বাইরে দূরের মেঘমালা দেখছি,,,
আর চেষ্টা করছি,,এর পরের মেঘগুলোকে
দেখা যায় কিনা?
না আশি বছরের এ চোখকে চোখ বলা যায় না!
কাছের ফুলদানিটার উপর,,,
কয়েকটা ঝরা পাতা পড়ে আছে
তাই দেখতে পাচ্ছি না,,,আবার মেঘের পর মেঘ!!!


কেউ আছিস? আওয়াজটা একটু বাড়িয়ে দিবি?
আজকাল নচিকেতা বৃদ্ধাশ্রম গানটা
এত কম আওয়াজে গায়,,,?
পাশে পেলে পুত্র স্নেহে ওকে একটু
আদা- লেবুর চা বানিয়ে খাওয়াতাম,,,,।
বলছি কেউ আছিস,,,
আওয়াজ টা একটু বাড়িয়ে দিবি,,,,?
পড়ন্ত বিকাল বেলার একাকী এই রাস্তার পাশে
একাকী দাড়িয়ে থাকা দালানের,
একাকী এই ছোট্ট বারান্দায়,,
এটুকু আবদার কী খুব বেশি?


হয়তো একটু বেশিই,,,
শহরের অলিগলি ধরে আমাকে
সকাল সকাল কেউ স্কুলে নিয়ে যেতে হয় না,,,।
ব্যাগের মাঝে দিতে হয় না টিফিনের বক্স গুজে।
নিজের মাথাব্যথা টাকে আড়াল করে
পাশে বসে থেকে থেকে
হোম ওয়ার্ক গুলো প্রস্তুত  করাতে হয় না।
সারা রাত বুকের দুধ খাওয়ায়ে
আমার কান্না থামাতে হয় না,,,,,,
সামান্য অসুখ বিসুখে থাকতে হয় না জেগে।
এমনকি আমার মঙ্গল কামনা করে
ঠাকুরের কাছে উপবাসও থাকতে হয় না,,,।
সেখানে আমার এই পুত্র গৃহে বৃদ্ধাশ্রম গানের
আওয়াজ বাড়ানুর দাবীটা একটু বেশিই!
সারাদিন কর্ম শেষে,
মায়ের কাছে কিছুক্ষণ বসার সময়ই যাদের হাতে নেই,,,
যাদের কাছে মা শব্দটা মাসে দু একবার
ভোলে উচচ্চারণ,,
তাদের ঘরে এমন দাবী সত্যি আমার অন্যায়।


আমি না অন্যায়ের প্রতি খুব দূর্বল,,,
ওই যে পুরুনো অভ্যাস!
ছেলেটার জামার কী রঙ হবে?
প্যান্টের সাইজ কত হবে?
জুতার ফিতা কীভাবে বাধবে? কী খাবে?
কখন খাবে? কীভাবে চলবে?
এই অন্যায় গুলো ছিলো আমার কর্তব্য!
তাই মাঝে মাঝে অভ্যাসের রোগে
আবার তা করে ফেলি।
ধমক গালিগালাজ, অবহেলা পেয়েও করে ফেলি।
কেন করি?
কেন?
কেন?
স্বামীর উত্তরাধিকারী সন্তানের গৃহে আশ্রিত বলে?
নাকি এ আমার রোগ?  অভ্যাসের মাতৃত্ব রোগ?


রোগের উপসর্গটা বেশ ভালো ভাবেই ঠের পাচ্ছি?
নতুবা যার দুপুর কিবা রাতের খাবার,
পুত্রবধুদ্বয়ের ভাগ বাটোয়ারা সংসারে
ক্রিকেটিয় টসের উপর নির্ভরশীল,,,!
যার থালার গরম ভাতে
দয়া,করুণার হাওয়ার উড়াউড়ি,,,
কারো রক্তচোক্ষু, কারো বাড়তি পরিশ্রম,
বাড়তি ঝামেলার ছড়াছড়ি
তারতো বৃদ্ধাশ্রম গানটা শুনা নয়,,,
নচিকেতাকে ডেকে আবার গাওয়ানো উচিত।
হ্যা হ্যা সত্যি গাওয়ানো উচিত।
আর গানটার নাম দেওয়া উচিত
পুত্রগৃহে বৃদ্ধাশ্রম।
-------------------------------------------------


রুবেল চন্দ্র দাস
প্যারিস
২২/০৮/১৭


### এক মা তার পৃথক দু সন্তানের ভাগবাটোয়ারার সম্পত্তির মধ্যে স্থান পাননি,,,।পেয়েছেন যৌথ কিছু একটার মর্যাদা,।তাই প্রতিদিন ওই মাকে ভাবতে হয় এই কবিতাটি।)