শরৎ কে বলেছিলাম আরো কিছুদিন থাকতে
শরৎ আমায় বলল নাগো বন্ধু থাকতে পারব না ।
আমি যে হেমন্তকে নেমন্তন্য করেছি,
আমার ক্ষণগুলিকে তোমার অনুভূতিতে রেখে দাও
যখন মনে পড়বে অনুভব করে নিও লগ্ন দেখে
ঠিক আছে বন্ধু আবার এসো কিন্তু ।


হেমন্ত এসে বলল কেমন আছ বন্ধু ?
বাগানে ফুটা ফুলের শুভেচ্ছা তোমাকে
অনেক ধন্যবাদ বন্ধুবর,
আমি কি দিয়ে বরণ করি বলতো ?
ইচ্ছে করছে না তোমায় ঘরে তুলতে
তবু, ঘরে তোমাকে তুলতে হবে ।
আচ্ছা এবার তুমিকি একটু তারা তারি যেতে পারবে ?
কেন বলতো বন্ধু ?
আসতে না আসতে এত উতলা হলে কেন ?
এমনি এমনি কি আর উতলা হচ্ছি
তুমি এসেই পত্র পল্লব শুকিয়ে দিচ্ছ যে,
শরীরে বইছে জলহীন বায়ু, এ যে  
জানান দিচ্ছে কন কনে শীতের ।
ওর কথা ভাবলেই বুকে কাঁটা বিঁধে ।
তাই বুঝি, তাহলে আমাকে তাড়াচ্ছ কেন?
তাড়াচ্ছি নাতো তুমি তারা তারি গেলে
শীত ও একটু দ্রুত যাবে এই আর কি
আচ্ছা ঠিক আছে আর কটা দিন থেকে যাও
ধন্যবাদ দিয়ে তোমায় খাটো করব না বন্ধু
শীতকে নেমন্তন্য করেফেলেছি
সে আসছে তাই চলে যাচ্ছি বন্ধু ।
শীতকে বরণ করেতে তৈরি হচ্ছি ভালো থেকো তবে ।
শীত এসে বলল
এই বেটা তোরতো সাহস কম না
অঙ্গে নেই বস্ত্র
সঙ্গে নেই অস্ত্র  
কি দিয়ে করবি শীতের মোকাবেলা ?
বন্ধু তুমিতো ভালো করেই জানো
এই অঞ্চল দরিদ্র পীড়িত মঙ্গা কবলিত  
জেনে শুনে তাহলে কেন আসো দুঃখ কষ্ট বাড়াতে
এখন পারবে কি আমার বুকের কাঁপুনি ঠেকাতে ?
পারবে নাতো, তাই বলি ভাই তুমি তারা তারি বিদেয় হও
একটু শান্তি দাও দয়া করে ।
শীতের একটু মায়া জেগেছে
বলল অভয় দিচ্ছি বন্ধু
আমার মাসতোত ভাইকে বলেছি আসতে
ও আসছে তোমার বুকের কাঁপুনি ঠেকাতে
ভাল খবর শোনালে বন্ধু এবার তাহলে বিদায়, ভালো থেকো ।


এবার এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত টস টসে যৌবন নিয়ে
চারিদিকে সাজ সাজ রব,
বাহারি ফুলের শুভ্রতা মনকে দুলিয়ে যাচ্ছে,
আহা কি চমৎকার এই দিন গুলি
দেখতে দেখতে কিভাবে যেন সময় কেটে গেল
বসন্তকে বললাম তুমি আর কটা দিন থেকে যেতে পার না ?
তোমায় যে মন ছাড়তে চাইছে না ।
বসন্ত ডেকে বলল বন্ধু আমিতো শুভ্রতা দিয়ে গেলাম
এবার গ্রীষ্মের সাথে খেলা কর ।
দেখ দেখ দুষ্টামি করোনা যেন
ওর কিন্তু ভীষণ তাপ আছে ভেতরে,
আচ্ছা বন্ধু ঠিক আছে দেখে নেব ক্ষণ, বিদায় তোমাকে ।


