আমি এক গাছ,,,
আমাকে আমি কী গাছ নাম দিব ,,,জানি না।।
যেদিন বসন্ত এসেছিল,,সেদিন
আমার গায়ে অনেক ফুল এসেছিল,,,
প্রজাপতি,,এসেছিল পাখা মেলে,,,
পাখিরা এসেছিল নানান গান নিয়ে,,
এসেছিল অনেক বেদনা অনেক সুখ,,অনেক আনন্দ
অনেক ইচ্ছে,অনেক রঙ ,,,
বলেছিল ,,,চলো চলো পরাগ পরাগ খেলি,,
চলো রাত জাগা জাগা খেলি,,
চলো ফিস ফিস করে কথা বলা খেলি,,
চলো একটু হারিয়ে যাই কয়েকদিন,,,
একটু ভুলে যাই সব,,উদাসিন হই মনের মত।
চলো চলো একটা নামও দেই ,,রস ভরা আদরে।
আমিও চাচ্ছিলাম তা,,
আমিও শুনছিলাম তা বেশ আবেগ নিয়ে।


কিন্তু এর মাঝেই দেখলাম,,আমার চারপাশে
কয়কেটা ছোট ছোট গাছ,,
ডুবে যাচ্ছে পিপীলিকার মাটির নিচে।
মাকড়সার জালের মত
আশপাশের বাড়ি হতে আসা লতাপাতায়
আটকে পড়েছে তাদের কচি পাতা।
শীতের প্রকোপে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাদের জীবন,,
ধুলি বালির প্রচন্ড তুফানে,,,হারিয়ে যাচ্ছে বাতাস খাদ্য
আশ পাশের নালার বিষাক্ত পলিথিন এসে
বিনষ্ট করে দিচ্ছিল সমস্ত অঙ্গন।
কেবল পাশ দিয়ে রাস্তা ধরে,,গাড়ির উপরে বসে
নানান জায়গায় নানান ভাবে যাচ্ছিল,,
নানাম নার্চারীর গাছ,,।
কত যে সুখ তাদের টবের নিচে,,
কত যে আশা তাদের পল্লবে পল্লবে।


তাই হোট করেই আমাকে বলতে হল,,
না না,,না প্রজাপতি,,আমি যাব ন্য তোমাদের সাথে,,
ওরে ও কোকিল,,পারব না রে তোর সাথে
আমার গলাটা মেলাতে,,,
দেখ দেখ,,,আমার চারপাশে মাটির নিচ হতে
বের হচ্ছে ধোয়া,,আগুনের ধোয়া,,,
আমাকে যে এ ধোয়াকে বাষ্প বানাতে হবে,,
মেঘের সন্ধান করে করে বৃষ্টি নিয়ে আসতেই হবে
আমার আশে পাশে,,,
আর কিছু পারি আর না পারি,,মাথার উপর
আকাশ দাঁড় করিয়ে,,,একটা বিশাল ছায়া যে
ছড়িয়ে দিতে হবেই ,,,চারপাশে।
দেখনা তুফান আসবে,ঝড় আসবে,আসবে অনাবৃষ্টি
সেসব থেকে আমাকেই যে বাচাতে হবে,,
ওই ছোট ছোট চারাগুলি,,।


কষ্ট পেল তারা,,কষ্ট পেল সময়
কষ্ট পেল আশ পাশের বাড়ির সানাই,,।
দূরের যে গ্রামে মধ্য রাতে এক নব বধুর ঘর হতে
চলে আসছিল মিট মিট করে জ্বলা বাতি
সেটাও হোট করে গেল নিভে।
নিভলাম না কেবল আমি,,
কষ্ট পেলাম না কেবল আমি,,,
শুরু হল আমার অন্য যুদ্ধ,,,।
আমি অস্ত্র চালাতে জানি না,,,তবু যোদ্ধা
যুদ্ধের ময়দানে রক্তাক্ত হলাম,,
অনেক পাতা হারালাম অকালে,,
অনেক বাকল হারাকাম সকালেই,,,।
পাশে দিয়ে যে নদীটি বহে গেল কোথায়
তার সাথে আমার আর দেখাই হল না,,।
বরং আমার শুকনো পাতাগুলিও নিয়ে গেল সে।
কখনো যে চোখ মেলে পুরুনো পাতাগুলি দেখব
তাও  রইল না আর কপালে।


