বৈশাখের দিনে
রীনা তালুকদার


কথাইতো বোশেখের ঝড় আনে
প্রাণে যে সুর খেলা করে
সেখানে মোহগ্রস্ত আদরমাখা পঙক্তি
আমার প্রকৃতিতে এখনো চৈত্রের খর আক্রমণ নেই
কেবলই বোশেখ বোশেখ ঝড়ো হাওয়ার উল্লাস


তোমার সোহাগী বাক্যের অসম বাণ
শিলবর্ষণ আলো আঁধারির ঘোরে মনপ্রাণ
ভালোবাসার চাদরে মোড়া চারপাশ
আকাশের বিপুল বেদনার কলস উপুড়
এদিকে তুমুল ভালোবাসার ঝড় ঝাপটা
তোমার তান্ডবে মুছে যায় গ্লানি যত
রাত্রি ঘনিয়ে এলে বুঝি কাল বৈশাখীর শক্তিরথ
ভাসিয়ে নিয়ে চলে আমাকেও
লক্ষ্ণীপেঁচা মেঘের ডমরু ডাকে চোখ খোলে না
দূরে বাদ্য বাজনা শাঁখ সাথে বাউলের উদাস কণ্ঠ
কোনো এক কালে আমাদের পূর্ব পিতা ও প্রপিতামহোদের
কালের উচ্ছাস ছিল ঐতিহ্যের বৈশাখ জুড়ে এই লোকালয়ে
সে সময় গৃহিনীরা ঘরবাড়ি পরিচ্ছন্নতায় ব্যস্ত হতো
আর শিশুদের বলতো পরব না গেলে
আম খেয়ো না পেটের পীড়া হবে
দুপুরের কাঁঠালের ইছড় রান্নার পদে বনকচু, বহুরূপী ডালে
মজার চেয়ে বৈশাখী আমেজই থাকতো বেশী


দিন যত যায় বৈশাখ পোশাক বদলে আসে
ছোটবেলার বৈশাখ পরিপক্ক এখন বয়েসী আয়েশে
আমাদের কথার মধ্যে বৈশাখ খেলে যায় কালবৈশাখের দৌড়ে
বৈশাখের প্রথম দিনের থই থই প্রহর
কলকাকলিত শহর নগর গঞ্জে গঞ্জে বৈশাখী পালের হাওয়া
কালো মাথায় গাজরার মালা, সাদা শাড়ী লাল পাড়
উল্টোটাও দেখা যায়; আর ওদিকে লাল পাঞ্জাবী পাজামা
দুরন্ত ভিড় ঠেলে রমনার মেলায় প্রবেশের সাহস নেই কতদিন!


শাহবাগ মোড়ে রাস্তার কার্নিশে বসে দেখি
তারুণ্যের বৈশাখী উচ্ছাসী দিন
নতুনের সাথে পুরানের হৃদয় মিতালী
মৈত্রীর বন্ধনে প্রাণে প্রাণে আনন্দের ঢেউ
দেখে দেখে এসব ভাবি ওদের মধ্যেই
আমরা বিবর্তিত হয়ে যাচ্ছি
বয়েসী চোখের কাঁচে তরুণ ডারউইনের ছবি


গ্রামের নুন আনতে পানতা ফুরানো গৃহস্থ
বৈশাখের দিনেও যায় মাঠে চাষবাসে
সবজি বাগানের সতেজ সবজি তোলে
আম গাছের চৈতালী ফল নিয়ে যায় হাঁটে
বৈশাখের প্রথম দিনে বিক্রি হয় ভালো
সামর্থবানের ঠিক ঠাক হয় যেনো বৈশাখী উৎসব
রাত্রি করে বাড়ী ফিরে যৌথ জীবনের কর্তা রোজকার চেহারায়
পা পা করে হেঁটে হেঁটে জীবনের হিসেব মিলায়
ছোট ছেলেটা আসবার সময় বলেছিল :


ছোট একটা আম কাটার চাকু আইনো বাবা
সিঁদুর গাছের আমগুলো বেশ বড় হইছে
ঝটকায় গাছে ওঠে কাইট্টা খামু
বাবা ভাবছে; আম নেই চাকু কিনে হবে কি ?
সাধের সিঁদুর আম গেছে চলে অন্য হাতে


বউ বলেছিলো: তাড়া তাড়ি বাড়ী ফিরতে
বৈশাখ শুরুর দিন বছরের প্রথম দিন কি-না
আগে ফিরতে পারলে বছরের বাকী দিন
দেরী করে ফিরতে হবে না আর
অপুষ্টি চেহারায় বউয়ের অপেক্ষার কুপি হাতে
দুয়ারের চৌকাঠ হেলানে বসে থাকা ভাল লাগে না
সারাদিন খাটাখাটুনির পুষ্টিহীন শরীর
গঞ্জের দিনে রাত্রিতে প্রতীক্ষার চোখ;
না, হলো না আর আগে ফেরা


ফসল বেচে রাত গেলো বেড়ে অন্যদিনের অভ্যাসে
নিত্য দিনের চিত্র এই সব
হামলে পড়া বৈশাখ যায় বৈশাখ আসে
অভ্যস্থ জীবনের জোড়াতাড়ি সেলাই করা সময়


পানতা ফুরানোদের জীবন চিত্রের সাথে
বিভিন্ন বয়সের ডারউইন বৈশাখের উৎসবে
পরিবেশ ভেদে জাগ্রত থাকে মানুষের দুয়ারে।


নোট: পরব বা গলিয়া আঞ্চলিক ভাষার এ দুটি শব্দের অর্থ বৈশাখী গ্রাম্য উৎসবকে বুঝানো হতো।