গ্রীষ্মকে শুভেচ্ছা দিয়ে বললাম কেমন আছ বন্ধু ?
শীততো তোমার বেশ প্রশংসা করে গেল
দেখি আমার কতটা লাগে ভাল ।
গ্রীষ্ম বলল বন্ধু তোমায় সকাল বেলায় প্রশান্তি দিব,
দুপুর বেলার বিষন্নতা আর বিকেলে
শান্তির আবেশে জড়িয়ে রাখব প্রতিদিন চলবে তো ?
হ্যাঁ তা যা বলেছ, শুধু দুপুরের বিষন্নতার সময়টুকু
একটু কমিয়ে দিলেই চলবে ।
আচ্ছা বন্ধু চেষ্টা করব ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে
হ্যাঁ তাহলে ঠিক আছে,
শুনলাম তোমার ভেতর নাকি ভীষণ তাপ সঞ্চিত আছে
হ্যাঁ ঠিকই শুনেছ বন্ধু,
তবে তাপ নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি কর না
এর প্রভাবে তোমার অনেক কষ্ট হবে ।
শরীরে লবণাক্ত পানি চুইয়ে চুইয়ে পড়বে
আরে না না এত কষ্ট কে করে
ঐ ব্যাপারে আর জানতেই চাইব না ।
তুমি শুধু আমায় একটু প্রশান্তি দিও
গ্রীষ্ম বলল যাবার সময় হয়ে এল বন্ধু
বর্ষা যে আমায় আমন্ত্রণ করেছে
নেমন্তন্য পাবার আশায় ।


আমন্ত্রণ করতে তো ইচ্ছে করছে না বর্ষাকে
ও শুধু শুধু চোখের জলে বান ডাকে
ক্ষণে ক্ষণে কাঁদে,
বৃষ্টি এসে ধরা দেয় ছাদে,
স্রোতের বেগ বেড়ে যায় নদে ।
বানভাসি মানুষ তখন মনের দুঃখে কাঁদে ।
তবু ওকে আপন করে নিতে হবে
হাজার হোক বন্ধুতো ।
বর্ষা আমায় বলল বন্ধু কান পেতে সব শুনেছি
আমার কান্নার জলই শুধু তোমার চোখে পড়ল ?
আমি না এলে যে তোমাকে উপোস থাকতে হবে
একবারও কি সে কথা ভেবেছ ?
প্রকৃতির এমন সবুজ শ্যামল দৃশ্য কি দেখতে পেতে ?
গ্রামের কাঁদা যুক্ত মেঠো পথ ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি
তোমার মনে কামনার আবেগ তুলে দেয় ।
আমি না এলে এ সব থেকে তুমি যে বঞ্চিত হতে, তাই না ?
হ্যাঁ তা ঠিক বলেছ, তোমার বর্ণনা বেশ ভাল লেগেছে
সত্যি বলতে কি অনেক ভালোবাসি তোমায় ।
থাক থাক আর আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না
নাও তোমার প্রিয় শরৎ কে ডেকে দিচ্ছি, ভালো থেকো তুমি  
অনেক অনুভব করব তোমাকে বিদায় বন্ধু ।
অমন করে বলো না বন্ধু মন খারাপ হয়ে যাবে
আবার এসো আমার কাছে,
বন্ধনের পূর্ণতা দেব অতীতকে রেখে পিছে
ভালোবাসায় ভরে যাবে সবুজ অঙ্গন
বাহু ডুরে হবে শান্তির আলিঙ্গন ।


এবার শরৎ এসে বলল চলে এসেছি বন্ধু
থোকা থোকা সাদা কাশফুলের মায়াবী রূপে
তোমায় মুগ্ধ করে রাখব নদীর ধারে ।  
আর সঙ্গে তো থাকছেই ভিন্ন ধর্মী অনুষ্ঠান,  
ভালোবাসা আর আহ্লাদে জুড়িয়ে যাবে প্রাণ
হাজারো কষ্টের মাঝেও রেখে যাব বন্ধুর মান ।
দেশপ্রেমটা সদা জাগ্রত রেখ ঐ না মাটির দেহে
সঁপে দিও না মন পরা বাস্তবতার মোহে ।


৩১/১০/২০১৪ ইংরেজি,
কল্যাণপুর, ঢাকা-১২১৬ ।