কপাল বিসর্জন যে দেয় নিজে
তার আবার কপাল।হা হা।
কপাল যাই হোক,,
লেগে গেলাম আমার কাজে,,,
বন্ধ করলাম নিজের আখি।
দুনিয়ার যা দেখার তা দেখলাম তাদের আখি দিয়ে।
আমার মাথার উপর দিয়ে অনেক মেঘ চলে গেল
অনেক রোদ চলে গেল,,চলে গেল অনেক কিছু।
ভেঙ্গে গেল আমার অনেক শাখা,,অনেক পাতা।
তারপর একদিন,,,আশ পাশে শিশুদের
খাবারের শব্দ শুনলাম
যার পায়ে জুতা ছিল না,,তাকে সাইকেল চলাতে দেখলাম।
যার মুখে দুধের গন্ধ ছিল না,,
তার হাতে বড় বড় দুধের বোতল দেখলাম,,
দেখলাম যারা আমাদের দিকে তাকাতাই না,,অবহেলে
তারাই কি জানি কি ভেবে,,,
নানান গল্প নিয়ে আসল ,,,আমার নিচে,,
সুখের গল্প।প্রেমের গল্প।ভালোবাসার গল্প।
কত বুভুক্ষু ছিলাম তার জন্য,,,!!
আমাদের মত জীবনের আবার বুভুক্ষু ,,,তাও
এমন সামাজিক প্রেম ভালোবাসার!!
জীবনই যাদের জীবন নয়,,তাদের জন্য দুনিয়ায়
বেচে থাকাই যে ,,এক বুভুক্ষু ।
খুশি হলাম,,
চোখের পাতায় সবুজ রঙ লাগিয়ে
এবার স্বপ্ন দেখলাম,,!
দেখলাম ,,ছোট গাছগুলি,,
আমার চেয়েওঅনেক বড় হয়ে গেছে
অনেক তাদের পাতা,অনেক তাদের বল,
অনেক তাদের সবুজ রঙ।
আর তাদের মাঝে ,,
আমি ভালোবাসার এক ছোট্ট বৃদ্ধ শিশু।


না না আমাকে ছায়া দিতে তাদের হবে না,,
তবে পাশে রাখবে,,পাশে থাকবে,পাশে ডাকবে।
আমার মত তারাও ,,তাদের নিচের ছোট গাছগুলি
বাঁচিয়ে দিবে,,,।বাড়িয়ে দিবে
সবুজে সবুজে অভয়ারণ্য করে তুলবে ভিটাটি।
দূর থেকে যাকে মনে হবে সবুজের পাহাড়
আকাশের মেঘ বাধ্য হয়ে ঝরে পড়বে যেখানে বৃষ্টি হয়ে
বনফুল,,পাঠাবে সুমিষ্ট ঘ্রাণ আমাদের তরে।
আমাদের সকল গাছের পাতায় পাতায় থাকবে কোলাহল
থাকবে কোলাকুলি ,,থাকবে গলাগলি।


কিন্তু একি আমি একি দেখলাম,,,
যে গাছটি হয়ে যাচ্ছে কোনমতে একটু খানি বড়,,
ওমনি অন্য বাড়ির অন্য একটি গোলাপি গাছ
কেমন ভাবে জানি শিকড় সহ তুলে নিয়ে যাচ্ছে তাকে।
আমার এত ভালোবাসার,আদরের গাছটিও,,আমাকে
ফিরে দেখবে দূরে থাক,,বরং ভুলে যাচ্ছে ঘটা করে।
আমি পেছন পেছন ডাকছি,,এই তোরা কোথায় যাচ্ছিস
কার হাত ধরে যাচ্ছিস,,,কেন যাচ্ছিস?


