ভাত রাঁধছি,,,পুরুনো হাড়িতেই,,,আগুনটা নতুন হয়েছে বেশ,,।বেশ কয়েকবার উনুনের লাকড়ির বদল হয়েছে যদিও,,কিন্তু আগুন তো আগুনই,,,উনুনু টাও ভেঙে গেছে প্রায়,,কিন্তু সময় কোথায় যে চোখের জলের সাথে মাটি মিশিয়ে কাদা করে,,, মাটির এই উনুনটি কেউ ঠিক করে দেবে,,,।
দিবে না!! আলমারির ভেতরে ছবির এলবামের পাশেই চশমাটা পড়ে আছে,,কই এমন একজন পেলাম কই যে ফাটল ধরা চশমাটা শহরে নিয়ে মেরামত করিয়ে দিবে, ,,।কেউ দিবে না!!!


উঠানের কোনে তুলসী গাছের তলে জল ঢালিবার জন্যই ঈশ্বর কোন লোক এ বাড়িতে পাঠান না,,,আবার পাঠাবেন আমার চশমার জন্যে!!
সময় কোথায় গো কার হাতে? আমাদের মত এত সময় কোথায়? এখন কারো হাতে কোন সময় নেই,,! ঘড়ির হাতে কোন সময় নেই,,বিন্দু মাত্র সময় নেই,,।শুধু কাজ আর কাজ,,,!ঈশ্বরের হাতেও সময় কোথায়,,, মানুষের মনে একটু মায়া মমতা বাড়িয়ে দেবার,,,,পাষাণ না হলে শাসণ আর তোষণ নাকি হয় না!!
কিন্তু আগের ঈশ্বর খুব ইমোশনাল ছিল গো,,এখনকার ঈশ্বর জানি কেমন,,,, সারাদিন শুধু ফোনের উপর! ম্যাসেজের বাটনের উপর  ব্যস্ত নতুবা টিভিটার ভেতর সিরিয়ালে,,অফিসের কম্পিউটারে,ব্যাংকের বাক্সে,বিদেশি নানান স্বপ্নে,,এখনকার ঈশ্বর খুবই একাকী,,একাকী থাকতেই বেশ পছন্দও করেন,,,।সিরিয়ালের পর্বগুলির মত নানান স্বপ্ন ঘুড়ির পেছনে দৌড়াতেও পছন্দ করেন,,কিন্ত কেন?
এমনি যদি ঈশ্বর হবেন,,, তাহলে আমার জন্যে নয় কেন?
আমার এই হাত এখনো যে কাউকে টেনে কোলে নিতে চায়,,,নিজ হাতে বার বার রান্না করে বার বারই মুখে তুলে খাওয়াতে চায়,,,পাশে বসিয়ে কাউকে পড়াতে চায়! বাজার থেকে পছন্দের কাপড় কিনে আনতে চায়!  কানটা বার বার শুনতে চায়,,,মা, মা লাউ ফুলের বড়া করে না দিলে খাব না,মেয়েটাকে জোরে ধরে মাথার চুল বেণী করে দিয়ে তাতে একটা রক্তজবা ফুল গেথে দিতে মন চায়,,মন চায় খোকাটার ময়লা কাপড় কেউ যদি ফিরিয়ে এনে দিত,,,, আমি সারাটা দিন ওর কাপড় টা ধুয়ে দিতাম,,,,ইস বড় ছেলেটার মোজা গুলি আর এত নোংরা হয় কিনা কে জানে?কে জানে মেঝটার পিঠে সেই হাতের দাগ আছে কিনা,,আমিও কত বোকা দেখ,,সিগারেট খাওয়ার জন্যে এমন ভাবে কেউ সন্তানকে মারে? এই হাতটার বেশ অপরাধ হয়ছে মেঝ? তুই হয়ত জানিস না,,আমি প্রতি রাতে এই হাতে চোখের জল লাগিয়ে রাখি,,হাতটার ব্যথা যদি একটু কমে।বাবারে এই হাতটা দিয়ে আমি সেদিন থেকে ঠাকুরের আসনে ফুল দেই না বাবা,,ফুল দেই না,,,একটা করে ফুলের কাটা দেই,,,কেন দেই জানি না,,,,
তবে জানি ছোট টাও কভু আর দৌড়ে এসে আমার আঁচলে ওর নোংরা হাত মুখখানি মুছবে না,,ফুটবল খেলা থেকে এসেই বলবে না,, মা এক গ্লাস জল দিবে?আমি জল হাতে ঘরে বসে থাকি, আঁচল টা নিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকি,,ইস যদি একটা ধমকা বাতাসো আসত।, ঝড়ের বেগে আসত,,ছুঁয়ে যেত আমার আঁচল,,,পিপাসায় মিশিয়ে নিত আমার হাতের জল তার বুকে! তাহলে আমার তৃষ্ণা যে জল পেত মরুভুমির বুকে,,,!


