দাদা কেমন আছ,,,ভালো অবশ্যই। খুব ভালো চাকরী করো,, মাসে মাসে ভালো বেতন,,অবশ্যই তুমি খুব ভালো আছ দাদা,,,তাই না।আমাদের বাড়ির পাশের স্কুল ঘরটাও খুব ভালো আছে দাদা,,এই তো সরকারেr কাছ থেকে টাকা এসেছে,,টিনের স্কুল ঘরটি এবার দালান হচ্ছে।
এই দালান হবার শব্দের মাঝেই
মা প্রায়ই আমাদের বাড়িতে কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে বসে তোমার কথাই বলেন,,,
গাছটা অনেক বড় হয়ে গেছে দাদা,,,
শুনেছি বাবা নাকি এই গাছটি
ঠিক তোমার জন্মের ক্ষনেই লাগিয়েছিলেন।


একদিকে বাড়ির বড় ছেলে জন্ম নিলো,,
অন্যদিকে কৃষ্ণচুড়া গাছ ভাবতেই অবাক লাগে না দাদা,,,
বাবা খুব বৃক্ষ প্রেমিক ছিলেন,, তাই না।
বাড়ি ভর্তি যত না আমরা মানুষ
তার চেয়ে বেশি গাছ,,,, দাদা,,,,বেশি গাছ।
বাবা চেয়েছিলেন আমরা যেন কোন অক্সিজেনের ঘাটতিতে না ভোগি।।


কিন্তু কোথায় দাদা,,কোথায় অক্সিজেন,,,।
বুকে একবার শ্বাস নিলে আরেকবার শ্বাস নেবার
কোন বিশ্বাস নেই দাদা,,কোন বিশ্বাসই নেই।
মা যে গাছটির নিচে বসে তোমার কথা ভাবেন,,
সে গাছটিতে শুধু ফুল আর ফুল,,,,।
লাল ফুলের আড়ালে
কোন পাতাই নেই দাদা কোন পাতাই নেই,,,,
ফুল কি আর পাতার কাজ করে রে দাদা,,করে না।
মাঝ আকাশের সূর্যটা তাই খুব সহজেই বাড়িতে তাপ পাঠিয়ে দেয়,,,,
উঠান,ঘরের বুক ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছেরে দাদা,,
তবু কৃষ্ণচূড়া গাছটা নির্বাক,নিস্তব্দ,,
কোন সাড়াই দেয় না,,,


জানি না কেন আমাদের বাড়িতে গাভীটাও
যখন নতুন বাচ্চা প্রসব করে,
বাতাসে আনন্দের দোলা দেয়
ঠিক তখন মাকে আমার জিজ্ঞেস করতে
খুব ইচ্ছে করে,,,
জানো কি জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে,,।
মাকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে,,
তোমাকে মা,, তার উদরে কি সত্যি ধরেছিলেন?
তা না হলে বছরের পর বছর বাড়ির পাশেই
বন্যার জল চলে আসে,,,
গ্রামের পাগলা কুকুর গুলিও
এই বাড়ির উপর দিয়ে হেটে যায়,,,
কিন্তু তুমি আসো না,, তুমি আসো না।
কেন দাদা, কেন?
মা ঢেকিতে ধান ভেঙ্গে তোমার স্কুলের ফিসটা যথাসময়ে দিতে পারেন নি বলে?
অকালে স্বামী হারা নারীটি তোমাকে
ভালো মন্দ খাওয়াতে পারেন নি বলে,,,
মেলায় যাবার সময় পকেটে মন মতো
টাকা ভরে দিতে পারেননি বলে,,
এই অভিমানটা আজো রেখে দিয়েছ,,,
ভুলেই গেছ,,
তোমার পুত্র সম একটি ছোট ভাই আছে,,,


