ঠাকুর,,তুমি ত সব জানো,,
তাহলে তোমাকেও কি আমার মনের কথা
বলতে হবে ঠাকুর,,?
আমি এখনো স্কুলে যাই নি ঠাকুর,,
আমার সাথে জন্ম নেওয়া বাছুড়টার
এখনো দুধের নেশা যায় নি!
বাড়িতে গজানো একটি গাছের পাশে যে
লাঠি গেথে দিয়েছিল ঠাকুরমা
সেই লাঠিটা এখনো সরানোই হয় নি,,
আমাকে গতবার জন্মদিন জন্মদিন বলে
বাবা যে একটা মোম নিভাতে বলেছিল
আমিত তা তোমার সামনেই জ্বালিয়ে দিয়েছি,,
ঠাকুর বাবা বলেছেন এটাতে নাকি দুই লিখা ছিল?
আমিত দুই চিনি না ঠাকুর
তুমি ত চেন,,?তাহলে বলত আমি কি ভুল করেছি.


আমি কি ভুল করে ফেলেছি ঠাকুর ,,
দুই লিখা মোম জ্বালিয়ে আমি কি ভুল করেছি?
তাহলে আমার আর মায়ের আত্মা দুই বানালে কেন?
দেখ ঠাকুর ,,দেখ,,
এখনো আমার মুখে মায়ের স্তনের গন্ধ লেগে আছে
এখনো আমার দাঁত সব গুলু উঠেই নি
এখনো আমি রাতের বেলায় বিছানা ভিজিয়ে ফেলি,,
তাহলে আমাকে কীভাবে তুমি একা ঘুমানোর
সমস্ত আয়োজন করে ফেললে?
কীভাবে আমার সাথে খেলা করা ঘাসফড়িংটার
পাখাটা হুট করে ভেঙ্গে দিলে?
হোট করে একটা ঝড় দিয়ে,,
বাবার লাগানো লাউয়ের ঝাড় টা ফেলে দিলে?
তুমি কি ভাঙ্গতে খুব ভালোবাস ঠাকুর?
তুমি কি অন্যের চোখের জল দেখতে
খুব ভালোবাসো,,?
আমার মত করে কাঁদলে তুমি খুশি হও?
কান্নায় কী তোমার আত্মতৃপ্তি মিলে?


তাহলে শুনো ঠাকুর,,
তোমার তৃপ্ত হওয়ার সুখ কথা শোন,,
কাল রাতে ব্যাঙ ডাকছিল,,তাও ঘরের সামন
অন্ধকার রাত,,পাতাও নড়ছিল বেশ,,
কোথায় কার ঘরে জানি একটি শিশু কাঁদছিল
আমি ভেবেছি বাঘ এসেছে বুঝি,,
কান্নায় বুক ফেটে যাচ্ছিলো,,
মনে হচ্ছিল কাউকে জড়িয়ে ধরি
ভয়ে ভয়ে যখন জড়িয়ে ধরতে গেলাম কাউকে,,
তখন দেখি পাশে মায়ের শাড়ি দিয়ে বানানো
বালিশটাও,,,,,অনেক দূরে,,,
বাতাসে কাঁপতে থাকা বাতিটার চেয়েও দূরে,,
আমি যে আমার বিছানায় একা,,খুবই একা।


তবে মনে হচ্ছিল,,কেউ হাটছে,,
ঠিক পাশেই আমার হাটছে,,
ঠিক আমার মায়ের হাটার মত,,কেউ হাটছে।
মনে হচ্ছিল টিউবওয়েল হতে কেউ জল তুলছে
পাতাল হতে,,,তাও আমার জন্য কেবল আমার জন্য।
কিন্তু যখন চোখ মেললাম,,দেখলাম,,বিড়ালটা
একটা মাছ নিয়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছে অন্যের ঘরে,,
দেখলাম আলমারীর দরজা টা খোলে গিয়ে
কি জানি পড়ে গেছে নিচে,,,একেবারে মাটিতে,,।
বাতাসের ধাক্কায় আমার শখের পুতুলটা
উড়ে চলে যাচ্ছে বাইরে,,
আমিও যাচ্ছি পেছন পেছন,,
এ যে আমার মায়ের হাতে বানানো পুতুল,,
এ পুতুলেরও যে একটা বাচ্চা আছে,,
এ পুতুলও যে দুধ খাওয়াতে জানে।
চিৎকার করে বললাম,,
পুতুল ,,ও মা পুতুল যেও না যেও না
দাড়াও দাড়াও,,
তোমার দুধের বাচ্চাটাকে নিয়ে যাও,,নিয়ে যাও।


ওমনি কে যেন আমাকে  পেছন হতে
জড়িয়ে ধরল,,বলল
মা মা,,ও মা,,কোথায় যাচ্ছ তুমি?
বাইরে যে তুফান হচ্ছে,,ভীষণ তুফান।
বাবাকে ছেড়ে,,তুফানে যাচ্ছ কেন মা?


ঠাকুর আমি ত কথা বল্লতে পারি না
জিহবাটা এখনো মা বাবার মত হয় নি,,।
এখনো আমার জিহবাটা
মুখের ভিতর তালুর সাথে ঘষাঘষি করে
কোন ভাষা তৈরি করতে পারে না।
তুমি ত বলতে পারো,,,
তাহলে বাবাকে বলে দাও না,,
আমারও একটা তুফান হচ্ছে ,,ভয়ংকর তুফান,,
যে তুফানে দূরে যাকে দেখি তাকেই মনে হয়,,মা।
মনে হয় দরজাটাও কে ছেড়ে চলে গেছে  তার মা
ওই দূরের অন্যের ঘরে দরজা হতে।
মনে হয় মাটিতে আঁকা আল্পনা গুলিরও
মা চলে গেছে ,অন্যের দুয়ারে,,
অন্যের শখের আল্পনা হতে
নিজের আল্পনা ছেড়ে।


আমার এমন ভয়ংকর তুফানটা হতে
কে বাঁচাবে ঠাকুর?
কে বাঁচাবে আমাকে?
বাবা নাকি তুমি?


###############
রুবেল চন্দ্র দাস
প্যারিস


( পশ্চিমবাংলায় দুই বছরের এক শিশুর কান্না দেখে এ আমার আবেগ মাত্র। যে শিশুটিকে ছেড়ে চলে গেছে মা ,,,)