শাখের ধ্বনিতে চারদিকে বেজে উঠেছে ঢোল
সাদা শাড়ির আঁচলে ছেয়ে গেল লাল রঙ,,,
ধুপ, আগরের গন্ধে মাতোয়ারা চারদিক,,,
প্রদীপ বাতির মত বিজলি বাতি গুলো
জোনাকির অভিনয়ে রকমারি ব্যস্ত।
আর ব্যস্ত আমি,,,
বাড়িতে এত বড় আয়োজন,অন্নদার আগমন
অন্ন রন্ধনে মগ্ন আমার দুই হাত।
সারাদিন পূজো,সারা রাত পূজো, পূজো প্রহরে প্রহরে,,,
মাগো কত্ত কী আয়োজন তোমার তরে।


আচ্ছা মা একবার এসো এই রন্ধন ঘরে,,,
পঞ্চ ব্যঞ্জনের সবজি গুলো কাটতে কাটতে হাঁপিয়ে উঠছি
ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় চোখ হচ্ছে সিঁদুরের মত লাল
ঈস আমার যদি আরেকটা হাত থাকত মা!
এই দেখ এই দিকে মিষ্টিকুমড়ো ভাজছি
অন্যদিকে ডালটা পুড়েই গেল,,,,,।
এই দু চোখে মা বল আর কত!!আর কত্ত কী দেখব,,,


" বড় মা, জ্যেঠুকে বলেন উনার চা নিয়ে আসছি,,,
ছোটদিকে বলেন জামাইবাবুর পছন্দের পায়েসটুকু
প্রায় হয়ে গেল? বড়দা খাবেন না গো? সেই কবে অঞ্জলি দিয়েছেন,,,!"


দেখেছ কত্ত ব্যস্ততা আমার,,,
গা দিয়ে গঙ্গার মত জল বের হচ্ছে
রাতে স্নান করে পঞ্চ বারের স্নানটুকু পূরণ করব!
তবু মা বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়লে
তুমি আমার কাছে একটু এসো।
মন্দিরের সামনে এত সব চাকচিক্যের ভীরে
তুমি বোধ হয় ঠিকমত দেখতেই পারো নি,,,,
আমার হাতের মাঝে একটা নাড়ু ছিলো,ভাতের নাড়ু।
তোমাকে খাওয়াব মা,,,।
খুব শখ তোমাকে খাওয়াব,,,,,।
বড় দা,বড় দি,মেঝ দা মেঝদি,বড় মা ছোট মা
বড় মামা,বড় মামি, ছোট কাকা ছোট কাকী
এমনকি বাড়ির পিচ্ছি পিকলো টাকেও খাওয়াচ্ছি,,
কিন্তু তোমাকে পারছি না।


তুমি কী সত্যিই ঠাকুরকর্তার হাত ছাড়া খাও না মা?
আমার মত কাজের মেয়ের হাতের রান্না খাও না?
মাগো এইতো আমি গত মাসে ভুনাখিচুড়ি রান্না শিখিয়েছি
ঠাকুরকর্তীকে,,,,,,
এমনকি তোমার সামনে যে সন্দেশগুলো পড়ে আছে
সে গুলো আমার হাতেই পেস্ট করে দেওয়া।
আমি খুব ভালো রান্না করি মা,খুব ভালো,,,
এর জন্যেই তো বড় মা আমাকে ছুটিই দেননি,,,
বলেছেন এবার বাপের বাড়িতে যেও না কালি
পূজোতে সাতদিন এ বাড়িতেই থাকবে।


থাকলাম,কাজের মেয়ের কালির আবার বাপের বাড়ি,,,
থাকলেই কী আর না থাকলেই কী!!
আমার পুরুষটাও খুব ভাং খায় মা,,,,একেবারে শিবের মত।
কিন্তু কই মা,,,আমিতো বলতে পারছি না
" আমার স্বামী বৃদ্ধ অতি সিদ্ধিতে নিপুণ
কোন গূন নাই তার,কপালে আগুন"
বলব কী আর করে?
আচ্ছা মা ষষ্ঠী পুজার এই রাতেই তুমি এসো
তোমাকে মুখে তুলে খাওয়াব,,,,।
আর মা গণেশটাকে সঙ্গে করে আনিও
পুতলাটার জন্যে শাড়ির আঁচলে নাড়ু বেঁধে রেখেছি,,,,
আমার রোগা পাতলা গনশাটা খেয়ে ফেলতে চেয়েছিল
দেই নি মা,,বরং এক ত্থাপ্পড় দিয়েছি,,,,
মুখটাকে লাল করে দিয়েছি,,,,।
দেখ মা, কত শখ তার! গনেশকে খাওয়াব
অথচ সে চায় খেয়ে নিতে!


তাই থাপ্পর দিয়ে দিয়ে বলে দিয়েছি,,,,
কালির ছেলে তুই
দুর্গার ছেলে নাকি!!!


আচ্ছা মা আজ আসি,,,,
বাড়ি ভর্তি অতিথি
পরে কথা বলব,,,
#################################


রুবেল চন্দ্র দাস
প্যারিস
২৬/০৯/১৭