কিন্তু পুড়া কপালের প্রতি এত দয়া কার?  যমরাজের দুয়ার হতেই চিঠি আসবে আসবে বলে আজও আসল না,,,আর ধমকা বাতাস আসবে?
আমার মত পাগল কেউ নয়রে কেউ নয়,,,!!
ছোট টা নাবিক হয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছে,সপ্তদ্বীপ আবিষ্কার করছে,,,আর আমি লাল বালতির জলে হলুদ রঙের হাসের ছোট ছোট বাচ্চাগুলিকে স্নান করিয়েই যাচ্ছি,,,সাতার কাটিয়েই যাচ্ছি,,


আজন্ম সাঁতার।সাঁতারে সাঁতারে ঘরের মেঝেতে যত পদচিহ্ন লেগে আছে সেথায় ধুপ আগরবাতি জ্বালিয়ে যাচ্ছি,,,চোখ বন্ধ করে দেখছি বাড়ি ভর্তি হৈ হুল্লোর।চেঁচামিচি!  ভীর,,,কত কী"!
ওই তো সেদিন খোকার বাবা বিল থেকে ধরে বড় মাছটা নিয়ে আসল,,এত করে রাঁধলাম,, শেষমেশ আমার থালাতেই জুটল না,,,মাছের লেজটার কয়েকটা কাটা আমি আর বিড়ালটায় ভাগাভাগি করে খেয়েছিলাম,,,
কিন্তু আজ,,,রুই,ইলিশ ফ্রিজের ভেতর থেকে থেকেই ডাস্টবিন এর দেখা পায়,,বিড়ালের পেটে গেলেও আমার হাতের ছুঁয়া পাওয়া যে তারসাত জনমের তপস্যা।
এই তপস্যা কবে শেষ হবে? কবে? ফ্রিজের ভেতর থেকেও বুক ফাটা কান্না সমেত এমন জিজ্ঞাসা বের হয়ে আসে,,,কিন্তু আমি কি জবাব দেই,,,জবাব দেবার কি আছে আমার কাছে,,,
যেদিন খোকার বাবা দেয়ালে ছবি হয়েই চলে গিয়েছিল ঠিক এমনি জিজ্ঞাসা আমার ছিল,,,,ঈশ্বর আজও দেননি,,।আজও নয়,,,


যেমনি বলেন না,,এই ফাকা বাড়িটাকে ব্যস্ত করতে আবার কবে ফিরবে পাখি গুলি,,। কবে আসবে কবতুর ঘরটায় কোনে কোনে বসত করতে,,কবে কবতুরের ছানার শব্দে জেগে উঠবে এই মৃত আঙিনা।কবে এই বাড়িটি আবার হবে বাড়ি,,?


কবে আবার এই রসুই ঘরে রান্না হবে,ফ্রিজের বন্ধ দরজাটা খোলবে,শুধু সিংহাসনে বসে অপেক্ষায় থাকবে দেবতা খাবারের জন্যে, পূজার জন্যে?
কবে নাতিটা এসে বলবে,, দিদিমা চল তোমার চশমাটা ঠিক করে দেই,,,আবার কেউ বলবে ঠাকুরমা চল চল তোমার তুলসী তলায় একটু জল ঢেলে দেই,,,।কার হবে এমন দয়া! এত সময় কোথায়,, কার হাতে! ঘরের দেয়ালগুলির ধসে পড়ার সময় থাকলেও, পথ হবার সময় কোথায়?গাছ ভেঙ্গে পড়ার সময় থাকলেও পুরুনো বাড়িতে গজে উঠার সময় কোথায়? কোথায় আমার পুরুনো উঠান,,যে উঠানে বৃষ্টির মাঝেও খেলে যাবে একদল নব্য বাছুড়,,কোথায় আমার পুরুনো হাত,,,যে হাতের মাখা ভাত খেতে উঠানে ভীড় করবে কাক,কাকের কাক!! মাটির তল থেকে উঠে আসবে পোকা,,দেবতারা ভীর করবে দরজায়,,জন্ম নিবে আবার আমার ঘরে,, আমার স্তন পান করতে।আমি কবে আবার মা হব,, এই ভবে।আবার কেমনে মা হব এই ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,নাবিক সন্তানদের কাছে,,,কেমনে হব কোন এক মানুষ অসহায় বয়স্কা নামটার আড়ালে?কেমন হব ওদের কেউ ওদের সাথে?  কেমনে?