আমি এবং আমার ফ্রেনড হুমায়ারা হুমু ঘুম থেকে উঠ্লাম। তারপর ঠিক করলাম গুলশান যাব একটা কাজে। তার আগে আপনাদের সবাইকে হুমায়ারা সর্ম্পকে বলে নেই, হুমায়ার সাথে আমার পরিচয় কোচিং এ। টুকটাক কথা বলেই ওর সাথে আমার ভালো বন্ধুত্ত হয়ে গেছে। ওর সাথে কোচিং এর অন্যান্য ফ্রেন্ড রা মিশতো না । আমি যতটুকু জানি হুমুর সাথে অন্যান্য দের না মেশার কারন হল হুমু একটু কেমন জানি। খুব অপরিষকার আর  বাসার জামা কাপর পরে কোচিং এ চলে আসতো।  আর পায়ে পরতো বাসায় আমরা যা পরি তা ই । অন্যান্য ফ্রেন্ডরা ওকে নেগ্লেকট করলে ও আমি কেনজানি ওর সাথে মিশতাম।
যাইহোক  আজ থেকে ১ বসর আগে কোচিং এ যেদিন ওর সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল ,কথা হয়েছিল , ও বলেছে আমার বাসার ঠিকানা দিতে।আমিও ততখনাত দিয়ে দিলাম। আমি বেশি কিছু জানতে চাইনাই। ৩/৪ দিন যেতেই হঠাত একদিন বিকেলে আমাকে ফোন করল যে আমার বাসায় আসবে। আমি তখন স্টুডেন্ট এর বাসায় ছিলাম। তাই আসতে মানা করলাম। তার ২ দিন পর  আবার ফোন দিল যে 'রিক্তা, আমি তোদের এলাকায় আসছি তোদের বাসায় আসবো।'
  আমি বলেছি অকে আয়।
হুমু আসছে, অনেক গল্প করেছি আমরা। কিন্তু সকাল গড়িয়ে বিকেল হল ওতো যাচ্ছে না। আমি তো রীতিমত ভয় পাচ্ছিলাম।কোচিং এ প্রথম দেখা , ভাল নাকি খারাপ জানিনা।  তারপর সন্ধা ,রাত ,আবার সকাল হল । আমার ভয় আরো বাড়ছিল। কিন্তু ও তো ইচ্ছা মত সিনেমা দেখছে, আমার বোন দের সাথে গল্প করছে, আমিও সবার সাথে দুষ্টুমি করছিলাম।  কিন্তু মনে তো ভয় ছিলো। তারপর দুপুরের খাবার খেয়ে ও চলে গেল।


আমি খুব অবাক হলাম ।মেয়েটা এমন কেনো?  তারপর ওকে মাঝে মাঝে প্রয়োজনে ফোন দিলে রিসিভ করতো না । আমি ১০/২০ বার ফোন দিতেই থাকতাম। থাক আর কথা বাড়াব না । পরে দেখা গেল হুমু আমাকে অনেক দিকে হেল্প করছে।আমি ও করতাম। কিন্তু ও মাঝে মাঝে খুব মিথ্যা কথা বলত। আমি ধরে ফেলতাম কিন্তু কিছুই বলতাম না।  এভাবে চলতে থাকল।
দুইজন দুইজনের প্রয়জনে হেল্প করে ভাল বন্ধু হয়ে যাই , আর হেল্প টা ছিল লেখাপড়া নিয়ে।  হুমু সম্র্পকে আর ও একটু বলি ওর বাড়ি কুমিল্লায় ।আমার বাড়ি বি,বাড়ীয়ায়। আমি ছোট থেকে ঢাকায় থাকি। হুমু কুমিল্লা থেকে ভারসিটি তে ভর্তি পরিক্ষা দিতে ঢাকায় আসে।ওর বাড়ির আর্থিক অবস্থা খুব ই ভাল।কিন্তু হুমুর চালচলন  দেখলে বুঝা যায় না।
ভালো বন্ধুত্তের পর ও আমার বাসায় প্রায় ই এসে থাকে । সেদিন ও ছিল ।আর প্রতিবার ই ৪/৫ দিন না থেকে যায় না। আমরা সবাই খুব মজা করি ।রাত জেগে মুভি দেখি।ও আমাদের কে ফুচকা,আইসক্রিম খাওয়ায় । মাঝে মাঝে বিকেলে ঘুরতে যাই। আর এখন ওর চাল্চলন এর ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে।


সেদিন ১২ তারিখে আমি আর হুমু যখন গুল্শান যাচ্ছিলাম রাস্তায় কোন বাস।লেগুনা দেখ্ছিলাম না।আর মাথার উপরে প্রচন্ড রোদ ছিল।খুব অস্থির লাগছিল। তারপর বাস সট্যান্ড থেকে আসাদ গেইট পরযন্ত রিক্শা ই গেলাম । আসাদ গেইট এ নেমে দেখি জ্যাম আর জ্যাম। বাস তো খালি নাই ই বরং দাড়ানোর জাইগা ও নাই।লেগুনা ও পাচ্ছিলাম না। ১৫/২০ মিনিট অপেক্ষা করলাম। তারপর আমি ঠিক করলাম হেটে গেলে কেমন হয়? যেই ভাবলাম সেই কাজ করলাম ! হেটে হেটে খামারবাড়ি তে গেলাম । ভাবলাম বাস টাস কিছু একতা পাব । কিন্তু হতাশ হলাম ।কিছুই পেলাম না।  হেটে হেটে ফার্মগেইট গেলাম ।সেখানে গিয়ে ও গুল্শান এর  বাস পাই নি। কি যে করুন অবস্থা আমাদের হল। ও আসল কথাটা তো বলা ই হয়নি। আমরা যখন আসাদগেইট থেকে হেটে খামাড়বাড়ি যাচ্ছিলাম তখন এক বৃদ্ধা মহিলার সাথে দেখা । বয়স ৭৫-৮০ হবে ।ছেঁড়া শাড়ি পড়া ছিল।রাস্তায় ভিক্ষা করছিল।আমার কাছে এসে যখন টাকা চাইল আমি,হুমু দুইজন ই টাকা দিলাম। পরে জানতে চাইলাম ওনার ছেলে মেয়ে আছে কিনা। তিনি বলেছে তার কোন ছেলে মেয়ে নাই।তিনি একা । নিঃসন্তান। গত ২  বছর ধরে গোসল, খাওয়া দাওয়া করে না।তার মাত্র একটা ই শাড়ি কাপর আছে। তাও ঐটা ছেড়া।মাঝে মাঝে দোকান থেকে রুটি কিনে খায়। মাঝে মাঝে মানুষের কাছ থেকে চেয়ে কিছু খায়।  
তিনি আমাদের কাছে সাহায্য চাইল।কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারলাম না।
মাঝে মাঝে আমরা যখন এই ঘট্নার সামনে দাড়াই কিছুই করার থাকেনা।কিন্তু খুব মন খারাপ হয়ে যায়।আল্লাহ কে বলতে ইচ্ছা করে কেন মানুষের জীবন টা এমন হয়???