রুবেল চন্দ্র দাস


ও দিদি, সারাক্ষণ তুলসী তলায় জল ঢেলে যাচ্ছ? নিজের দিকে একটু তাকাও।
কী রোগা হয়েছ গো দিদি? কেমন আছ তুমি?


আছি বেশ, বেশ ভাল আছি।
এই তো সেলাইয়ের মেশিনটায় যতই জং ধরছে,,
আর ততই শরৎ বাবুর উপন্যাসের
পারুকে খুব ভাল মনে হচ্ছে।
অন্তত ফিরেনি পিতৃগৃহে।
মেয়েটাকে বাড়িতে নিয়ে এসে
আমার পাশে বসিয়ে খাওয়াতে ইচ্ছে জাগে।
নবীন বাবুর পুত্র বধু বাড়ি থেকে পালিয়েছে,,,
শুনেছি আত্মহত্যা করেছে;
নদীর এপারের বড় বটগাছটার ডালে ঝুলে,,,
অথচ ওপারেই তার বাবার বাড়ি, কী লজ্জা!
সুরেশ মুখার্জির ছোট মেয়ের ঘরের নাতিনটা নাকি
ডাক্তারি পড়ছে বিলেতে,ঠিক আমার স্বপ্নের মত!
সেও স্বপ্নের পথে আমার মত পরবাসী।
সে বিলেতে আর আমি নিজগৃহে।


আকাশের বুকে ঘুড়ি উড়া দেখে দেখেই
যাচ্ছে কেটে দিন ঘরে থেকে থেকে।
আজ কাল গীটারের মাঝে
আমার সেতারার সুর খোঁজে,,,
দালান এসে দাড়িয়েছে পথের পাশে তবু
পথের কোন বিশ্রাম নেই।
এ পথটা ধরেই
ফিরেছিলাম বাবার বাড়িতে ,,,
জীবিত স্বামীটার মৃত আত্মা দেখে।
আজ এখানেও সব মৃত!!
গাছের ছায়া মৃত,মাঠের ফসল মৃত!!
মৃত হচ্ছে ক্রমান্বয়ে পায়ের তলার মাটি!!!


এ বাড়ির গাভীগুলো হচ্ছে কেবল মা,
ষাড় গুলো হচ্ছে পিতা,,
আমি কেবল  যাচ্ছি করে কার্তিকের পুজা ।


বাবা আকাশের তারায় বসে তারা গুনছে
মাও তার সাথে আজ প্রতিযোগিনী।
আকাশটাও আমার নিয়ে গেল তাদের সাথে।


তবু এ বাড়িতে আমি আছি
এক বারান্দা হয়ে; ভাঙ্গা বারান্দা।
গৃহকর্তার ইচ্ছে হলে রাখবে,
ইচ্ছে হলে জায়গাটা খালি করে দিবে।
অথচ এক সময় আমিও ছিলাম
এ ঘরের এক অবিচ্ছেদ্ধ অংশ।
আমার ছায়া ছুয়েই প্রবেশ করতো সবাই ঘরে।
অথচ এখন আমার ছায়াই
আত্মসম্মান হীনতা আমার কাছে !


আচ্ছা তুমি জানো
শ্রীমতি রেখা কী আজো শ্রীমান বলিউডকে
পুজো দেয় মনে মনে?
হা হা হা হা জানো না।  তাই না?
শুনে রাখ সেও আজ পুজে কারো স্বামীকে
নিজের পতি ভেবে।
ঠিক আমার মতই,,,
কারন তার সাথে মালা বদল হয়নি সত্য
তবে হয়েছিল মনের বদল।


কিন্তু কেউ মানে নি তা।
এ  বাড়ির কুকুরটাও বলেছিল
তোমাদের চুমাচুমির সার্টিফিকেট
আমাদের কাছ থেকে না নিয়ে গেলে,,,
একে কী আর স্বামী স্ত্রী বলে?
তাই জোর করে আমার মাথায়
বেধে দিল সিঁদুরের  বস্তা।
হাতে বেধে দিল হাতকড়া শাঁখার নামে।
নাকে নোলকের নাম দিয়ে পরিয়ে দিল লাগাম।
নুপুরের নামে পরালো পা-বেড়ি।
আমি অসহ্য যন্ত্রনায় চটফট করেছি
,রোদনে রোদনে ভারি করছি আকাশ,,,
তখন ওরা সুখের নৃত্যে
দুখের সানাই বাজাচ্ছিলো।


অত:পর সেই মরার সার্টিফিকেটে ধরলো ঘুনে ।
পচন ধরলো মরার সার্টিফিকেটে !!!
এক অর্ধ্ব পুরুষের সাথে বিয়ে হল
আমার মত পূর্ণ নারীর দেহেতে।
যৌবনের যমুনায় গর্জনের সুর হলো অসম্মানিত,,,
আর আমি হলাম স্বামী ত্যাজ্য।


তাই স্বামী,সংসার,ছেলে, পুলে
এই তুলসী গাছটাকেই মানি।
সংসার খেলায় অবহেলিত হয়ে
নিজের সাথেই এবার নিজেই খেলি।
এভাবেই খেলি।


জানতে চাইবে আর?
কেমন আছি আমি?
-------------------------------------------------------------
রুবেল চন্দ দাস
প্যারিস
২৮/০৭/১৭