা গড়ে তুলি দেশে দেশে, ঘরে ঘরে। যদি শ্রী চৈতন্য দেবের মতো প্রেমে মত্ত হতে পারি তো মানব শিশুকে হিংসার আগুনে দগ্ধ হয়ে প্রাণ দিতে হবে না। ঘুচে যাবে ধর্ম-বর্ণ আশরাফ- আতরাব ভেদ।


মেদহীন অনন্য এ কবিতার জন্য কবিকে অভিনন্দন জানাই।