একটি সত্য কাহিনীর অবলম্বনে,,,,


প্রবাসী যারা আমরা হই তাদের জীবনে কিছু ঘটনা ঘটে যা অবিশ্বাস্য।সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কেউ বাঁচে আবার কেউ মরে মরে  নিজেকে জিইয়ে রাখে।,,,,,,
বাকিটা কবিতায়,,,,,, (অনেক বড়,,,,একবার ভেবেছিলাম প্রকাশ করবো না,তবে আবার ভাবলাম "যাহা আমার, সব-ই যে তোমার/ আপনার"......কাটুক না একটু সময় প্রবাসী ছেলেটার সাথে,,,,তাতে কী মন্দ হবে?)



চিঠি লিখতো প্রায়ই--- হৃদয়ের স্পন্দনে।
মা কেমন আছ? কেমন আছ তোমরা?
কেমন আছে তোমার হাতের তাল পাখাটা?
কেমন আছে মা তোমার শরৎ বাবুর বিন্দুর ছেলে?
আর বুঝি ডালের ভরা বানাও না তার তরে?
চোখের চশমাটা তোমার ঠিক আছেতো?
তোমার ঠাকুর দেবতার জন্যে সিংহাসনটা
বানিয়েই ফেলেছ?
কতবার বলেছি একটা খাট বানাও তোমার জন্যে।
না বানালে না,,,আমি যে শাড়ি দিয়েছিলাম তোমায়,,,
তাও কি দিয়ে দিয়েছ দেবীরে?


কোন জবাব আসতো না তার,,,
মোবাইলের যুগেও বাল্যকালের দূরন্ত
মা পাগলা ছেলেটি,
হোট করেই যখন চলে গিয়েছিল
খেজুরের দেশে খেজুর পাতার ছায়ায়।
তখন মায়ের মনটা কাঁদতো গোপনে,,
সারা রাত ভর কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে
সকালে তাকিয়ে থাকতো পথের দিকে,,,।
কিন্তু চোখের সম্মুখ দিয়ে সদ্য ডিম ত্যাগী
হাসের বাচ্চা গুলি পথ দিয়েই চলে যেত পুকুরে।
সকাল বেলার পুকুর কবে বিকেল হয়, তা কে জানে?
জানে কী গৃহিনী সত্যি কি বাচ্চাগুলি ফিরবে ঘরে?
কাক  তোলে নিবে নাতো  ছুঁ মেরে?
চিলের চোখ এড়াবে কেমন করে?
মাটির গর্ত থেকে যদি বের হয়ে যায় সাপ,,,!
তাহলে বাঁচবে কেমনে?
বেজি গুলোও বড্ড বেশি চারপাশে,,,!
শিয়ালের হাকতো শুনা যায় প্রতি রাতে,,,!
তাহলে ফিরবেতো? ফিরবে তো ওরা ঘরে?


হয়তো ফিরবে,হয়তো ফিরিবে না,,,
তবে সেই মা আজ আর দুয়ারে বসেন না প্রকাশ্যে,,
দেখেন না রাখালের ঘরে ফেরা
সুদূর মাঠের পানে তাকিয়ে ।
কোন ফকির কিবা অতিথির জন্যে
করেন না অপেক্ষা আর রান্না ঘরে বসে ।
শুনেন না প্রতিবেশির শিশুর কান্না কান পেতে।
এমনকি পোস্টঅফিসের ঠিকানাটাই গেছেন ভোলে
পড়েন না  কোনই চিঠি,,,কষ্টে আর অভিমানে।
চশমাটায় তার ধুলো জমে গেছে বেশ,,,
কানেও শুনতেও হয় যন্ত্রের তরঙ্গে।
তবে ইচ্ছে হয় ছেলেটির
মায়েরর স্তনে শুকিয়ে যাওয়া দুধ
আবার পান করতে।
কর্মব্যস্ত মায়ের পিছনে হামাগুরি দিয়ে
মা,মা বলে কাঁদতে।
ইচ্ছে হয় আবারো মাকে একটু জ্বালাতন করতে,,,।
ইচ্ছে হয় মায়ের হাতে কানমলা খেতে।
ইচ্ছে হয়,,,
কোন কিছুই না ভেবে,মার সাথে কথা বলতে।
সেই কবে হয়েছিল কথা
যেদিন অভিশাপ
দিয়েছিলেন শুধু এতটুকু বলে,,,
বিয়ে করে বউ কানা হলে ওরে সোনার ছেলে।
ভোলে যখন গিয়েছিস মায়ের বেদন
তাহলে সুখে থাক,দূরে থাক সুপত্নী লয়ে।
আমি বাবা গতর কাটি গতর গড়বো
তবু তোর দুয়ারে ভিগ না মাগবো।


