হে বীর!
আত্মাহুতি দিয়াছ নিজ আত্মায়,
সহিয়াছ অনেক বেদনা; শুধু যে,
তুমি স্বরাজ দিতে মোদের।
ওরা দুর্বিষহ করিয়া ছিল জীবন
তব, তবুও নাহি ত্যাগ করিয়াছিলে
নতুন প্রভাতের স্বপ্ন।


হে বীর!
স্বর্গ থেকে চাহিয়া দেখ তব স্বপ্ন
আজি পূরণ হইয়াছে কিনা!
তুমি দেখিয়াছ কি!তোমার স্বাধীন
ভারতের সূর্য্যদয় লাল না ফ্যাকাসে?
ব্রিটিশ করিয়াছে লুট ধন-সম্পদ,
আজ লুট হইতেছে ভাতৃত্ব, মনুষত্ব।


হে বীর!
বিদেশী ইংরাজ তাড়ায়েছ ঠিকই
কিন্তু স্বদেশী ধরিবাজ ধান্দা লইয়া
ধাবড়ে বাঁধিয়া রাখিয়াছে মোদের।
স্বরাজ পেয়ে রাজ করিতেছে তারা
স্বরাজ হয়েছে তাদের, স্বরাজ পায়নি
জনগন।


হে বীর!
তুমি যদি বাঁচিয়া থাকিতে, তুমিও
ভীষন লজ্জা পাইতে এই নিষ্ঠাবান
স্বাধীনতার ধরন দেখিয়া। এখানে
ভিখারির চাল পুটলি নানা অজুহাতে
কাড়িয়া লয়, ভিক্ষুক ভিক্ষা করিয়া
সামান্য কিছু সঞ্চয় করিলে তাহা
নেতা মন্ত্রী ব্যাঙ্কের জাল বিছায়াইয়া
পারিশ্রমিক উধাও করিয়া লয়,বিচার
জীবন ভোর চলে।রায় হয় ঠিকই সেটা
বাদী ও বিবাদী পরলোকে যাওয়ার পর।


হে বীর!
তোমার ওই ফাঁসির রশ্মিটা নিয়েও
এই স্বাধীন ভারতের নেতা মন্ত্রীরা
কাছি টানাটানি খেলিতে থাকে, শ্রদ্ধায়
ডগমগ হয় আপনার লোক বলে।
ভাগ্যিস ইংরাজ তোমায় শহীদ করিয়াছে,
নচেৎ তুমি জীবিত থাকিলে ইহারা তব দুই
হাত দুই দিকে টানিয়া ছিঁড়িয়া শহীদ করিয়া
দিত।তখন ইংরেজদের কথা মনে পড়িয়া
আপসোস হইত।


হে বীর!
তোমার বিরত্বকে এঁরা বিষ চোখে দেখিত
যদি তুমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করিতে,
কিংবা প্রতিবাদ করলে রাতের অন্ধকারে
মারিয়া ফেলিত।এরা তোমাদের মতো
বীরকে শ্রদ্ধা জানানো তো দূরের কথা
রাতের অন্ধকারে তোমার প্রতিমূর্তিতে
কালি ঢালিয়া দেয় বা প্রতিমূর্তি উধাও
করিয়া দিয়া বীরত্বের নমুনা দেয়।
এরা মন্দকে ক্লিনচিট দিয়া সাধুকে দেশের
শত্রু বলে চিহ্নিত করে।
এরা কি মহানুভব!অযোগ্যকে যোগ্য বলে
উৎকোচ খাইয়া দেশ সেবক বলিয়া
নির্বাচিত করে আর যোগ্যকে দূরে ঠেলিয়া
দেয়, যোগ্য তাঁর প্রাপ্য সম্মান না পাইয়া
আত্মহননের পথ বাছিয়া লয়।


হে বীর!
তোমার স্বপ্নের দেশে মড়া পুড়া থেকে
ফোঁড়া ফাটানো সবই জনগণকে উৎকোচ
দিতে হয় গুনিয়া গুনিয়া।
তোমার স্বাধীন দেশের পরিবারের বিচার হয়
পার্টি অফিসে ঘুষের বিনিময়ে, ভাগ বখরা
হয় তাদের নিজ গুনে পদের বিচারে।
তোমার এই স্বাধীন ভারতে মূল্যহীন বস্তু
বিক্রয় হয় চোখ ধাঁধানো বিজ্ঞাপনে,হাজারো
মিথ্যা তবুও কোন প্রতিবাদ নেই, যাঁরা
প্রতিবাদ করে রাতে উৎকোচ গেলার জন্য।
তোমার স্বাধীন দেশে প্রতিরক্ষার সৈনিক হতে
উৎকোচ গুনীতে হয় দালালকে দিয়া।সম্মুখে
সাধুর লেবেল, পশ্চাতে উৎকোচের দরজা খোলা।


হে বীর!
এরা সংবিধানকে অনেক সন্মান দিয়া জন প্রতিনিধি
নির্বাচন করে জনগণকে বন্ধুক দেখাইয়া ভোট লয়,
কিংবা জনগণকে ঘরের মধ্যে বন্দি রাখিয়া এক লোক
একশটা ভোট দিয়া প্রার্থীকে জয়ী করে,বা ভোট
বাক্সের কাছে দাঁড়াইয়া লাল চক্ষু দেখাইয়া ভোট
লুট করে, বা ভোটের আগের দিন রাত্রে বাড়ি বাড়ি গিয়া
প্রতিবাদীর বউকে সাদা থান দিয়া হুমকি প্রদত্তে
নিজ প্রার্থীকে নির্বাচিত করিয়া লয়।আহা!কি তোমার
স্বাধীন দেশ।মনে হয় যেন স্বর্গে বসবাস করিয়াছি।


হে বীর!
তোমার এই স্বাধীন দেশে ইতিবৃত্তের ইতি নেই,
তোমায় শ্রদ্ধাভরে ভক্তিতে ভূমিষ্ঠ প্রণাম হই।


আমার এই মহান ভারতের সংবিধানের প্রতি
পূর্ন আস্থা রহিয়াছে, একদিন না একদিন এই
সংবিধানের পূর্ন মর্যাদা আমার জন বন্ধু দেবেন।
ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করে সংবিধানের আশীর্বাদে
জনগন প্রকৃত স্বাধীনতা পাইবেন।
                               --------- রঞ্জন গিরি।