ছেলেটি গাজাখোর
বড্ড বদমেজাজি।
লোকে বলে এমন অপয়া ছেলে
দুনিয়ায় দ্বিতীয়টি নেই।
কখন কি করে, কখন কোথায় যায়
তা তার মস্তিস্কই জানে কিনা, তা-ই বড় সন্দেহ।
অকর্মার ঢেকি হয়ে ভাত গিলে উদর ভরলেও
টুই টুই করে সারা গাও না ঘুরলে
পেটের ভাত তার চাল হয়ে যায়।


কারো ক্ষেতের শশা চুরি, কারো গাছের পেয়ারা
কারো পুকুরের মাছ চুরি কিবা গাভির ওলানের দুধ।
এসব করেই করে করে সে
খায় মসজিদে  আর ঘুমায় মন্দিরে ।


গলায় সরস্বতী দেবীর বদলে কাকের আশীর্বাদ প্রবল।
তবুও গান গায় ঢোলের গোস্টি উদ্ধার করে।
লোকে বলে কী আপদই না গো সে,,,
যদি চলে যেত শহরে মুক্তি পেত গ্রামের লোকে।


ছেলেটি তবুও হাসে,,,
মুখের ভাষায় গালির বহরের উপমা মিশিয়ে।
ইচ্ছে মত করেই  যায় সে
যা কিছু চায় আপন মনে।


ছেলেটি যে মাঠে পা দেয়
সে মাঠই হ​য়ে যায় ঘাস শুন্য।
যে নুলকূপে যায় পানির তরে
সহসা সেথায় খরা  এসে ভর করে।
যে গাছের ছায়ায় যায় কিঞ্চিত ছায়ার তরে
বিনা কারনে সে গাছের পাতা ঝ​ড়ে প​ড়ে ।
ছেলেটির কোন শিক্ষক নেই,
কোন আত্মীয় নেই শুধু রক্তের জোড়াতালি বন্ধন ছাড়া।
তার কোন সমাজ নেই, কোন ভদ্র পাড়া নেই
নেই টিভি,পত্রিকা এমনকি প্রিয়তমা।


তবে তার একটি স্বভাব আছে
প্রাণের মাঝে রোগ আছে,,,
ভয়হীন চিত্তে।
কারো চোখের জল ই সে  পারে না মানতে।


যেই সে শুনলো সহসা,মেঘ ডাকা আওয়াজে;
ওরে কে কোথায় আছিস,,,
গত বীরেন বসুর স্ত্রী কী  যাবেই আজ মরে?
গ্রামে থেকে যদি গ্রামের স্বভাবে মাতৃ জন্ম না তার হয়,,,
বিশ্বাসের বেড়া ভেঙ্গে
কে নিয়ে যাবে বল গর্ভবতীকে ঐ শহরে?


অবতারেরর মত ছূটে এল কর্মহীন এ ছেলেটি,
মুখের বিশুদ্ধ গালিতে ভরিয়ে দিল চারদিক।
কর্মময় স্তব্দ জগত কেবল শুনলো তা কান পেতে।
ভ্যান চালিয়ে গর্ভবতীকে নিয়ে নিলো হাসপাতালে।


ফিরলোও সে হাসিমুখে নতুন পৃথিবী নিয়ে,
শতেক জনের শতেক কথা শতেক বাধার মাঝে
সদ্য বিধবা হওয়া গর্ভবতীর
গ্রামটিকে কেবল রেখে এলো শহরের
নিবিড়  পর্যবেক্ষনে।


গাছে গাছে জাগলো পাতা,
নলকুপের পানি এলো ফিরে।
খোলামাঠের ঘাসের মত,
আত্মীয় স্বজনে গেল চারদিক ভরে।
শিক্ষক তার অহংকারে বলল
একেই আমার ছাত্র বলে।
বড় গাঁজাখোর
বদমেজাজি ছেলে।