এই যান্ত্রিক শহরটায় এক নিস্তব্দ দালানের ভেতর
বসে বসে যখন আকাশের বুকে কিছু মেঘ দেখি,,,
দেখি তাদের নির্ভিক ছুটাছুটি।
তখন তোমার কথা খুব বেশি মনে পড়ে মা।
কেমন আছ তুমি?


দেখ মেঘ গুলো আকাশের সাথে
যখন যা খুশি করতে পারলেও,
আমি জিজ্ঞাসও করতে পারি না, মা তুমি কেমন আছ?
আর সেখানে তোমার হাতের ডালের ভরা খাবার
আমার অমূল্য ইচ্ছাটা,,,,,,,!!
রোজই যন্ত্রনা দিয়ে দরজায় নক করে।
আমি ইচ্ছে মত গালি দিয়ে দেই তাকে
তবু বেহায়ার মত আবার মনের কাছে আসে।
ঘুর ঘুর করে,চোখের দিকে তাকায়, অঙ্গুলি ধরতে চায়।ঠোট ফুলিয়ে  কাদো কাদো মুখে কিছু বলতে চায়।
ঐ যে তোমার কর্মব্যস্ত দিনগুলোতে আমি তোমার পাশে পাশে হামাগুরি দিতাম আর কান্নার ভাষায় বলতাম একটু কোলে তুলে নিবে মা।
ঠিক সেই রকম।
মা আমি তোমার মতই তাকে এড়িয়ে যাই,,
নাড়ি ছেড়া ধনকে এড়ানুর কষ্ট টা কী
তা বুঝতে চেষ্টা করি।
তবে বুঝি
তোমার একটা যৌথ সংসার ছিল
আর আজ আমার বিশাল বিশ্ব এক পরিবার।


এই তো মা, আমি সকাল সকাল বিছানা ছাড়ি
তখনো ডালের ভরা, দুর্গো পুজার পায়েশ,
তোমার হাতের আমের আচার, নারিকেলের পিঠা আর তোমার শাসন বারন গুলো হাউ মাউ করে
আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কাদে।
বল মা সকাল সকাল ওদেরকে
কোলে নেবার কী সূযোগ আছে?
তুমি গোবর জল দিয়ে সারা বাড়ি শুদ্ধ করে দিতে,
আর আমি ঘুম থেকে উঠেই
কবিতা লিখে শুদ্ধ করে নেই আমাকে,
তারপর তোমার সেই যৌথ সংসারের যৌথ প্রতারণার মত শুরু করি কাজ আর কাজ।
সে কি কাজ রে মা?
নিজেকে নিজের মাঝে মেরে মেরে রাখার কাজ।
আত্মার উপর আত্মা অবহেলার কাজ।
সেই কাজে কাজে তোমার দানের রক্ত মাংসের হাতে
তোমার মতই কত কি রান্না করি!
কিন্তু এই দেশের মানুষ গুলো  কী যে খায় মা,
তুমি দেখলে হাসবে?
ওরা সিদলের ভর্তা চিনে না?চিনে না কচুর লতির চিংড়ি ভুনা , পাট শাকের সাথে কাঠাল বীজ,,,
ও ও ও,,,  মা ওরা এগুলো কিছুই চিনে না।


          ওদের জন্যে আমি তান্দুরী সূর্যটায় হাত ঢুকিয়ে
চামড়া পুড়ার গন্ধে  নান টিক্কা বানিয়ে দেই,,
সংঙ্গে সালাদ সেভ,সালাদ ইতালিয়ান,
বার্গার,পিৎজা কত কি!
কিন্তু ওরা কী জানে মা
আমিও তোমার মত কোথা থেকে যেন মুক্তি চাই
কোথাও কারো মুখ দেখে
আমার পুড়তে থাকা মনটায় একটু শান্তি চাই।
ওরা কী জানে মা
তোমার মত কাজটাই আমার এক জেল।
আমার দুনিয়া আমার স্বপ্ন, আমার মুক্ত বাতাসকে
ঘুম পাড়িয়ে  এসেছি তোমার মতই
ঐ সকালের বিছানায়।


মা, এভাবেই দিনের সময়  সন্ন্যাসী
রাতের যোগী বেশে আবার আসে কাছে,,,;
গাড়ির ফিরতি চাকায় মগ্ন প্যারিস
লাল নীল বাতির নিচে কত শত সাদা কালো ছবি।
সেই ছবিতে আমার একখান ছবি আছে!
তোমার ক্লান্ত দেহের মাঝে মাতৃত্বের যন্ত্রনার মত আমারো তোমার হাত থেকে এক গ্লাস জল পান
করার অধিকার আছে।
আর তাই বিষন্ন বদনে আয়নার সামনে দাড়িয়ে
একটু অভিনয় করে নেই,
নিজের সাথে নিজেই একটু মা সেজে নেই।
কিন্তু বাথরুমের বন্ধ দরজাটাই কেবল জানে মা
এই অভিনয়ের তীব্রতা।
হাউ মাউ করে গগন ফাটিয়ে দেই
কিন্তু কেউ শুনে নারে মা।কেউ শুনে না।
এমনকি ঈশ্বরও না।


মা জানো যেদিন কোন এক কারনে তুমি আমাকে
পাঠিয়ে দিয়েছিলে মামার আলয়ে।
সেদিন থেকেই অভিমান করে ঈশ্বরের কাছে বলেছিলাম,
কোনদিন যেন তোমার কাছে আর না ফিরি।
দেখ মা ঈশ্বরো না কত স্বার্থপর,,,!!
শুধু তোমার কাছ থেকে
পুত্র স্নেহ, পুত্র প্রেম পাবার জন্যে
নিত্যই সিংহাসনে বসে পুজো খেয়ে যাচ্ছে।
আর আমাকে রেখে দিয়েছে রাম নির্বাসনে।


মা সাবধান
ঐ ঈশ্বরকে তুমি আমার ডালের ভরা খাওয়াবে না।
ঐ ব্যাটা হারামিকে আমার মত করে মুখ মুছে দিবে না।
মা ঐ ভগবানকে  কভু শরবত বানিয়ে দিবে না।
ঐ পাষন্ডকে তুমি এত আদর যত্ন আর করবে না।
সে আমার মিথ্যে অভিমানটুকুই সত্যি করে দিলো?
বুকের ভেতর থেকে বুক কেড়ে নিলো।


সে তা করতে পারে না মা,  সে তা করতে পারে না।
ঈশ্বর হয়েও সন্তানকে মায়ের কাছে
মেঘর মত আকাশের বুকে ভাসিয়ে রাখতে পারে না?
একথা পাগলেও বিশ্বাস করে না।


আইন নিয়ে পড়ছি,,,
শপথ রইল
ঈশ্বরের বিচার একদিন হবেই।
ততদিন তোমার হাতে ডালের ভরা থাকবে তো মা?


--------------------------------------
রুবেল চন্দ্র দাস
প্যা