আমি যাচ্ছি বাবা,একেবারেই যাচ্ছি।
অনেক দিন ধরে এ বাড়িতে কেউ মারা যায় না,,
অনেক দিন ধরে এ বাড়িতে মাতম হয় না,,,
তাই আমার বিয়ে হয়ে গেল,,,,!
কলেজের বাংলা বইয়ের হৈমন্তী গল্পটা এখনো শেষ করিনি
এখনো আমার পুতুলগুলোর শ্রাদ্ধ হয় নি,,,
কিন্তু আমাকেই নিতে হল এক টন সিঁদুর  সিথিতে।
কেন বাবা? আমি তোমারই মত অঙ্গ পাই নি বলে?
আমি আমার মায়ের মত একদলা মাংসপিন্ড হয়ে জন্মেছি বলে?
নাকি আমার জন্মটাই অভিশাপ বলে?


বাবা, হাতটি মেল,,,এই ধর তোমার উঠুন।
অনেক দুষ্টুমি করেছি সেথায়,,অনেক বাল্য খেলা খেলেছি
অনেক বার হোঁচট খেয়ে পড়েছি,তুমি তুলেছিলে,,
বাবা নাও, নাও বাবা তোমার উঠোন তোমার কোলে ,,
যদি কভু আমার কথা মনে পড়ে
তাহলে উঠোনে একটু কুতকুত খেল
ঐ পেয়ারা গাছটির নিচে বসে
আমার নাম ধরে ডেকো বাবা,,
আমার নাম ধরে ডেকো।
আমি বাবা বাবা বলে দৌড়ে আসব,,,
তোমাকে জড়িয়ে ধরব,
আমাকে সেদিনের মত জড়িয়ে ধরো বাবা,,
একটু কোলে তুলে নিও,,,একটু
মাথায় হাত বুলিয়ে দিও বাবা, মাথায় হাত বুলিয়ে দিও,,


এই ধর তোমার ঘরের অঙ্গন
মা যখন সব কিছু গুছিয়ে উঠতে পারত না একা একা
আমিও তা গুছিয়ে রাখতাম,,।
বাবা আলনার মাঝ খানে তোমার চাদরটা রাখা আছে
ভাজ করে রেখে দিয়েছি,,
সেটা তুমি পড়িও না ,শুধু মাঝে মাঝে হাত দিয়ে  ধরে দেখিও
আর বলিও,খুকি আয় মা,আয় ,,একটু পড়িয়ে দিয়ে যা,,,
যদি চোখ দিয়ে জল চলে আসে
তাহলে তখন তা আর লুকাইও না বাবা
চিৎকার করে কাদিও তুমি চিতকার করে কাদিও,,,
এই পৃথিবীও যদি কাদে তোমার সাথে!!


বাবা এই তোমার গ্লাস,থালা,বাটি সব,,,,
ধরো বাবা ধরো,শক্ত করে ধরো
আমি নিয়ে যাচ্ছি না তা,,,
ক্ষমা করে দিও বাবা,তোমার ঘরে তা ব্যবহার আমি করেছি,,
আর কোনদিন এমন অন্যায় করব না,,
আর কোনদিন তুমি ঘরে ঢুকেই বলবেই না
মা,,,খুকি এক গ্লাস পানি দেত মা,,
আর কোন দিন আমার  হাতে তুমি খাবার খাবে না
তবু এই বাটি ঘটি গুলোর সামনে তুমি একটু বসো
আর দেখো আমি কত খিল খিল করে হাসছি
আর বলছি,, বাবা, বাবা আমার জন্যে মেলা থেকে আরেকটা পুতুল নিয়ে এসো


বাবা খুব কষ্ট দিয়েছি তোমাদের
খুব নষ্ট করেছি তোমাদের সব,সব!
একটা গরুর জন্ম এ বাড়িতে হলে এ বাড়িতেই তার মৃত্যু হত
কিন্তু আমি তো মেয়ে,,গরু নই
হাল চাষে লাগি না,,,, আমার চামড়ায় ডুগডুগি হয় না
বাবা তাই বুঝি হোট করেই তাড়িয়ে দিলে আমায়?