আচ্ছা, যাও যাও আমাকে ভুলে যাও,
কিন্তু আমি কীভাবে ভুলব দাদা,,,,
আমারো একটা আকাশ সমান দাদা ছিলো,,
আমারো চোখে দেখা এক ঈশ্বর ছিলো
যে আমাকে কোলে নিয়ে বেড়াত,গান শুনাত,
সাঁতার শিখাত,,,স্নান করাত,মুখে খাবার তুলে খাওয়াত,আমাকে স্কুলে নিয়ে যেত।
বিকাল বেলা কাঁধে তুলে নিয়ে ছড়া শিখাত,,,
রাতে আমাকে ঘুম পারিয়ে তারপর বসত পড়তে,,,
সেই দাদা টাকে, সেই ঈশ্বর টাকে
তুমি চিনো দাদা,,?
ঠিক তোমার মতই দেখতে ছিল
কিন্তু তুমি নও,,,তার নামও ছিল বিজয় গাঙ্গুলি।
কিন্তু তুমি নও,,,দাদা।তুমি নও।


আমার দাদাটার সে সময় কোন ভালো চাকরি ছিল না,,,
বিয়ে করা বউও ছিল না
ছিল না শ্বশুর বাড়ি,শ্বাশুড়ি  শ্যালক শ্যালিকা
এমনকি নিজের একটা এই বড় প্রাসাদ।
সেদিন আমার দাদাটার পায়ের নিচে
কাঁদা মাটি ছিল,,,
আরএকটা মা ছিল,,,,
যে মা ঢেকিতে ধান ভেঙ্গে
দাদাকে জীবনের শব্দ শুনাত,,,,
যে মা সারা রাত জেগে
দাদাটার পাশে বসে পুস্তকের পড়া শুনত।
আর ভাবত একদিন তার বড় ছেলেটি
সত্যি বিদ্বান  হবে,,পুস্তকের বিদ্যার মত বিদ্বান।
কিন্তু দেখ সেই মায়ের বড় সন্তানটি আজ
দশ বছর ধরে চেনা জানা নিখোজ।
চোখের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে আড়ালে,,,
আর সেই মা,,,ঘুনে ধরা ঢেকিটার সাথে
যুদ্ধ করে যাচ্ছে এখনো,,,
দেহের হাড় তার অনেক নড়বড়ে
কিন্তু ঢেকির তাল তার সেই আগের মতই দাদা,,
সেই আগের মতই।
মা আগের মতই আমাকে
জোনাক পোকা দেখতে বলেন,,
আকাশে ঘুড়ি উড়াতে বলেন,,,,
পড়তে বলেন,,বিদ্বান হতে বলেন,,,  
আমিও তোমার মত বই নিয়ে বসি, চিৎকার করে পড়ি।
কিন্তু কই,, বিদ্যা কই দাদা? বিদ্যা কই,,,
এখানে বিদ্বান হবার মত তো কিছুই নেই,,,
এই সব বই পড়ে পড়ে বড় জোর তোমার মত
বাড়ি গাড়ি আর সুন্দরী নারীর স্বামী হওয়া যাবে,,,,
থু , থু দাদা থু,,, থু,,,
আমি কেন,, দুনিয়ার কোন মায়ের সন্তান যেন,,
এমন বিদ্বান না হয়,,,
বাড়ির পাশ দিয়ে শ্মশানের বহর চলে যাক,,
সুনামীর আক্রমনে হারিয়ে যাক পৃথিবী,,,
তবু কোন সন্তান যেন এমন বিদ্বান না হয়,,,,
তাই গত মাস থেকে
আমি সব ছিড়ে ফেলে দিয়েছি,,,
বিছানায় শায়িত মাকে কথা দিয়েছি,,,,
ঢেকির শব্দ চালানো এখন আমার কাজ
আমার,,,,এই ছোট্ট ছেলেটির।
দাদা কি বলো ভালো কাজ করি নি?


জানি আমার এই লেখাটা তুমি খোলেও দেখবে না,,
শুনেছি আমার এক ভ্রাতৃ পুত্র জন্ম নিয়েছে,,,
চিঠিটা তার জন্যেই রেখে দিও,,
হয়ত তার কাজে লাগবে,,
আর কিছু মিলুক আর নাই মিলুক,,,
সাহস পাবে দাদা,সাহস পাবে।
রাখবে তো.......?


ইতি
মিথ্যে ভাই