রূপমের কাছ থেকে যখন শুনলাম,
ডিভোর্সের আইনী লেটারের কথা,
সেই মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
মাথাটা ঘুরে গেল,প্রেসারটা আর একটু চাড়া দিল।
চোখে দুফোঁটা জল এসে গেলো…
বলেছিল মিউচুয়াল চাইলে নিতে পারো।
বললাম... তোমাকে ভালোবাসি... তুমি বলতে পারলে
এতো কুৎসিত কথাটা…
বললো, ন্যাকামি কোরোনা…


তখন ছিল শরৎ সন্ধ্যা!
বর্ষার শেষে প্রকৃতি যেন নতুন সাজে,
ঝিরিঝিরি সন্ধ্যা বায়ুর নির্মল ছোঁয়া...
আমাকে আচ্ছন্ন করেছিল।
ঠিক সেই সময় আমার উপন্যাসের, দ্বিতীয় ভাগ চলছিল,
ছাদের এক কোণায় আমি বসে পড়লাম।
তার বিষাক্ত কথাগুলোর ছোবল লাগলো
আমার সমস্ত মন জুড়ে,
হাত থেকে পড়লো কলম…
নিজেকে সহজ করার চেষ্টা করলাম,
কিন্তু কথাগুলো বিদ্যুৎ স্পর্শর মতো
আমাকে বারবার চাবুক মারছিল,
বলেছিলাম...  আমার ছেলেটা…
বললো, ওকে হোস্টেলে দিয়ে দেবো।
বললাম বুঝতে পারিনি, তোমার মাসির মেয়েকে
আজও ভুলতে পারনি তুমি, তাইনা…
এতদিন কি সবটাই অভিনয় ছিল?
বললো তোমার ভাবনা অসীম,
যা খুশি ভাবতে পারো…


যাইহোক, অনেকটা কাল কেটে গেছে।
আমার ছেলে এখন একটা চাকরী পেয়েছে।
মা ছেলেতে ভালোই আছি, ঠিকানাটাও বদলে নিয়েছি।
একদিন, ছেলে বললো চলো মা,
তোমাকে একটু বেড়িয়ে নিয়ে আসি।
গেলাম আমরা উটি, খুব মনোরম জায়গা।
এক সময় ছেলেটা আমার গায়ে একটা শাল ভালো করে জড়িয়ে দিচ্ছিল,
বললো, মা... জানোনা তোমার ঠান্ডা লাগার ধাত আছে।
এভাবে…


হঠাৎ কে নাম ধরে ডাকে…
যে ডাকে, মুহূর্তে আমার বুকের রক্ত হিম হয়ে গেল।
পিছন ফিরে দেখি রূপম!
বললো কেমন আছো…এখানে কবে আসা হয়েছে?
মুখে একরাশ কাঁচাপাকা দাড়ি, চোখে মোটা গ্লাসের চশমা।
যেন সবটা অচেনার মধ্যে, কোথায় যেন চেনা...
কি বলবো ভেবে পেলামনা।
ছেলে জিজ্ঞাসা করলো কে মা?
বললাম, একজন চেনা মানুষ।
ছেলেটা বললো চেয়ারে বসো মা, আমি চা নিয়ে আসছি।
ও যেতেই  রূপম বললো, ওকি আমার…
থামিয়ে দিয়ে বললাম, ও শুধু আমার ছেলে…
বললো,আমাকে ভুলে গেছো তা জানি।
বললাম, ঝরে কত তারা পলকে,
বলো মনে রাখে তাকে কে?
বললো আমাকে ক্ষমা করে দাও অতসী...
বললাম আমাকে তুমি ফিরিয়ে দিতে পারো,
বিচ্ছেদের এতোগুলো বছর?
ও দূরের পানে চেয়ে রইলো...
ছেলে এসে বললো, চলো মা হোটেলে ফিরে যাই।
ও বসে রইলো একা…
কষ্ট হলো আমার, কিন্তু এটাই স্বাভাবিক
এটাই জীবন।