অত:পর আশ্মিন মাস গেলো  দু তিন,,,
হিমালয়ের বরফও গললো  বেশ
চার্চের মোমদানীটায় মোমের শ্রাদ্ধ হয়েছে বিশেষ
পাঠশালায় যাওয়া শিশুটির হাতে আজ বর্ণলিপি।
তবু মা তার ভাবছেন আজও
বউ কানা ছেলে বউকেই ভালবাসে বেশি।
শ্বশুরালয়ে রেখে বউ
শাশুড়িকে পুজে,ভেবে গর্ভধারিনী।
মায়ের উনুনে না জ্বালিয়ে আগুন
জ্বালাচ্ছে  মাতৃ ধরণী।


তবু তাতে থামে কি মায়ের অভাগা উদর অগ্নি?
জমি জমা বিক্রি করি পাঠিয়ে যে ছিলেন ছেলেকে
স্বপ্ন নয়, জীবনের দাবীর তরে জীবনের কাছে।
বোন দুটি বিবাহ উপযুক্তা,,,পড়ে আছে ঘরে,,,
অন্ধ পিতার  চোখ দুটি যেমন তেমন
প্রাণ যে যায় যায় এখন অজানা রোগে!
অথচ ভোলে গেছে সে সব,,
ভোলে গেছে মায়ের বেদন দিনে দিনে।
ভোলে গেছে চারা গাছটি বড় হয় কোন যতনে?
ভিটে মাটি বিক্রি করে এই হাভাতি পেট,,,
আর কী চলে?
পুরুনো কথার বোল তোলে মুখে,,,
ভাঙ্গা ঘরের ভাঙ্গা বেড়াটা কী ঠিক হবে?
সেলাই হবে কী বোনের গায়ের ছেড়া জামাটি,,,?
ছিদ্র কলসীর জল কী যাবে থেমে?
এর চেয়ে বাবা সুখে থাকো
বউমাকে সুখে রেখে।
সোনায় সোনায়   সমগ্র ধরা দাও ভরিয়ে,,,
আমরা বরং অপেক্ষায় থাকি মরণ পানে চেয়ে।


কিন্তু মরণ যে চিনিলো না পথ,,
আপন পথে এসে গ্রাসিলো তারে,,
বলল যাবি আমার সাথে?
তোকে আকাশ থেকে ছোট্ট দুনিয়া দেখাব।
দেখাব তোর রাগান্বিত বধু,অভিমানী মা
আর এ জগত
কেমনে কাঁদে তোর তরে।
তাহলে চল,,, মুক্তির পানে।
চল আমার হাত ধরে,,,,,
আর কত নরকে থাকবি
মরুভুমির মূল্যহীন দাস হয়ে।
অত্যাচার,অন্যায়ের শিকার হয়ে অভুক্ত থেকে পরবাসে
অবিশ্বাসী  হবি আর কত,মরে মরে বেচে?


ছেলেটি বলল তাহলে লিখি কিছু
আমার তরে,,,,,
আমার দেহটি পাঠাইও না দেশে।
খেজুর গাছের নিচের বালু যদি করে মানা
তাহলে আবর্জনার মত ফেলে দিও সাগরে।
প্রবাসীর লিগালিটির সংগ্রাম দলিলাদি
দিয়ে দিও আমার চিতায় কিবা কবরে।
তবে উকিল মুক্তারের যে বিল চড়ছে  ঘারে
তার ছায়াটাও দেখাইও না আমার মারে,,,
কোনদিন এই হিসাবটা দিও না প্রিয়তমারে।
যে আমারে ছাড়িয়া
সদ্যই দিয়েছে  গোলাপের স্থান অন্যজনারে।।
বলিও কেউ যেন করে না মাতম
আমারে স্মরণ করে।


তবে
বলিও তার কানে কানে,
মা-ই কেবল জানলো আমি ভালোবাসি তারে ।
যেমনি সে জানলো
আমি আজন্ম মা- পাগলা,,,,
এ সংসারে।


হ্যা মৃত্যু এসো এসো  বরণ করো মোরে,
মা হয়ে বস শিয়র পাশে,,,,
প্রিয়তমা হয়ে বুকের পরে।
শুধু রেখো না রশিটার কোন চিহ্ন
গলার উপরে।


শুণ্য ধরা পূর্ণ হোক আমার এই বিদায়ে।
--------------------------------
রুবেল চন্দ্র দাস
প্যারিস
০২/০৮/১৭