মাকে বলো কাউকে বকাঝকা করার না পেলে
ঘরের পাল্লা টা ধরেই যেন একটু বকাঝকা করেন
শূন্য বিছানার পাশে বসেই রাগতে রাগতে বলেন
" ঐ অলক্ষ্মীর ঝি,আর কত ঘুমাবি,এবার ত ওঠ"


বাবা তোমার চোখের চশমাটায় আমার কিছু স্বপ্ন লেগে আছে
কষ্ট করে তুমি তা মুছে নিও বাবা,,,মুছে নিও।
আর এই দুনিয়ার সব বাবাকে বলে দিও
কোন মেয়ে যেন তার স্বপ্ন গুলি বাবার চশমায় না লাগিয়ে রাখে,,,


বাবা এই ধর,,এটা দাদাকে দিও,,
দাদা সেই কবে আমাকে ছোটকালে মারতো,,
আমার পুতুল গুলো ভাঙতো,,,
অনেক দিন হয়ে গেল, অনেক দিন চলে গেল
দাদাকে বলো এই পুতুলটার চুল ধরে যেন একটু টান দেয়
ইচ্ছে মত পুতুলটার মুখের খাবার ছিনিয়ে নেয়,,,
বলো পুতুল টার জন্যে দাদা যেন আলতা কিনে আনে
বোনু বলে ডাক দেন,,বলো বাবা,,
দাদা যেন পুতুল টাকেই বোনু বলে ডাক দেয়,,,,
আমি শ্মশানে থেকেও সেই ডাক শুনব,,,
দাদা,,,,,,,,দা,,,,,দা,,,,,দাদা,,,বলে সেই ছোট্ট দেহে
আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে দেবে,
দাদা যেন পুতুলটাকে কাধে বসিয়ে পাড়া বেড়ায়
পুতুলটাকে স্কুলে নিয়ে যান,,,
দাদাকে বলো বাবা, দাদা যেন ঘরে এসেই
বোনু বোনু বলে কেঁদে না ফেলে,,।


বাবা,,,জসীম আঙ্কেলকে সাহস করে বলে দিও
আমি তখনো ফুলের জন্ম পরিচয় চিনি নি
তখনো আমি বাবা আর পুরুষের মাঝে ব্যবধান বুঝি নি
তুমি সাইফুলকে বলে দিও
সুরেশ কে জানিয়ে দিও
আমি আজও জানি না,,কেমন করে জন্ম হয় পশুর?
আমি আজও চিনি না, কেমন করে কাটা চামচে খেতে হয় জ্যান্ত মাছ,,,
তবু কিসের অপরাধে অপরাধী আমি?
কিসের অপরাধে চারদিকের দেয়ালের মাঝেও আমি পাপিনী!!!
কোন কর্মে আমি দুর্গন্ধ্যা?
আমাকে দেখলে বিড়ালের জিহ্বায় রস আসে বলে?


আর তাই বাবা আমাকে পাঠাচ্ছ নির্বাসনে,,,
কারাগার থেকে জাগ্রত গুহায় করতে চাচ্ছো বন্দিনী,,,
হাতের শাখায় লিখে দিতে চাচ্ছো আমি কোন ঘরে কার খাদ্য?
কিন্তু আমার গায়ের মাংস?
তার কী শেষ হবে বাবা?
শেষ হবে কী ঐ সাইফুলদের মুখের রস?
নাকি আমার মত নারীতেই জন্ম দিবে আরেক নারী
বাড়াবে শুধু মাংস আর মাংস,,
আমার মত নারীতেই জন্ম দিবে আরেক পশুর
যার মুখে শুধু রস আর রস॥।


বাবা,,,,সেই রস কী তোমার মুখেও ছিল?
সেই মাংস কী আমার মায়ের গায়েও ছিল?
তাই বুঝি তুমি এত অসহায়
আমার কাছে?
তাই বুঝি এত অসহায় এই বিশ্ব সংসার
আমার বাল্য,কৈশোর  এর কাছে?
তাই বুঝি আমি কন্যা  সন্তান
সকলের কাছে?
*****************
রুবেল চন্দ্র দাস
প্যারিস
১৫/০৯/১৭