না ,,না। কে শুনে কার কথা!!
কেউ কিছু বলল না আমাকে
শুধু দেখলাম যে গোলাপি গাছগুলি নিয়ে যাচ্ছে তাদের
সেই গোলাপি গাছের গায়ে বসন্তের অফুরন্ত ঘ্রাণ,,
সেই গাছের ডালে ডালে নানান ধরনের মোবাইল।
সেই মোবাইলে নানান ধরনের বসন্ত পাখির
নানান সুর,,,রেকর্ড করা,নানান স্বরে।।
মোবাইলের কল তালিকায় ঘন্টার পর ঘন্টা
সেই সুরের নানান আলাপন ।
আমার কচি গাছ গুলির ,,বৃক্ষ রূপে প্রথম বসন্তের
নানান উল্লাসী আলাপন।
ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইলি আলাপন।। গোপন আলাপন।


একে একে চলে গেল আমার সব গাছ।
রেখে গেল,,কেবল গর্ত।
আমার চারপাশে বিশাল বিশাল গর্ত
আমি সেই গর্ততে এখন
আমার ঝড়ে যাওয়া পাতা জমা করি।
না না গর্তগুলি ভরাট করার জন্য নয়,,,।
অসহায় একাকী হয়ে,,,
জীবনের ভুল গুলি কত বড় ছিল
তা মেপে দেখার তরে।


আমি কি সত্যি এই গর্ত গুলি ,,জীর্ণ শরীরে
বসন্ত হারিয়ে,আমার পাখিদের হারিয়ে,
ভরাট করতে পারব ,,ঝরা পাতা দিয়ে?
নাকি শুনেই যাব ,,ওই গোলাপি গাছদের বাড়িতে
আমার শিশু গাছগুলির বসন্ত পার্টি পার্টি উদযাপন,,
কোটি কোটি সবুজ পাতা দিয়ে?
জেনেই যাব অপবাদ,,
আমি তাদের মুখে ,,,ঠিকমত জীবন দিতে পারিনি
যা পারছে গোলাপি গাছ,,তার পিতামাতার উদ্যানে!
আমি স্বার্থপর,,আমি লোভী
তাই এখনো কাঁদি চোখের জলে,,তাদের এমন বিদায় দেখে।
আমি কেন হাসতে হাসতে মেনে নিই না
এমন বিশাল বিশাল গর্ত ,,,,আমার চারপাশে?


আমি সত্যি লোভী!!
আমি সত্যি স্বার্থপর?
তা না হলে,,বিদায় হওয়া শিশু গাছগুলির নিচে
এত বড় গর্ত কোন ভাবেই হত না,,,আজকের দিনে!
গোলাপী গাছ ,,কোনদিন আসত না ব্যানার নিয়ে
আমার সম্মুখে,,,,আমাকে চেনাতে এমন করে!
আমার ভিটা মাটির উপর,,,
আমারে ফেলে দিতে ,মরুভূমির মাঠে।


আমার সাজানো ভিটার উপর এখন
গর্তের ভিতর গর্ত জন্মে রোজ রোজ ধরে।
আমি বলত কী করি,,এমন লোভী জীবন লয়ে?
কোথায় হারালাম বসন্ত,,
কোথায় হারালাম বাসন্তী পাখি
কোথায় হারালাম ওরে?
আমার সময়ের আমার গোলাপি গাছ,,,
কেন দিলাম সরায়ে দূরে?
কেন?কেন?
বলত আমাকে দেখে,,
সত্যি কী নাম দেই,, এই আমি আমাকে?


###################
রুবেল চন্দ্র দাস
প্যারিস
১৪/১১/২৩